জন্মভূমি ডেস্ক : জামিন আদেশ থাকা সত্ত্বেও যখন গ্রেপ্তার করা হয়, ধরে নিয়ে টর্চার করা হয়, তখন মৌখিক আদেশে আর কী হবে। হাইকোর্টের সেই অবস্থান এখন আর নেই বলে মন্তব্য করেছেন একটি বেঞ্চ।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির ১৮ আইনজীবীর জামিন আবেদন উপস্থাপন করা হলে আজ রবিবার (৬ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। এছাড়া সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ভাঙচুরের ঘটনা দেশের মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
পরে আদালত বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের জামিন আবেদন গ্রহণ করে শুনানির জন্য সোমবার (৭ আগস্ট) দিন ঠিক করে দেন।
ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির ১৮ আইনজীবীর আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টের এই বেঞ্চে যান সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদনীসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।
জামিন আবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করে এ জে মোহাম্মদ আলী রবিবার ই শুনানি করার সুযোগ চান। তিনি বলেন, আপনাদের এখতিয়ার আছে। জরুরি ভিত্তিতে একটি তালিকা করে নিতে পারেন।
তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, সিনিয়র কাউন্সিল আমার ব্রাদার শুনতে চাচ্ছে না। আপনারা অন্য সিনিয়র কোর্টে চেষ্টা করেন প্লিজ।
এসময় আইনজীবী বলেন, আপনারা সব কোর্ট যদি এমন করেন তাহলে আমাদের কী হবে, আমরা কোথায় যাব? জুডিশিয়ারির যদি এমন অবস্থা হয়, যেখানে আমরা আইনজীবীরা এখানেই প্র্যাকটিস করছি। এই অঙ্গনের আইনজীবী হিসেবে আমরা সুরক্ষা চাইছি। এ বিষয়ে আপিল বিভাগেরও নির্দেশনা রয়েছে।
পরে আদালত বলেন, ঠিক আছে, আজকে দিয়ে যান, কালকে শুনবো। কালকে তালিকায় আসবে।
তখন বিএনপির আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, তাহলে কাল পর্যন্ত পুলিশ যাতে গ্রেপ্তার না করে সেই নির্দেশ দিয়ে দেন। জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা তো সবসময় আপনাদের কাছেই আসি। আপনাদের যদি একটা আদেশ থাকে, যাতে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার না করে। প্রয়োজনে একটা মৌখিক আদেশ দেন।
এ সময় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়টি উল্লেখ করে বিচারপতি বলেন, এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কারা করেছে তা জানি না। কিন্তু সারাদেশের মানুষ এগুলো ভালোভাবে নিচ্ছে না।
এ সময় আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের বক্তব্যকে একাডেমিক বক্তব্য উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেন, যা বলছেন তার সবই একাডেমিক, আমরা একাডেমির মধ্যে আছি, প্র্যাকটিক্যালি নেই।
এক পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- আমরা অর্ডার পাস করেছি তারপরও বিভিন্ন জায়গায় আসামি ধরা হয়েছে। টাকা-টুকা চাইছে এমন ধরনের ঘটনাও আছে। ল’য়ার সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তারপরও ধরে নিয়ে কোর্টে প্রডিউস করেছে। রিমান্ডেও পাঠিয়েছে। হাইকোর্টের অনলাইনে আদেশ আছে, সেটাও দেখে না।
পরে আদালত সোমবার শুনবেন বলে জানিয়ে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালতকে আমরা বলেছি আমরা কোর্ট অফিসার। আমরা লিগ্যাল প্রটেকশনের জন্য আপনাদের এখানে এসেছি। ওনারা বলেছেন, আগামীকাল জামিন আবেদন শুনবেন। তখন আমরা আবেদন করেছি অন্তত মৌখিকভাবে হলেও আপনারা একটি আদেশ দেন। যাতে আইনজীবীদের গ্রেপ্তার না করা হয়। তখন আদালত বলেছেন, এর আগে কয়েকজনকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার না করতে বলেছিলাম। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে টর্চার করা হয়েছে এটা আমরা শুনেছি। ল’ইয়ার সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আগের বিচার ব্যবস্থা যেভাবে ছিল এখন সেভাবে তো চলছে না।
এর আগে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চে জামিন আবেদন নিয়ে গেলেও সেই কোর্ট তাদের জামিন আবেদন শুনেন নাই। পরে তারা হাইকোর্টের এই বেঞ্চে যান।
তারেক দম্পতির বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মো. রফিক উল্লাহ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় ১৮ আইনজীবীর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত