
জন্মভূমি ডেস্ক : বিদায়ী ২০২৩ সালের প্রায় সময়জুড়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল মূল্যস্ফীতি। আলু, ডিম, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, আটা, মুরগি ও সবজির মতো নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে কারসাজি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির তেলের দাম বাড়া, রিজার্ভ কমে যাওয়া ও চাহিদামতো পণ্য আমদানি না হওয়ায় মূল্যস্ফীতিকে আরও উস্কে দিয়েছে। তবে আশার কথা, শীতকালীন শাক-সবজি, নতুন আলু ও পেঁয়াজ বাজারে চলে আসায় সর্বশেষ নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে।
নভেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে সাধারণ মূল্যস্ফীতির এ হার ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ সার্বিক মূল্যস্ফীতি একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে। এছাড়া ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে ওই সময় রেমিটেন্স আহরণ বৃদ্ধি, রপ্তানি ও বিনিয়োগে গতি ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। রেমিটেন্স বাড়ায় ডলার সংকট দূর হবে, এছাড়া অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে রিজার্ভ আরও বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপও কমে আসবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সম্প্রতি বলেছে, আগামী কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখা, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর উদ্যোগ, বিশ্ব বাজারে পণ্যমূল্য নিম্নমুখী হওয়া এবং ফসলের উৎপাদন বাড়ার আভাস মূল্যস্ফীতির পারদ কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
তবে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা, সব ধরনের সুদহার বাড়ানো, বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো, সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় ঋণের জোগান দেওয়া বন্ধ করা, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমিয়ে উৎপাদনমুখী খাতে ঋণের জোগান বাড়ানো প্রভৃতি।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ত্রৈমাসিক’ শীর্ষক প্রতিবেদন এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, খাদ্যপণ্যের দাম বেশি হারে কমায় বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে সদ্য সমাপ্ত নভেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে হয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত মাসে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দুটিই কমেছে। তবে বেশি কমেছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি, খাদ্যপণ্য খাতে আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৮০ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। এটিই মূলত মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রেখেছে।
চলতি বছরের শেষ মাস ও নতুন বছরের প্রথম মাস থেকে মূল্যস্ফীতি কমবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, এখন মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী এবং মজুরিহার ঊর্ধ্বমুখী। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ। আগামী জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমবে। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল হবে। পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে, এই মূল্যস্ফীতি দেশের অভ্যন্তরীণ কারণে হয়নি। আমাদের নিজেদের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে না। এটা আন্তর্জাতিক বিষয়। এর আগে করোনা মহামারির কারণে অনেকটা চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। পরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল কিনছে সবাই। ইউক্রেনও কিছু পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রণোদনা প্যাকেজের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত কৃচ্ছ্র সাধন এবং আমদানি ব্যয় কমানোর ফলে ডলার ভয়ংকর রূপ ধারণ করেনি।