
যশোর অফিস ও মনিরামপুর প্রতিনিধি
সীতাকুÐে অগ্নিদগ্ধ ফায়ারম্যান গাওসুল আজমের (২৩) মৃত্যুর সংবাদে গোটা পরিবারসহ স্বজনদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। যশোরের মডুরামপুর উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে একদম নির্বাক হয়ে গেছেন স্ত্রী কাকলী। বিলাপ করতে করতে মা আছিয়া বেগম অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। আর বাবার কান্নায় ভারী হয়ে গেছে গোটা পরিবেশ।
গাওসুল আজমের ৫ মাস ১০ দিন বয়সী ছেলে সিয়াম তার চাচার কোলে, অবুঝ শিশুটি জানে না এই বয়সেই সে পিতৃহারা হয়ে গেছে।
গাওসুলের মামাতভাই রমজান আলী জানান, ভোর চারটার দিকে তারা জানতে পারেন ভাই মারা গেছেন। এরপর থেকে ফুফু, জামাই, বোনসহ স্বজনরা কাঁদতে কাঁদতে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। দুর্ঘটনার পর থেকেই ভাবি কাকলী খাবার খান না নিয়মিত। গত দুদিন তিনি মুখে পানিও তুলছেন না। তিনি একদম নির্বাক হয়ে গেছেন।
রমজান বলেন, এই পরিবারে গাওসুল ভাই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম। মামার চাষের জমিও তেমন নেই। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে সংসার চলবে সেটাও চিন্তার বিষয়।
খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের আজগর আলী দম্পতির দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে গাওসুল ছোট। তার বোন বড়। তিনি ২০১৬ সালে খাটুয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ২০১৮ সালে তিনি ফায়ার ম্যান হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগ দেন। এরপর একই ইউনিয়নে (দুর্বাডাঙ্গা) ইউনিয়নের কাজীয়াডা গ্রামের কাকলীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
নিহতের ফুফাতভাই আরও জানান, নিহতের ভগ্নিপতি ও এক ফুফাতভাই ঢাকায় মরদেহ আনার জন্যে গেছেন।
তিনি জানান, মাস দুয়েক হলো তিনি সীতাকুÐে ডিউটিতে ন্যস্ত হন। এর আগে বাগেরহাটে কর্মরত থাকাকালে তিনি প্রায়ই বাড়িতে আসতেন। চট্টগ্রামে ৬ মাসের জন্যে তাকে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, ভাইয়ের অকাল মৃত্যুতে এই সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র অবলম্বন শেষ হয়ে গেল। বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহৃদয় সহায়তা চান।
খাটুয়াডাঙ্গা সাকুলের প্রধানশিক্ষক হজরত আলী ও ইংরেজির শিক্ষক আনসার আলী বলেন, ছাত্র হিসেবে গাওসুল আজম সৎ ও সাহসী হিসেবে পেয়েছি। অল্পকিছুদিনের চাকরিতে সে একজন বীরযোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুÐে কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটলে সেখানে ছুটে যান গাওসুলসহ তার সহকর্মীরা। সেখানেই তার গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। এতে তার সহকর্মীদের মৃত্যু ঘটলেও গাওসুল আজম গুরুতর ঝলসে যান। রাতেই তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট হাসপাতালে আনা নেওয়া হয়। রবিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাউসুলকে শেষবারের মত দেখতে বাড়িতে লোকে লোকারন্য। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবরে পিতা আজগার আলী, মা আছিয়া বেগম, স্ত্রী কাকলি খাতুনসহ স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে পড়েছে। মৃত্যুর খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ তাদের বাড়িতে হাজির হয়েছেন। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখার সময় গাউসুলের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছেনি। গাউসুলের ভগ্নিপতি বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে গাউসুলের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছতে রাত ১০টা বাজতে পারে। ফলে ওই রাতেই খাটুয়াডাঙ্গা ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এ দিকে মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ষ্টেশন কর্মকর্তা প্রনব কুমার বিশ্বাস জানান, রাতেই খটুয়াডাঙ্গা গ্রামে গার্ড অব অনারসহ রাষ্ট্রিয় মার্যাদায় গাউসুল আযমের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। এর আগে ঢাকায় ফায়ার সার্ভিসের অধিদপ্তরে গাউসুল আযমের প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহের কফিনে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: মাইন উদ্দিন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।