
যশোর অফিস : অগ্নিঝুঁকিতে আছে যশোর পৌরশহরের মার্কেটগুলো। শহরের বড়বাজার, কালেক্টরেট মার্কেটসহ বিপণী বিতানগুলোতে নেই অগ্নি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। সিংহভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। এমনকি কোনো কোনো মার্কেটে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশেরও পথ নেই। একইসঙ্গে শহরে কমছে জলাধার। তাই অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতির জন্য ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠে নেমেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনার পর যশোরের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব সেক্টরই নড়েচড়ে বসে। বিশেষ করে যশোরের বড় বাজার, কালেক্টরেট মার্কেট, চুড়িপট্টি, ফেন্সি মার্কেট, রেলবাজারসহ বিপণী বিতানগুলোর অগ্নি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। আগে ঘটে যাওয়া এসব মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডও আলোচনায় আসে। বিশেষ করে ২০১৫ সালের ৬ মার্চ মধ্যরাতে কালেক্টরেট মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৯টি দোকান পুড়ে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এর আগে ২০১২ সালের ৬ মে একই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ১০ দোকান পুড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর তিনদিন পর বড় বাজারের কাঠেরপুল মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এসব ঘটনার পাশাপাশি শহরের বড় বাজারের চুড়িপট্টি, ফেন্সি মার্কেটসহ অনেক স্থানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানোর ব্যবস্থা না থাকায় চিন্তিত ব্যবসায়ীরা।
সবকিছু মিলিয়ে অগ্নিঝুঁকি কমিয়ে আনতে প্রশাসনও তৎপরতা বাড়িয়েছে। ঈদের আগে শহরের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে গঠিত টিম নিয়মিত সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করেছে। বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলোতে গিয়ে এ টিম আগুন নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছে। বাজার ও মার্কেটগুলোতে নিজস্বভাবে অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোর বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মীর মোশাররফ হোসেন বাবু বলেন, যশোরের জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহায়তায় ব্যবসায়ীদের অগ্নি প্রতিরোধের নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও গুরুত্ব অনুধাবন করছেন। বাজারে অনেক সরু গলি আছে। শহরের বেশিরভাগ পানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রতিটি দোকানে ও বাণিজ্যিক ভবনে পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখার বিষয়ে দোকান ও ভবন মালিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৫০টি পানির ড্রাম রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সে ড্রামে লেখা থাকবে অগ্নি নির্বাপণে ব্যবহারযোগ্য পানি। যাতে সবাই প্রয়োজনে সেখান থেকে পানি নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ করতে পারেন। পর্যায়ক্রমে নিজস্ব ব্যবস্থায় সক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে।
যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, বাজারে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যেকোনো কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে প্রথমেই পানির দরকার হয়। বড় বাজার ও পাশের মার্কেটগুলোর জন্য লালদীঘি ও ভৈরব নদের পানি ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এরই মধ্যে প্রশাসনের সহযোগিতায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি ও মার্কেটে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আপাতত সবাইকে নিজস্ব ব্যবস্থায় আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি বড় বড় মার্কেট ও বাজারের পাশে গভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হবে। যেন প্রয়োজনের সময় পানি পাওয়া যায়। এছাড়া কালেক্টরেট মার্কেটের সব বৈদ্যুতিক সুইচকে একটি নিয়ন্ত্রণ সুইচের আওতায় আনা হয়েছে। যেন সেটি ব্যবহার করে একই সঙ্গে সব দোকানের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ করা যায়। এতে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যেতে পারে। আগামীতে এ ব্যাপারে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ থাকবে।