পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা : মাত্র ২ শত ৬০ থেকে ৮০ মিটারের দু’টি সংযোগ সড়ক সংস্কারের অভাবে থমকে গেছে তিনটি ইউনিয়নের জনজীবন। অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই অঞ্চলের অর্থসামাজিক, অর্থনৈতিক, উন্নয়ন সহ যোগাযোগ ব্যবস্থা। জনদুর্ভোগ এড়াতে স্থানীয় এলাকাবাসী একাধিকবার স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতি জোয়ারে পানি বৃদ্ধিতে রাস্তা তলায়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিকারে স্থানীয় এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে ধরণা দিলেও প্রতিকার মেলেনি। জনদুর্ভোগ চরমে। এটি পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের মধুখালী এবং ডুমুরিয়ার মাগুরখালী ইউনিয়নের কাঞ্চননগর এর মধ্যে অবস্থিত কাঞ্চনগর ত্রাণের ব্রীজের সংযোগ সড়ক। পাইকগাছার অংশে ১২০ মিটার আর মাগুরখালির কাঞ্চননগর অংশে ১৪০ মিটার রাস্তা। সড়কটি দু’টি উপজেলার মেলবন্ধন। জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এ অঞ্চলে সরকার একটি ব্রীজ নির্মাণ করলেও দু’পাশে সংযোগ রাস্তার ব্যাপারে স্থানীয় দপ্তর উদাসীন। অবহেলায় করুণ পরিণতির শিকার। প্রতিকারে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। সংযোগ সড়কটি দেলুটি ও লতা ইউনিয়নবাসীর খুলনা, রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়তের একমাত্র ভরসা। পাইকগাছার অংশে কিছুটা চলাচলের উপযোগী হলে ব্রীজের অপরপ্রান্তে মাগুরখালীর কাঞ্চনগর বাজার অভিমুখে রাস্তার অংশ অতিজোয়ারে পানিতে ডুবে এবং ধ্বসে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আটকে থাকে শত শত যান। একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়।রাস্তাটির দৈন্যদশা এমন পর্যায়ে গাড়ি তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচলই করা মুশকিল। তারপরও প্রয়োজনের তাগিদে ওই রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে সীমান্তবর্তী দুই উপজেলার তিন ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষকে। এই অঞ্চলটির মানুষ মৎস্য লীজ ঘরের উপর নির্ভরশীল। বলতে গেলে মৎস্য জোন হিসেবে সমৃদ্ধ। সরকারের রাজস্ব ও বৈদেশিক আয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ঘেরের মাছ কপিলমুনির কাশিমনগর মাছকাটা, আঠারো মাইল, ডুমুরিয়া ও জেলা শহর খুলনায় যে রুটে পরিবহন করে না কেন এই সংযোগ সড়কটির উপর নির্ভরশীল। আমন ধানের মৌসুমেও পরিবহনের ক্ষেত্রে একই অবস্থা। তাদের শঙ্কার শেষ নেই। সামনে বর্ষা মৌসুম। গা শিউরে ওঠে। জনজীবন একেবারেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বন্দিদশা। নদী ভরাট হওয়ায় চলাচলে নির্ভর করতে হয় জোয়ারে পানির উপর। সময় সাপেক্ষ। দিন যতই যায় ততই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের। বছরের পর বছর এতে চলাচলে দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথাগুলো সরজমিনে পরিদর্শন কালে দৈনিক জন্মভূমি এ প্রতিনিধির কাছে বলছিলেন দেলুটি আলোকদ্বীপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকৃতি মোহন সরকার। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে যাওয়ার অভিযোগও করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। সামনে বর্ষা মৌসুমের আগে সংযোগ সড়কটি পাকা করা না হলে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। স্থানীয়রা, জানান প্রতিবছর বর্ষায় এ রাস্তায় যেন অভিশাপ নেমে আসে। রাস্তার পুরোটাই পানি আর কাদামাটিতে আবৃত থাকে। যার কারণে যাতায়াতে জুতা হাতে নিয়ে কাপড় হাঁটু পর্যন্ত তুলে কোনো রকমে পা টিপে টিপে পার হতে বাসিন্দাদের। শুধু তাই নয় গুরুতর অসুস্থ কিংবা প্রসূতি মায়েদেরকে হাসপাতালে নিতে হলে কোলে তোলে নিতে হয়। দুর্ভোগের রাস্তাগুলো সংস্করণ বা মেরামতের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে। পাইকগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব বলেন, সংযোগ সড়কটি পাইকগাছার অংশ সংস্কারের জন্য এডিবির বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, রাস্তাটি ধ্বসে গিয়েছিল। মাটি দিয়ে উঁচু করতে হবে। এটি এলজিইডির কাজের মধ্যে পড়ে না। রাস্তাটি মাটি ভরাট করে উঁচু করে দিলে পিচ করা সম্ভব হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, সংযোগ সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ। পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে। প্রতিকারে জন্য ডুমুরিয়ার ইউএনও কে অবহিত করেছি। ডুমুরিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুর রহমান বলেন, স্যার ট্রেনিংয়ে। বিষয়টি আমি অবহিত নই। খোঁজখবর নিয়ে প্রতিকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, অবহেলিত তিন ইউনিয়নের বাসিন্দাদের র্দীঘ দিনের দাবি রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারে উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।