
ঋণের অর্থ ব্যবহারের অগ্রগতি এবং অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ তথ্য জানতে গত ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশে আসে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। এই সফরে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং আইএমএফের ঋণে নেওয়া প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেন।
গত বছরের ২৪ জুলাই ঋণ চেয়ে আইএমএফের কাছে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এই ঋণের প্রথম কিস্তি এরই মধ্যে ছাড় করা হয়েছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত আইএমএফের কর্মসূচি চালু থাকার কথা রয়েছে। আইএমএফের ঋণের সঙ্গে দেওয়া বেশ কিছু শর্ত বাংলাদেশ এরই মধ্যে পূরণ করেছে এবং আরো কিছু শর্ত পূরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোসহ আর্থিক খাতের কাঠামো ও নীতি সংস্কারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে, তার শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটি সুদহার করিডর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সুদহার করিডর এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সুদহারের বেঁধে দেওয়া সীমা ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহারে পরিচালনভিত্তিক পরিবর্তন করা যায়।
বাংলাদেশ যখন আইএমএফের ঋণ গ্রহণ করে, তখন দেশের অর্থনীতিতে দুটি চাপ ছিল প্রবল। প্রথমটি হলো, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। দ্বিতীয়টি মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারসহ চাপা পড়া চাহিদা হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তাই লেনদেনের ভারসাম্য আনতে এই ঋণ নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। স্বাভাবিকভাবেই আইএমএফ কিছু শর্ত দিয়েছে। সংস্কার করার কথা বলেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এর মধ্যে বেশ কিছু সংস্কার আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএমএফের ঋণের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হলে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য সাহসী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। তাঁদের মতে, আইএমএফের ঋণ আমাদের সংকটকালে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছেও বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা যাবে। এই ঋণ রিজার্ভ বাড়াবে। তবে এই অর্থ আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি নয়। আর সে কারণেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই হবে। সরকারি অর্থের অপচয় রোধ করাও জরুরি।
বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আছে। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। আছে মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশ সফর শেষে আইএমএফের মিশনপ্রধান এক বিবৃতিতে বলেছেন, মূল্যস্ফীতির চাপ, বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা এবং প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর অর্থনীতির ধীরগতি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এবং টাকার মানের ওপর প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু চ্যালেঞ্জ অনেক আগে থেকেই ছিল, এখনো আছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো শক্তভাবে মোকাবেলা করা গেলে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।