
জন্মভূমি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রকৃতিগত পার্থক্যের কথা উল্লেখ করে অঞ্চলভিত্তিক যথাযথ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একেক এলাকা একেক রকম এটাও মাথায় রাখতে হবে। যেকোনও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে আরও ভালো করে চিনতে হবে, জানতে হবে।
রবিবার (২২ মে) প্রধানমন্ত্রী সকালে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল’-এর প্রথম সভায় দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এই ব-দ্বীপের জনগণকে নিরাপদ করতে এবং জনগণকে উন্নত জীবন দিতে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের অর্জিত বিশাল সমুদ্র এলাকা ডেল্টা প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যমুনা সেতু নির্মাণের সময় নদীর প্রশস্ততা বিবেচনায় না এনে নদীর ওপর মাত্র ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ করা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। যা পদ্মা সেতুতে করা হয়নি। ফলে, সেতুটি দীর্ঘ হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি পদ্মা সেতু ছোট করতে দেইনি। আমরা নদীর সঙ্গে বাফার জোন রেখে সেতু নির্মাণ করেছি। সুতরাং, সেতুটি (দেশের) দীর্ঘতম সেতু হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন জাপান সফরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারপর জাপান সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি দল পাঠায়। সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ১৯৭৪ সালে শুরু হয়েছিল।
সরকারপ্রধান বলেন, যে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনে সেতু প্রকল্প সাইটের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী পদ্মা নদীর গভীরতার পার্থক্য পাওয়ায় তিনি সেতুর নকশা নতুন করে প্রণয়ন করান।
তিনি বলেন, নতুনভাবে আমি নকশা করিয়েছি। আমি এখানে কোনও গোঁজামিল দিতে দেইনি। যদিও এটি সময় নিয়েছে, তারপরেও নকশা পাল্টে যেখানে যতটুকু ওজন নিতে পারবে সেভাবেই নকশা করেই এটা করা।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে যমুনা ও পদ্মাসহ নদীর প্রবাহ ও তলদেশের মাটির চরিত্র পরিবর্তন হয়। যেহেতু এখানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের মতো নয়, তাই এই পার্থক্য মাথায় রেখে সঠিকভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, প্রধান সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যত্রতত্র অবকাঠামো তৈরি করা যাবে না। সমুদ্রের বিশাল জলরাশিকে কাজে লাগাতে হবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে। দেশ নিয়ে কাজ করতে হলে সংশ্লিষ্টদের ভালোভাবে আগে দেশটাকে চিনতে হবে।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতা দখল করেছে তারা মানুষের জন্য কোনো কাজই করেনি। জাতির পিতা মানুষের জীবন রক্ষায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীও তৈরি করে গেছেন। পরিকল্পতিভাবে পদক্ষেপ নিতে পারলে যে কোনো কঠিন কাজও সমাধান করা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাং লাদেশকে চিনতে হবে, জানতে হবে। বাংলাদেশের কিন্তু একেক এলাকা একেক রকম, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই আপনাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা সবচেয়ে বড় কথা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা মাথায় রেখে আমরা কাজ করব।
দেশের নদীগুলোকে দূষণ থেকে রক্ষা করার নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। যত্রতত্র শিল্প কারখানা যেন না হয় সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে জানান তিনি। এক্ষেত্রে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।