
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর: অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে সাতক্ষীরার নদ-নদী ও খালগুলো। এছাড়াও শতাধিক স্লুইস গেট নষ্ট হয়ে রয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই নদী খনন ও নষ্ট স্লুইস গেটগুলো সংস্কার করা না হলে সাতক্ষীরার বহু অংশ পানিবদ্ধতায় নিমজ্জিত হতে পারে। একসময়ে সাতক্ষীরায় ২০টির অধিক নদ-নদী থাকলেও বর্তমানে দৃশ্যমান রয়েছে ১৩টি। বাকি নদীগুলো ভরাট হয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর অধীনে ১২টি নদ-নদী রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ইছামতি, কালিন্দী, কাকশিয়ালী, গোলঘেষিয়া, হাবড়া, মরিচ্চাপ, সোনাই, মাদার, মিরগাংও মালঞ্চ, খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদ। এর মধ্যে সোনাই নদী প্রায় মৃত। গোলঘেষিয়া ও মাদার নদী বাদে অন্য নদীগুলো প্রবাহমান। হাবড়া নদী ইতোমধ্যেই খনন করা হয়েছে। মরিচ্চাপ নদীর খনন কাজ চলমান রয়েছে।আর পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর অধীনে বেতনা নদী। এছাড়া, খোলপেটুয়া মরিচ্চাপ, গোলঘেষিয়া ও কপোতাক্ষ নদের কিছু অংশ রয়েছে এই পাউবো-২ এর অধীনে। নদীগুলো ছাড়াও সাতক্ষীরায় খাল রয়েছে ২৩০টি। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর অধীনে রয়েছে ১১০টি খাল। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর অধীনে রয়েছে ১২০টির মতো।
এসব নদী ও খালের ওপর নির্মিত ২৫১টি সøুইস গেটের অধিকাংশই নষ্ট ও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তবে, পাউবোর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ১১০টি সøুইস গেট সংস্কার ও নির্মাণ করেছেন।
শত শত কোটি টাকা খরচ করে কয়েকটি নদী ও খাল খননের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। একটির খনন কাজ চলমান রয়েছে। তবে, এসব খনন কাজ যথাযথভাবে করা হয়নি বা হচ্ছে না বলে নানান ধরনের অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
এদিকে, ভরাট হয়ে যাওয়া অধিকাংশ নদ-নদী ও খাল প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এসব নদী ও খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। একাধিক ইটভাটা, দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শুঁটকি মাছের কারখানা, গোডাউন, ঘর-বাড়ি গড়ে তোলা হয়েছে।
অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত সøুইচ গেট, অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে বেশির ভাগ খাল এখন অস্তিত্ব হারিয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর আগের অবস্থানে নেই নদী-খালগুলো। তারপরও এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালছে। বিভিন্ন প্রকল্পে ইতোমধ্যে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি বলেন, ৪৬৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। এই খনন কাজ শেষ হয়েছে২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে। এছাড়া, মরিচ্চাপ নদীর সাড়ে ৩৫ কিলোমিটার ও বেতনা নদীর অধিকাংশই খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ১৫ কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টিকেট খালের ১২ কিলোমিটার, আরকুনি খালের ৫ কিলোমিটারসহ লাবন্যবতী নদীর (এখন খাল) খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খনন করা হয়েছে ৭০ টির অধিক খাল।নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন আরো বলেন, সাতক্ষীরা শহরের বুকে চিরে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খাল (এক সময়ের বিশাল আকারের নদী) ২০১৯-২০২১ খনন করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। কিন্তু নানাবিধ কারণে তিনি শেষ করতে পারেননি। এই প্রাণসায়ের খাল খনন করতে যেয়ে ডিসি মোস্তফা কামাল দুর্ণীতির মামলায় জড়িয়েছেন বলে জানান পাউবো কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন।পাউবো-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান মিশুক বলেন, তার অধীনে থাকা ১৩৬টি সøুইস গেটের প্রায় ৭০ ভাগ সংস্কার করা হয়েছে। মরিচ্চাপ নদী খনন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভুমি দস্যুদের কবল থেকে ভরাট হয়ে যাওয়া সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে খননের ব্যবস্থা করতে হবে। নদী-খাল রক্ষায় সকলকে আন্তরিক হতে হবে।