সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে চারদিনই অবরোধ ডাকছে বিএনপি। সপ্তাহে দু’দফা করে অবরোধ ডাকা হচ্ছে। অবরোধের দিনগুলোতে তো বটেই, অবরোধ আহ্বানের সন্ধ্যায় ও রাতে যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে। গত রবিবার মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে বেলা সোয়া ১টার দিকে যেখানে বাসে আগুন দেওয়া হয়, তার কাছেই চলছিল আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ। আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলোÑ ওই এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তাও ছিল। এর মধ্যেই বাসে আগুন দিয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। কিভাবে এটা সম্ভব? আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ৫ নভেম্বর রবিবার সন্ধ্যা, অকুস্থল বাংলামোটর। এখানে আছে একটি পুলিশ বক্স, আছে সিসিটিভি।
সর্বক্ষণ টহল দিচ্ছে পুলিশ। রাজধানীতে বর্তমানে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাবÑ যারা সার্বক্ষণিক নজরদারি ও তদারকিতে ব্যস্ত। হরতাল, আন্দোলনেও বাংলামোটর এলাকায় লোকসমাগম ও যানবাহনের স্বাভাবিকতা থাকে। এমন সুরক্ষিত স্থানেও অবরোধকারীরা একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করতে সক্ষম হয়। কড়া নিরাপত্তার ভেতরে এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই জনমনে ধারণা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা! তাদের নাকের ডগায় কী করে অগ্নিসন্ত্রাস ঘটে? না হয় ঘটল। তারপর হাতেনাতে কেন অগ্নিসন্ত্রাসীদের পাকড়াও করা যাচ্ছে না! গলদটা কোথায়?
ডিবি প্রধান বলেছেন, নাশকতাকারীরা যেখানেই থাকুক গ্রেপ্তার করা হবে। এমন দৃঢ়তাই প্রত্যাশিত, যদিও বাস্তবে তার প্রতিফলন এখনো ঢাকাবাসী দেখতে পায়নি। বাসে আগুন দেওয়ার আগে কিংবা আগুন লাগানোর পরপরই যদি দুষ্কৃতকারীদের পাকড়াও করা যেত, তবে জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসত। ডিবি-পুলিশ-র্যাব-বিজিবি প্রতিটি বিভাগই শক্তিশালী। অপরাধ দমনে ইতোপূর্বে তাদের সক্রিয়তা দেশবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। তারা বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত। কিন্তু বিএনপির গুটিকতক অগ্নিসন্ত্রাসীর কৌশলের কাছে কেন যে তারা পেরে উঠছেন না, তা বোধগম্য নয়। ঢাকাসহ সারাদেশে গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৯৫টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
ভাঙচুর করা হয়েছে অনেক গাড়ি। অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে নাশকতায় এ পর্যন্ত ১২ নাগরিক অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। ছয় পুলিশ সদস্যও দগ্ধ হয়েছেন। মৃত্যুর খবরও আছে। কিন্তু এভাবে তো সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলতে পারে না।
অতীতে বিএনপি-জামায়াতের টানা অগ্নিসন্ত্রাসের মাসগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ প্রহরার মাধ্যমে দূরপাল্লার বাস, বিশেষ করে খাদ্য ও জরুরি পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক জনকণ্ঠের প্রতিনিধিকে বলেছেন, অবরোধকালে দেশব্যাপী ৪৬০টি টহল দল কাজ করছে। সম্মিলিত টহলের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাসগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ প্রহরা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এই ব্যবস্থা যথাযথভাবে কাজ করলে অবরোধে আন্তঃজেলা যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক থাকছে না কেন? সোমবারে নাশকতা রুখতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের স্টপেজগুলোতে বাসের এবং যাত্রীদের ছবি তুলে রাখতে বলেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এই কাজ তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আমরা আশা করব, যে কোনো মূল্যে অগ্নিসন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা হবে। তাদের পাকড়াও করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা চাই।