জন্মভূমি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য বিশ্ব গড়ে তেলার প্রত্যাশায় যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে শান্তির আহŸান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী চাই। আমরা যুদ্ধ চাই না, ধ্বংসযজ্ঞ, অস্ত্র ব্যবসা, কোনো শিশুকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করা এবং কাউকে গুলি করে হত্যা করা হোক, আমরা তা চাই না। ’
মঙ্গলবার শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত ‘শেখ রাসেল দিবস-২০০২’-এর উদ্বোধনী এবং ‘শেখ রাসেল পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আহŸান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ (রাশিয়া-ইউক্রেন)। কত শিশু আজকে এতিম হয়ে যাচ্ছে, কত শিশু কষ্ট পাচ্ছে। আমরা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি, সেখানেও তো শিশুরা পরভ‚মে রিফিউজি হিসেবে মানুষ হচ্ছে। ’
শেখ হাসিনা নিজেরও রিফিউজি থাকার এবং বন্দি অবস্থায় নিদারুণ কষ্টে দিন কাটানোর অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, কোনো সংঘাত চাই না। রাসেলের মতো আর কোনো শিশুকে যেন জীবন দিতে না হয়। আমরা চাই, প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক, উন্নত হোক। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫-এর পর দেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে, আমাদের ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে হাজারো অফিসার-সৈনিককে হত্যা করা হয়েছে। স্বজনরা তাদের লাশও পায়নি, গুম করে ফেলা হয়েছে। আমাদের আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী এদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে, কারাভোগ করেছে, মৃত্যুবরণ করেছে। কাজেই আর আমরা এই স্বজন হারানোর বেদনা, কান্না শুনতে চাই না। আমরা পাঁচ হাজার কম্পিউটার ল্যাব এবং ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার উদ্বোধন করলাম। এর আগে আরো আট হাজারটি উদ্বোধন করেছিলাম। এতে প্রায় ১৩ হাজারটি ডিজিটাল ল্যাব করা হয়েছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে আমাদের ছেলে-মেয়েদের আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা―এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। শিশুদের যে মেধা তা বিকাশের যেন সুযোগ হয়, শিক্ষা-দীক্ষায় তারা উন্নত হবে, প্রগতির সাথে এগিয়ে যাবে, প্রযুক্তি শিক্ষা নেবে, বিজ্ঞান শিক্ষা নেবে এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ’
আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের কর্ণধার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকের শিশুরাই এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। কোনো মানবাধিকার যেন লঙ্ঘন না হয়, কোনো শিশু যেন নির্যাতিত না হয়। প্রত্যেকেই যেন সুন্দর জীবন পায় সেটাই আমরা চাই। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ আমরা করে যাচ্ছি। ’
তিনি বলেন, খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চা, লেখাপড়া, আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষা এবং বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা, প্রতিনিয়ত যেসব প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে সেসব পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা―সেভাবেই বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। বাংলাদেশের সকল শিশুর মেধা বিকাশের সুযোগ হোক।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্পাদিত ‘দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের ট্রেলারও প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিজয়ীদের মধ্যে ‘শেখ রাসেল পদক-২০২২’ বিতরণ করেন। শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী কুইজ, ক্রীড়া, শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝেও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি এবং আইসিটি বিভাগ কর্তৃক নির্মিত শেখ রাসেল দিবস-২০২২ উপলক্ষে একটি থিম সং পরিবেশিত হয়। পরে শিশুদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।