
# ৪২টি নদী মরে গেছে
# ভদ্রা নদীর বুকে দ্বীপ
শেখ আব্দুল হামিদ
খুলনার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অসংখ্য নদ-নদী আজ বিলুপ্তির পথে রয়েছে। রাতারাতি নদীর বুকে জেগে উঠছে বালুর দ্বীপ। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যান চলাচল। বহু নদীর চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। তার বুকে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন ক্ষেত খামার।
সূত্রমতে, সুন্দরবনের নদী বাদে অন্য নদীগুলোর ৮০ শতাংশই এখন কার্যত অস্তিত্বের সংকটে কাতর। ফলে কৃষি মৎস্যের পাশাপাশি হুমকির মুখে পশুসম্পদ সহ প্রতিবেশ ও পরিবেশ। একদিকে মানব সৃষ্টি কৃত্রিম সংকট আর অন্যদিকে ফারাক্কার প্রভাবে নদ নদীগুলো ধীরে ধীরে যৌবন হারিয়েছে। নদী শাসনের নামে চলছে অপশাসন। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার পরিবর্তে বাস্তবায়িত হচ্ছে তাৎক্ষনিক আইওয়াশ প্রকল্প। দু’ একটি মেগা প্রকল্পেও চলছে প্রভাবশালীদের লুটপাট। ফলে বৃহত্তর খুলনার অর্ধশত নদ-নদী এখন মৃত প্রায়। যত্রতত্র বাঁধ, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে নদী শাসন ও অপ্রয়োজনীয় স্থানে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে এ অঞ্চলের নদ-নদীর গভীরতা আজ বিপন্ন। আর লবনাক্ততা উপকুলের সবুজ বেষ্টনীকে কুরে কুরে খাচ্ছে। ¯্রােত নেই বললেই চলে এসব নদ নদীতে। খুলনা অঞ্চলের ছোট-বড় মোট ১৮৯টি নদীর ভৌগলিকবৈশিষ্ট (জিওমরফিফোলজি), বাস্তসংস্থান (ইকোলজি) এবং মাছ উৎপাদনের অবস্থা সম্পর্কে এক গবেষণায় দেখা গেছে, শতভাগ নদীরই গভীরতা কমে গেছে। ১৮০টি নদীতে মাছের প্রজাতি কমেছে অনেক, ১৬৮টি নদীর মাছ চলাচলের রাস্তা ধ্বংস হয়েছে, ৪২টি নদী মরে গেছে, ১৭৭টি নদীতে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা রয়েছে। ১৭০টি নদী ভরাট হয়ে গেছে, বিভাগের ১৮৯টি অর্থৎ শতভাগ নদীতেই লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৮২টি নদীর স্রোত কমে যাওয়ার সাথে সাথে মাছও কমে গেছে। তাছাড়া ৩৪টি নদীর মুখে পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে।
এদিকে বটিয়াঘাটার ভদ্রানদী খর¯্রােতা হারিয়ে এখন মৃত প্রায়। তার বুকে গড়ে উঠেছে ধুধু বালুচর। ভাটার সময় মানুষ এপার থেকে ওপারে হেটে পার হয়। কালের কপোলতলে হারিয়ে যেতে বসেছে এ নদীর যৌবন। ঐতিহ্যবাহি বারোআড়িয়া বাজারের প্রাণ ছিল এ নদী।
অপরদিকে খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার প্রধান প্রধান নদীগুলো পরিচয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকলেও ছোট-বড় মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য যে নদীগুলো এখানে রয়েছে সেগুলো হলো- শিবসা, পেসা, বলেশ্বর, পগুর, আড়পাঙ্গাসিয়া, খোলপেটুয়া, আগুনমুখা, ভদ্রা, আঠারোবাকী, আলাইপুর, গাসিয়াখালী, দড়াটানা, ইছামতী, রায়মঙ্গল, নমুদ সমুদ্র, সোনাগাঙ্গ, ভাঙ্গরাকুঙ্গ, মালঞ্চ, সাতক্ষীরা, সুতারখালী, মারজাতী, হরিণভাঙ্গা, মহাগঙ্গা, গলাঙ্গী, হরিপুর, সোনাই, বুধহাটার গাঙ্গ, ঢাকি, গলাঘেমিয়া, উজীরপুর, কাটাখাল, গুচিয়াখালী, খাল আকরার, খাল মংলা, সোলপায়ারা আগুরমুখ মহুরী, মোদলাম, হাডুয়াভাঙ্গা, পানগুছি, মেয়ার গাং, কাজিবাছা, নালুয়া, কাকশিয়ালি, বলেশ্বর, মরাভোলা। সূত্র মতে উল্লেখিত নদীগুলোর মধ্যে একমাত্র সুন্দরবনের নদী বাদে অন্য নদীগুলোর ৮০ শতাংশই এখন কার্যত অস্তিত্বের সংকটে কাতর। এই নদীগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশই আগের মত স্রোতস্বিনী বিপুলদেহী উচ্ছল ও ক্ষিপ্রগামী নেই। জায়গায়-জয়গায় শুকিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। অনেকগুলো আবার দেখলে বুঝবার উপায় নেই যে, একসময়ে এখানে কোনো তীব্র স্রোতবাহী নদী ছিল। আবার কোনো কোনোটা ধীরে ধীরে মরে পরিণত হয়েছে সরু খালে। অনেকগুলোর গতিপথ পরিবর্তিত বা স্থায়ীভাবে রুদ্ধ হয়ে গেছে। তবে যেসব নদী এখনও জীবিত ও গতিশীল এবং বর্ষাকালে প্রচন্ড বেগবান, বস্তত সমুদ্র দক্ষিণে বলে তার অধিকাংশই উত্তর থেকে দক্ষিণদিকে প্রবাহিত। বহু নদ-নদী ভরাট হয়ে তার বুকে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি। অনেক নদীর নাম মানুষ এখন ভুলে যেতে বসেছে।