
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : সিরাজুল ইসলাম সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী টালি শিল্প। একসময় গ্রামীণ বাংলার ঘরবাড়িতে টালির ছাউনি ছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি জটিলতা, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, অর্থাভাব এবং আধুনিক বিকল্প সামগ্রীর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে এই শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।
কলারোয়া পৌর এলাকার মুরারীকাটি ও শ্রীপতিপুর গ্রামে একসময় ৪১টি টালি কারখানা সচল ছিল। প্রতিটি কারখানায় কর্মচাঞ্চল্যে মুখর থাকত শত শত শ্রমিক। স্থানীয় ও আশপাশের এলাকার হাজারো পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত এ শিল্পের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে টিকে আছে মাত্র সাতটি কারখানা। ফলে প্রায় চার হাজার শ্রমিক জীবিকা হারিয়ে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন।
কারখানা মালিকদের অভিযোগ, একদিকে জ্বালানির দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, অন্যদিকে টালির বাজারদর অপরিবর্তিত। ফলে লোকসান গুনতে গুনতে অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারি সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প টিকে থাকার সংগ্রামে হিমশিম খাচ্ছে।
টালি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোষ্ট চন্দ্র পাল বলেন, “আগে প্রতি মৌসুমে কয়েক লাখ টালি বিক্রি করতাম, এখন বিক্রি হয় সামান্য কিছু। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়াতে হচ্ছে, কিন্তু বাজারে ক্রেতা নেই। সরকার যদি সহজ শর্তে ঋণ ও বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ নিত, আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।”
শ্রমিকদের অবস্থাও নাজুক। একসময় যাদের নিয়মিত আয় ছিল, এখন তাদের অনেকেই কর্মহীন। শ্রীপতিপুর গ্রামের এক শ্রমিক বলেন, “দিনে দিনে টালির চাহিদা কমছে। কাজ না থাকলে খাওয়া দাওয়া কেমন করে হবে? তাই অনেকে ইটভাটায় কাজ করছে, কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।”
এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, “ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। টালি শিল্পকে জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কারিগর ও উদ্যোক্তাদের ঋণসহায়তাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয়দের মতে, সময়োপযোগী সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও নীতিগত সহায়তা পেলে কলারোয়ার টালি শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এটি কেবল কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নয়, দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেও টিকে থাকবে।

