করোনাকে সামনে রেখে হাসপাতালসহ খুচরা বাজারে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এর মধ্যে ভারতে অক্সিজেন সংকটকে ইস্যু করে অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে দিয়েছে একটি মুনাফালোভী অসাধু চক্র। ১০ হাজার টাকার সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ হাজার টাকায়। এই সুযোগে বাজার ছেয়ে গেছে নকল, ভেজাল ও নি¤œমানের সিলিন্ডারে। দেশের এমন সংকটে এ ধরনের ঘটনা খুবই উদ্বেগের। জানা গেছে, দেশে মাত্র তিনটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের দৈনিক মোট উৎপাদন সাড়ে ৩ লাখ লিটার। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন উৎপাদন ২ লাখ লিটার, একটির ৯০ হাজার লিটার এবং অন্যটির ৬০ হাজার লিটার। উৎপাদিত এসব লিকুইড অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু না বুঝেই অনেকে বাড়িতে অক্সিজেন মজুত করায় সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ভেজাল অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছে। উৎপাদন বা বাজারজাতকারী কিছু প্রতিষ্ঠান ভেজাল অক্সিজেন বিক্রি শুরু করেছে। সেগুলো মূলত গ্যাসীয় অক্সিজেন। ভেজাল মেশানো অক্সিজেনে রোগীর শ্বাসকষ্ট দূর হওয়ার চেয়ে মারাত্মক ক্ষতিসহ মৃত্যুও হতে পারে। এমনকি এসব সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ার শঙ্কা অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়তি চাহিদায় সরবরাহকৃত সিলিন্ডারের সঙ্গে থাকা মাস্ক এবং পাইপের মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। করোনা রোগীদের জন্য প্রয়োজন উচ্চ চাপসমৃদ্ধ অক্সিজেন। কিন্তু এখন শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা রোগীদের জন্য। এই সিলিন্ডারে অক্সিজেনের পরিমাণ কত আছে, তা জানার সুযোগ নেই। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীর জন্য অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল উপাদান। এটি পরিচালনা করতে হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে। এর জন্য এমন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়, যেটিতে অক্সিজেনের গুণগতমানও অক্ষুন্ন থাকে। করোনা মহামারি রোধে সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টা সত্তে¡ও এক শ্রেণির মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী দুর্যোগকালে বাজারে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি অক্সিজেন প্রস্তুতির বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ রয়েছে। এটি বিবেচনায় নিয়ে অন্যান্য দেশের উৎস থেকে অক্সিজেন আমদানির কথা ভাবতে হবে। আমাদের দেশে অক্সিজেনের চাহিদা ও সরবরাহ সংকট এখন তীব্র না হলেও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়ার আগেই পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ করা দরকার। যাতে করে আমাদের দেশে সংকটাপন্ন রোগীরা চিকিৎসার নিশ্চয়তা পায়।