মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশ করছেন বাংলাদেশিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা। এতে তারা প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অবৈধ পথে বিদেশযাত্রায় মৃত্যুর খবর নতুন নয়। সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল তিউনিসিয়ার পূর্ব উপকূলের কাছে অভিবাসনপ্রত্যাশী বোঝাই দুটি নৌকা ডুবে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অর্ধশতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও ২৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগই সাব-সাহারা অঞ্চলের বাসিন্দা। মার্চের শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিউনিসিয়া উপকূলের কাছে অন্তত ৭টি নৌকাডুবির ঘটনায় মৃত্যু ও নিখোঁজ ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে গত ৫ এপ্রিল ভূমধ্যসাগরে চার দিন ধরে ভেসে থাকা একটি মাছ ধরার নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৪৪০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়। প্রায় ১১ ঘণ্টার চেষ্টায় তাদের উদ্ধার করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করা নাগরিকদের মধ্যে সিরিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিসর, সোমালিয়া ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি কিংবা অন্য দেশের রয়েছেন, তা নিশ্চিত করেনি কর্তৃপক্ষ। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য মতে, ভূমধ্যসাগর ব্যবহার করে ইউরোপে প্রবেশকারীর সংখ্যায় বাংলাদেশিদের অবস্থান চতুর্থ। গত ১০ বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ হাজারের বেশি মানুষ। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যানবিষয়ক দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। এই পরিসংখ্যান শঙ্কাজনক। ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথটি হচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। বিদেশ গমনেচ্ছুদের দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। মৌখিক প্রচারণায় বলা হয়, শিপ দিয়ে তারা ইউরোপের মানবাধিকার দেশ ইতালিতে পাড়ি জমান। বাস্তবতা হলো, শিপ নয়, এ যেন মৃত্যুর এক ফন্দির নাম প্লাস্টিকের বোর্ড ও টিনের তৈরি নৌকা। প্রত্যক্ষদর্শী এমন অনেকেই আছেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে জীবন ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশযাত্রা রোধে ও দালাল-প্রতারকদের দৌরাত্ম্য কমানোর ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় জনশক্তি রপ্তানির উদ্যোগ বেশ আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু তা কাঙ্খিত মাত্রায় কার্যকর না থাকায় এসব অবৈধ তৎপরতা থামেনি। এছাড়া দুবাইয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ থাকলেও দুই বছরে আড়াই লাখের অধিক লোক সেখানে গেছেন ভ্রমণ ভিসায়। কাজ দেয়ার কথা বলে ভ্রমণ ভিসায় তাদের দুবাই নেয়া হলেও সেখানে গিয়ে মিলছে না কোনো কাজ। নিরুপায় হয়ে তারা প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে ইউরোপে পাড়ি দিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে মরণযাত্রা করছেন। অনেকেই মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে পাসপোর্ট, টাকাপয়সা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। শিকার হচ্ছেন অমানুষিক নির্যাতনের। অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা রোধ ও বিদেশে নিরাপদ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বৈধ পথে কম খরচে প্রবাসে কর্মসংস্থানের সরকারি উদ্যোগে গতি আনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করা জরুরি। আগামীতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে অভিবাসী ও উদ্বাস্তুসংক্রান্ত বৈশ্বিক চুক্তি করার ব্যাপারে বাংলাদেশকে কণ্ঠ সোচ্চার রাখতে হবে নিজেদের স্বার্থেই।