জন্মভূমি ডেস্ক : অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে খুলনার চিংড়ি শিল্প। চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ায় ও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইউরোপের বাজারে চাহিদা কমেছে খুলনা অঞ্চলের সাদা সোনাখ্যাত এই চিংড়ির। ২০২১-২২ অর্থ বছরে খুলনা অঞ্চল থেকে বাগদা ও গলদা চিংড়ি বিদেশে রফতানি হয়েছে ২৪ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯০৪ মেট্রিক টন। বিদেশে চিংড়ি রপ্তানী করে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি ডলার। যা আগের অর্থ বছরের চেয়ে আয় কমেছে প্রায় ৯ কোটি ডলার । যে কারনে খুলনা,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা এখন দিশেহারা। এদিকে খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এছাড়া চিংড়ি চাষিদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া হিমায়িত চিংড়ির ৮৫ ভাগ যায় ইউরোপে, আর ১৫ ভাগ আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে। তবে এসব দেশে করোনভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানায় এক প্রকার বন্ধ হয়ে পড়ে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের বাজারে কমতে থাকায় সেই চাহিদা কাটিয়ে উঠা সম্ভ্যব হয়নি। ফলে আর্থিক মন্দার শিকার হয়েছে দেশের অন্যতম রফতানি পণ্যের এই খাত।
খুলনা রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে হিমায়িত চিংড়ি থেকে আয় হয়েছিল এক হাজার ৫১০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে সে আয় কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪২৭ কোটি টাকায়। এই সময়ে বিদেশীরা ক্রয় আদেশ বাতিল করায় রফতানিকারকদের লোকসান হয়েছে ৪৬২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ প্রথম সাত মাসে খুলনা অঞ্চল থেকে গলদা ও বাগদা চিংড়ি রফতানি হয়েছে ১৫ হাজার ৫১ মেট্রিক টন, যেখানে গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ১৮ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের রফতানি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। হিসাব অনুযায়ী খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে চিংড়ি রফতানি করে আয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি ডলার, যা আগের অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ৯ কোটি ডলার কম।
বিশ্ববাজারে চিংড়ি শিল্পের ধ্বসের বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শেখ আব্দুল বাকী বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় ও চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই শিল্পের খুবই খারাপ অবস্থা। প্রতিনিয়তই চিংড়ি রপ্তানী কমছে। চাষিরা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করতে না পারায় উৎপাদন কমছে। আর এরই প্রভাব পড়ছে রফতানি বাজারে। সি ফুড বাইং এজেন্ট এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সুজন আহমেদ বলেন, কিছু কিছু ফ্যাক্টরি অসদুপায় অবলম্বন করে চিংড়ি পাঠাচ্ছে, ওজনে কম দিচ্ছে, চিংড়িতে অপদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, চিংড়ি রফতানি বাড়াতে বিদেশে নতুন বাজার খোঁজাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সেই অনুযায়ী চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য অধিদপ্তর নানা উদ্দোগ গ্রহণ করেছে। খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার বলেন, নতুন নতুন পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে কাজ করছি। এছাড়া রফতানিকারকদের উৎসাহ করছি যাতে তারা প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত সি-ফুড মেলাগুলোতে অধিকহারে অংশ নিতে পারে। চিংড়িতে নতুন বাজার খোঁজার জন্য শুধু সরকার নয়, রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কাজ করতে হবে ।
চিংড়ির উৎপাদন ও গুণগত মান বৃদ্ধি করে আবারও ইউরোপের বাজার দখল করবে সাদা সোন খ্যাত এই শিল্প এমনটাই প্রত্যাশা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষদের।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত