
গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : হাজারো প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে নিজ স্বপ্নকে বাস্তবে দেখতে নিজের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি শক্তিহীন অদম্য কণ্ঠের অধিকারি লিটন দাশ। নিজের দু’চোখের অন্ধত্বতটা যাকে হার মানাতে পারেনি। চোখের দৃষ্টি না থাকলেও অন্তরের জ্ঞানের আলো দিয়ে গানকে নিজের মতো করে অর্জন করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সবার মাঝে। বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আয়োজিত ‘সাতক্ষীরার কণ্ঠে’ অংশগ্রহণ করছেন দৃষ্টিজয়ী লিটন দাশ। তার স্বপ্ন তার গানের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে ভালো মাপের শিল্পী হওয়া। কিন্তু তার এই স্বপ্ন পূরণে আছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা।
অদম্য এই কণ্ঠের অধিকারি লিটন দাশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের খানপুর গ্রামের বাসিন্দা। দিনমজুর পরিমল দাশ-পূর্ণিমা দম্পতির সন্তান লিটন দাশ। দরিদ্র এই পরিবারে ৪ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। তার তিন ভাই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তিনিও দুই সন্তানের জনক। তার বাবা বয়সের ভারে এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বেকার হয়ে পড়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে পরিবারের বাকি সদস্যের। যার কারণে বর্তমানে লিটন দাশ হাট বাজারে গান গেয়ে গেয়ে টাকা উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছে বাকি আর সদস্যদের। আবাদ উপযোগি কোন জমি জমা না থাকলেও রয়েছে শুধু ৪ শতক বসতভিটে।
লিটন দাশ বলেন, আমার ছোট থেকে ইচ্ছা আমি জীবনে গান গেয়ে বড় কিছু করবো। কিন্তু দরিদ্রের কারণে আমি আমার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারিনি। আমি আমার প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য গ্রামে-গঞ্জে হাট বাজারে গান গেয়ে মানুষের মন জয় করা শুরু করি। গানকে নিয়ে বড় হওয়ার তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা আমি পাইনি। গানই আমার জীবন গানকে নিয়ে আমি বড় হতে চাই। আমি আমার এ দু-চোখ ভরে আবারো সুন্দর পৃথিবীটা দেখতে চাই আমার গানের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে। ধন্যবাদ জানায় জেলা প্রশাসক স্যারকে আমাকে সাতক্ষীরার কণ্ঠে সুযোগ করে দিয়ে আমার প্রতিভাকে বিকশিত করানোর জন্য। আমি তাদের গানের মধ্য দিয়ে বড় করতে চাই। তারা যেন গানকে নিয়ে বড় হতে পারে। আমার মেয়েটা ভালো গান করে কিন্তু দরিদ্রের কারণে আমি তার ভালো কোথাও গান শিখানোর জন্য দিতে পারছি না। আমার ইচ্ছা আমি তাকে শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি করাতে চাই যদি আমাকে সবাই সাহায্য করেন।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার মো: রুহুল কুদ্দুস বলেন, লিটন দাশ তালাবাসীর গর্ব। দৃষ্টি শক্তিহীন অদম্য কণ্ঠের অধিকারি লিটন নিজের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজের দু’চোখের অন্ধত্বতটা তাকে হার মানাতে পারেনি।