শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ যেকোনো দেশের উন্নয়নের মূল ভিত্তি। শিক্ষা মানসম্মত না হলে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। আমাদের দেশের শিক্ষার মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সমালোচনার অন্ত নেই। শিক্ষার মানের পাশাপাশি অনেক শিক্ষকের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। দায়িত্ব পালনে অনীহার কারণে শিক্ষকতা পেশাটিও অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিষয়টি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। তবে অনেকের কারণে পুরো শিক্ষকসমাজকেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।
আমরা জানি শিক্ষকতা এক মহান পেশা। শুধু পেশা বললে ভুল হবে, শিক্ষকতা সত্যিকার অর্থেই এক মহান ব্রত। কিন্তু সেই ব্রত সাধনায় যে কঠোর নিষ্ঠার প্রয়োজন হয়, তা কি সব শিক্ষকের আছে? কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে, দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের অনুমোদন ছাড়া ছুটি কাটানোর প্রবণতা বেড়েছে। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চল ও দুর্গম অঞ্চলে এ সমস্যা বেশি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিদর্শনে গিয়ে এই চিত্র পেয়েছেন বলে জানা গেছে। গত জানুয়ারি মাসে দেশের চাঁদপুর, খুলনা, দিনাজপুর, রাজশাহী ও সিলেট অঞ্চলের ১০টি বিদ্যালয়ে ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী কোনো অনুমতি ছাড়াই ছুটিতে ছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশের ৫৫টি বিদ্যালয়ে ছুটির অনুমোদন ছাড়া বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন ৯৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী। এর সঙ্গে আছে বিদ্যালয়ে আসার সময়সূচি মানার ক্ষেত্রে অনীহা। গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষক তাঁর খেয়ালখুশিমতো বিদ্যালয়ে যান। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
একজন শিক্ষক তো যেকোনো শিক্ষার্থীর কাছেই অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হবেন। এটাই কাঙ্খিত। কিন্তু তিনি যখন ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকছেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে যাচ্ছেন না, তখন তো ভিন্ন একটি উদাহরণ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এটা তো কোনো শিক্ষার্থী আদর্শ হিসেবে ধরে নেবে না। অর্থাৎ একজন শিক্ষকের এ ধরনের অনুপস্থিতি কোনো অনুকরণীয় উদাহরণ তৈরি করছে না।
প্রশ্ন উঠতে পারে, শিক্ষকরা কেন এমন করেন? কারণ বিবিধ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনেকেই অন্য কোনো পেশায় যেতে না পেরে বাধ্য হয়ে এই পেশায় আসেন। ফলে সেই শিক্ষকের নিজের মধ্যেই এই পেশার বিষয়ে অনীহা রয়েছে। অনিচ্ছায় এই পেশায় আসার কারণে তাঁরা আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে পারেন না। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বেশ কম। ফলে তাঁদের অনেকেই একসময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অনেকে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নিয়ম মানতে চান না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু তত্ত্বাবধান নেই। জবাবদিহির চর্চাও সেখানে অনুপস্থিত। ফলে অনিয়ম করা সেখানে সহজ হয়ে যায়।
কিন্তু এই অবস্থা তো চলতে দেওয়া যায় না। কাজেই ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়মিত তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তবে পেশার মান উন্নয়নে ব্যবস্থা নিলে শিক্ষকতা আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো ভেবে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।