জন্মভূমি রিপোর্ট : নগরবাসী ও শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি-প্রতীক্ষার ফল বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। নগরীর প্রবেশদ্বার গল্লামারি এলাকার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ও দৌলতপুরের বিএল কলেজের সামনে নির্মাণ হচ্ছে ফুটওভার ব্রিজ। সড়ক বিভাগ জানায়, খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা ও খুলনা-যশোর মহাসড়কের সরকারি বিএল কলেজের সামনে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ। ব্রিজ ২টি নির্মাণের কাজ পেয়েছেন কংক্রিট এন্ড স্টিল টেকনোলজি লিঃ, আবিদ মনসুর কনস্ট্রাকশন (জেভি) নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ইতিমধ্যে খুবি’র প্রধান ফটকের সামনে ফুট ওভার ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ব্রিজ নির্মেোণর কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ১১টি পিলারের উপর ব্রিজের স্টিল প্লেট স্থাপন করা হবে। প্লেট তৈরির কাজ চট্টগ্রামের একটি ওয়ার্কশপে চলমান রয়েছে। ১১টি পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৫টি পিলারের বেজ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যা মূল কাজের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। বাকি পিলারগুলার বেজ ঢালাইয়ের কাজ দ্রুতই সম্পন্ন হবে।
সওজ সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে একটি ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছিলো। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরও ডিও লেটার প্রদান করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য ডিও লেটার প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে খুলনা সওজ ওই স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য গত বছরের শেষের দিকে পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এবং সম্ভাব্য ব্যয় ৫ কোটি টাকা ধরে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পাশ হয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
অপরদিকে, খুলনা যশোর জাতীয় মহাসড়কের দৌলতপুর সরকারি বিএল কলেজের সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৬৮ হাজার ৪১৬ টাকা।
সওজ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোপাল কুমার সাহা বলেন, বিএল কলেজের সামনে ফুটওভার ব্রিজটি অনেকটা খুবি’র ব্রিজের ডিজাইনের আদলে হবে। ব্রিজটি নির্মাণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ব্রিজের প্লেট তৈরির কাজ চট্টগ্রামের একটি ওয়ার্কশপে চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, দৌলতপুর সরকারি বিএল কলেজের সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুর কাদেরের কাছে দেওয়া ডিও লেটার প্রদান করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, খুলনা-যশোর জাতীয় মহাসড়কটি বিভাগীয় শহর খুলনার সাথে মোংলা সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর তথা সমগ্র বাংলাদেশের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সড়কটির গুরুত্ব অপরিসীম। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে বিভাগীয় শহর খুলনা হতে গোপালগঞ্জ হয়ে রাজধানী ঢাকা যাওয়ার ক্ষেত্রে সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সড়কটির খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর নামক স্থানে বিএল কলেজসহ এর সামনে সেফ এন্ড সেভ শপিং সেন্টারসহ আরও বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাজার-হাজার দোকানপাটসহ অনেকগুলি যাত্রী পরিবহন কাউন্টার রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষ চলাচলের কারণে বিশেষ করে সড়ক পারাপার হওয়ার সময় ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। ওই স্থানে সুষ্ঠু যানবাহন চলাচল তথা জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা জরুরি প্রয়োজন। সিটি মেয়রের ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে খুলনা সওজ থেকে তখন ওই স্থানে ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এবং সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য পাস হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৬৮ হাজার ৪১৬ টাকা।
খুলনা সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নেমে প্রথম যে ফ্লাইওভারটা নৌকার মতো ঠিক সেই আদলে এই ফুটওভার ব্রিজটি হবে। ব্রিজটিতে এসটিলেটার ব্যবহারের ফ্যাসালিটি রাখা হয়েছে। ব্রিজ দু’টি হবে খুবই দৃষ্টিনন্দন। ব্রিজ দু’টি নির্মিত হলে দুর্ঘটনা রোধসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধরণ পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে অবাধে চলাচল করতে পারবেন। কার্যাদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময় ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ফুট ওভার ব্রিজ দু’টির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীন পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো: আশিক-উর-রহমান বলেন, ব্রিজ দু’টি নির্মাণ হলে খুলনা শহরে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেকটা পরিবর্তন ঘটবে। শহরের বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের ফলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এমন একটি ব্যবস্থা দেখতে চাই, ব্রিজটি যেন জনসেবায় ব্যবহৃত হয়, জনগণের জন্য কোন ভীতিকর পরিবেশ তৈরি না করে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত