জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি তিন ঝুঁকিতে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-অব্যাহতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার মানে নিম্নমুখীর প্রবণতা ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি। এসব কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়ছে। যা অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে বড় ধরনের আঘাত করে যাচ্ছে।
এ কারণে সরকারের সার্বিক ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বাড়তি ব্যয় মেটাতে বেড়েছে সরকারের ঋণনির্ভরতা। বৈদেশিক মুদ্রা আয়, রাজস্ব বাড়ানো ও ভর্তুকি কমানোর মাধ্যমেই এই চাপ কমানো সম্ভব।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) এক পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের ঋণ আলোচনা চূড়ান্ত করার জন্য গত ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসেন সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত এম সায়েহ। বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আইএমএফ একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সরকারকে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে।
এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশ কিছু ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি এখনো স্বস্তিদায়ক। তবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমানোর ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি।
অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় আইএমএফের কাছ থেকে বাংলাদেশ ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ পাচ্ছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি ঋণ প্রস্তাব আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় অনুমোদন হতে পারে। এটি হলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে।
আইএমএফের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে বেশিমাত্রায়। এর বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমেছে। বৈশ্বিক অস্থিরতায় সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ কমে গেছে। অব্যাহতভাবে রিজার্ভ কমে যাওয়াটা অর্থনীতির জন্য শঙ্কার কারণ। রিজার্ভ কমে গেলে বাজারে ডলারের চাপও বাড়বে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাবে। যা এশিয়ার প্রায় সব দেশেই হচ্ছে। টাকার মান কমে গেলে সব খাতেই সরকারের ব্যয় বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে বাড়বে আমদানি ব্যয় ও পণ্যমূল্য। যা মূল্যস্ফীতির হারকে আরও উসকে দেবে। যা পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে চাপে ফেলতে পারে।
আমদানি ব্যয়সহ অন্যান্য খাতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে আয় বাড়ছে না। এতে সার্বিক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। এ ঘাটতি কমাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংকট মোকাবিলায় রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সব ধরনের বিলাসী পণ্য আমদানি কমানো হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানিও কমে গেছে। মূল্যস্ফীতির অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের আয় কমেছে ও সরকারি সংস্থাগুলোর ব্যয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করতে তেল, গ্যাস আমদানি কমানো হয়েছে। এতে বিদ্যুৎসহ সব ধরনের জ্বালানির ঘাটতি হয়েছে। যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সংকুচিত করেছে। একই সঙ্গে মুদ্রানীতিতে কঠোরতা আরোপ করায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও কমেছে। এতে মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী হলেও সরকারের মাত্রাতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গত বছরের চেয়ে বাড়বে। আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্ভাব্য গতিতে ফিরবে বলে প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ ঋণ পাচ্ছে। এতে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার চাপে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারকে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি ভর্তুকি কমাতে হবে। তাহলে সরকার সুফল পাবে। এসব উদ্যোগের ফলে বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ ৯৫১ কোটি ডলারের আমদানি ব্যয় হয়। এরপর থেকেই আমদানিতে লাগাম টানা হয়। এতে আমদানি কমতে থাকে। গত ডিসেম্বরে আমদানি ব্যয় কমে ৭০০ কোটি ডলারে নেমেছে। আমদানি বাড়ার সঙ্গে সমন্বয় রেখে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স না বাড়ায় রিজার্ভ থেকে ডলার দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটাতে হয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। যা এখনো অব্যাহত।
আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করলেও এর প্রভাব এখনো অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেনি। বরং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছু সূচকে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তাদের মতে, ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও সঞ্চয় কমার প্রবণতা ব্যাংকিং খাতকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত