জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা অনেক। ইসির দায়িত্ব নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সেটি হতে হবে সংবিধানে বর্ণিত নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে। এর পাশাপাশি নির্বাচনের মাঠে শান্তি-শৃঙ্খলার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখার দায়িত্ব ম্যাজিস্ট্রেটদের। সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আইন আরপিওতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, নির্বাচন পরিচালনা করতে কমিশন যেভাবে চাইবে রাষ্ট্র বা সরকার তা দিতে বাধ্য।
তদনুযায়ী বর্তমানে প্রশাসন ইসির অধীনে থেকে তাদের চাহিদামতো দায়িত্ব পালন করছে। নির্বাচনে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য মনে করিয়ে দিয়ে এসব কথা বলেন। জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি এও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে যদি সরকার পরিবর্তন না হয়, তাহলে অগণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা কাম্য নয় কারও।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশ যখন উৎসবমুখর, তখন একটি বড় দল ও সমমনা কয়েকটি দল ভোট বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছে। ভোট বর্জন ও প্রত্যাখ্যানের কথাও বলছে। করছে সহিংসতাও। এ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট বর্জনে জনমত তৈরিতে প্রচার চালানো যেতে পারে। তবে যদি কেউ সহিংসতা-অগ্নিসস্ত্রাস করে, তবে কঠোরভাবে তা মোকাবিলা করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সবিশেষ দায়িত্ব ও করণীয় রয়েছে। ভোটবিরোধী সন্ত্রাসী, অতিউৎসাহী কর্মী ও পথভ্রষ্টদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় দমন করতে হবে।
ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। জনমনে ভীতি সৃষ্টিসহ সহিংসতাকে বরদাস্ত করা হবে না। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবারের নির্বাচনের একটি আন্তর্জাতিক মাত্রা রয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়কে দৃশ্যমান করে দেখাতে হবে যে, বাংলাদেশে নির্বাচন হয়েছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু-স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে।
এবার বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল ২০১৩-১৪-এর মতো নির্বাচন বর্জন ও প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রায় প্রতিদিনই তারা লিফলেট বিতরণসহ মিছিল করে সাধারণ মানুষকে ভোট না দেওয়ার জন্য প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করতে পারে, কিন্তু ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ভোটারদের নিরুৎসাহিত করতে পারে না। এর পাশাপাশি বিএনপিসহ কয়েকটি দল হরতাল-অবরোধ-অসহযোগের নামে সারাদেশে চালিয়েছে ভয়াবহ সহিংসতা।
তাদের এ ধরনের কর্মকা- অব্যাহত আছে, যা নির্বাচন ও পরবর্তী সময়েও অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় সারাদেশে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ করতে ২৯ ডিসেম্বর থেকে বিজিবি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং ৩ জানুয়ারি থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি ভোটারদের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে। সেনাবাহিনী ১০ জানয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে। তারা সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য কাজ করবে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার নিমিত্তে।
এর ফলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ভোটাররা নির্ভয়ে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত হবেন। ফলে, ভোট বানচালের দুরভিসন্ধি বা গোলযোগের অপচেষ্টা সফল হবে না। অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে।