জন্মভূমি রিপোর্ট : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্র ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বিকেলে নগরীর দাদা-ম্যাচ ফ্যাক্টরির সামনে থেকে শিববাড়ী মোড় পর্যন্ত ‘গণতন্ত্র অভিযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পার্টি’র মহানগর কমিটির নেতা-কর্মীদের আয়োজনে এ কর্মসূচিতে পদযাত্রা ও গণ সংযোগে অন্যান্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স অংশ নেন। সেসময় তিনি কয়েকটি স্পটে বক্তৃতা করেন। কর্মীরা যাত্রাপথে মানুষের কাছে ১৮ দফা দাবিনামা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেন। তখন তারা বিভিন্ন দাবিতে শ্লোগান দিচ্ছিলেন।
বক্তৃতাকালে জননেতা প্রিন্স বলেন, অতীতের সরকারগুলো খুলনাকে শিল্পহীন নগরীতে পরিণত করেছে। দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের যে সম্ভাবনা ছিল তা কাজে লাগানো হয়নি। বিভিন্ন সময় নানা প্রকল্পের নামে লুটপাট অব্যাহত রাখা হয়েছে। রাস্তাঘাট উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গাচোরা রাস্তার মধ্যেই নগরবাসী বসবাস করছে। এ অঞ্চলের গরীব মেহনতী মানুষের কোন উন্নয়ন ঘটেনি। বস্তি আর রাস্তায় হকারের সংখ্যা কমছে না। রিক্সা-অটোরিকশা চালিয়েই জীবন রক্ষার চেষ্টা করছেন অনেকে, অথচ যাত্রী পাচ্ছেন না। এ অবস্থা থেকে সব মানুষের বসবাসযোগ্য খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চল গড়ে তুলতে পুরো উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ঢেলে সাজাতে হবে। এজন্য ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে অগ্রসর করতে হবে। একমাত্র নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তি এই কাজটি করতে পারবে।
বিগত দিনে পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র আর কর্তৃতবাদী গোষ্ঠীর কাছে সারা দেশবাসীর মত এ অঞ্চলের মানুষও জিম্মি ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ অবস্থার আপাতত অবসান হলেও পরিস্থিতি স্থায়ী করতে খুলনাবাসীকে সচেতন ও সংগঠিত হতে হবে। রুহিন হোসেন প্রিন্স বর্তমান সরকারের নিত্যপণ্যের উপর ভ্যাট-কর বাড়ানোর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, জনগণ এ সরকারের কাছে স্বস্তি চাইছিল। কিন্তু এই সরকার পুরনো ব্যবস্থা বহাল রেখে মানুষের জীবনে অশান্তি ডেকে আনছে। সিন্ডিকেট বহল আছে, পাচারের টাকা ফেরত আনার খবর নেই। খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিল করা হচ্ছে। কোন কোন মহল ‘মব’ এর নামে নানা ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করছে। যা গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে নানা ধরনের অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তারা দেশকে আরো অশান্ত করতে চাইবে। তিনি গণতন্ত্রের ধারা এগিয়ে নেয়ার জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানান।
তিনি বলেন, দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে কৃষক শ্রমিকসহ মেহনতি মানুষ। অথচ কৃষক ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। সব শ্রমিকের কাজ নেই, আবার যাদের কাজ আছে তাদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা যায়নি। তিনি অবিলম্বে সকলের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি, সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা, ন্যায্য মূল্যের দোকান ও জাতীয় বেতন স্কেল চালুর দাবি জানান। তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
পদযাত্রায় অন্যান্যের মধ্যে পার্টির খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি ডা. মনোজ দাশ, সাধারণ সম্পাদক এস এ রশীদ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল হান্নান, খুলনা মহানগর সভাপতি এইচ এম শাহাদাৎ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিত্যানন্দ ঢালী, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মিজানুর রহমান বাবু, অ্যাড. চিত্তরঞ্জন গোলদার, ডা. এস এম ফরিদুজ্জামান, সিপিবি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নিতাই পাল, সুখেন রায়, গাজী আফজাল হোসেন, আব্দুল হালিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা কিংশুক রায়, অ্যাড. প্রীতিষ মণ্ডল, মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল, শিশির সরকার, শাহীনা আক্তার, ফজলুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকার ভূষণ চন্দ্র তরুণ, হুমায়ুন কবির, ফরহাদ হোসেন মিটন, মীর ওবায়দুর রহমান, শরীফুল ইসলাম সেলিম, শহিদুল ইসলাম, অ্যাড. খান আজরাফ হোসেন মামুন, অশোক মণ্ডল, দুলাল সরকার, অশোক ঘোষ, শ্রমিকনেতা সাইদুর রহমান বাবু, দীন মোহাম্মদ, যুবনেতা ধীমান বিশ্বাস, মোফাশের আলম লেনিন, সৈয়দ রিয়াসাত আলী রিয়াজ, হরষিৎ মণ্ডল, রামপ্রসাদ রায়, তুষার বর্মণ, জামাল হোসেন, তুষার দত্ত, ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম, সুদীপ্ত রায়, তনুশ্রী, প্লাবন চন্দ্র চন্দ, জাহিদুল ইসলাম, রবীন মণ্ডল, আনিসুর রহমান, রাজু আহমেদ, মোঃ আজম, তন্ময় রায়, মোঃ রায়হান, সৈকত, আকাশ প্রমুখ।
আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত খুলনা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পদযাত্রা ও গণসংযোগ চলবে। এসব কর্মসূচিতে সিপিবি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স অংশ নেবেন।
অন্তর্বর্তী সরকার পুরনো ব্যবস্থা বহাল রেখে অশান্তি ডেকে আনছে: কমরেড প্রিন্স
Leave a comment