ঘটনাস্থল : ঢাকার মিরপুরের আহমদ নগর পাইকপাড়া
কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে আপন ভাইকে মামলায় হয়রানি
থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও মিলছেনা প্রতিকার
ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানী ঢাকার মিরপুঁঁর থানার ৩৬৩ নং আহমদ নগর পাইকপাড়া এলাকায় আপন ভাই-বোনদের সাথে ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা শওকত আলী খানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে স্ত্রী ও শাশুড়ির প্ররোচনায় তিনি আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে তাদের দমন করারও অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় এমপি বরাবর লিখিত অভিযোগ এবং মিরপুর মডেল থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি করেও কোন প্রতিকার পাইনি ভুক্তভোগী ভাই-বোনেরা। এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা শওকত আলী খান নিজের পিঠ বাঁচাতে এবং ভাই-বোনদের দমন করতে ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুরু করেছেন। এঘটনায় তার ভুক্তভোগী ভাই-বোনেরা দিশেহারা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ভুক্তভোগী আঞ্জুমান আরা খানম (কনক), কাওছার আলী খান (কল্লোল) ও হায়দার আলী খান (বহুলুল) এ লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ঢাকার ১৮৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বরাবর লিখিত অভিযোগ ও মিরপুর থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করাঁ হয়ৃ, ওই এলাকার বিশিষ্ট রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী সুরুজ আলী খানের ওয়ারিশ আঞ্জুমান আরা খানম (কনক), কাউছার আলী খান (কল্লোল), হায়দার আলী খান (বহুলুল)সহ ৫ ভাই-বোন। কিন্তু করোনা মহামারিতে তাদের সকলের বড়বোন শাহানাজ বেগম (পিনু) মৃত্যুবরন করেন।
২০০১ সালে সুরুজ খান মৃত্যুবরন করেন। পরে ২০০৬ সালে সুরজ খানের সহধর্মিণীও মৃত্যুবরন করেন। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর ভাইদের মধ্যে বড় শওকত আলী খান (বিপুল)কে অন্যান্য ভাই-বোনেরা অভিভাবক হিসেবে মেনে চলতেন। সেই হিসেবেই পরিবারের সকল বিষয় তার নেতৃত্বেই পরিচালিত হতো। কিন্তু বড় ভাই শওকত আলী খান (বিপুল) তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে ভুক্তভোগী ভাই-বোনদের
বিভিন্নভাবে প্রতারিত করে আসছে। বর্তমানে তারা এসকল অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চাইলে বিভিন্ন উপায়ে তাদেরকে হয়রানি ও অপমানিত করার চেষ্টা করে আসছে। এমনকি দিন যতই যাচ্ছে ততই বিষয়গুলো আরো জটিল আকার ধারন করছে।
এই শওকত আলী খান (বিপুল) অর্থলোভী খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এক নারীকে বিবাহ করে৷ বিবাহ করার পরে এখন সে তার স্ত্রী রোজলীন বিশ্বাস (ববি) তার পিতা-শান্তি এন্থনী বিশ্বাস ও মাতা পুতুল বিশ্বাসকে নিয়ে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন অবস্থায় পৌছিয়েছে তাদের অত্যাচারে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। যার কারনে তাদের এসকল কর্মকান্ডে আর্থিক, মানবিক ও সামাজিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা এসকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে সুবিচার পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এই প্রতারক শওকত আলী খান বিপুলের প্রতারনার বিবরন : ভুক্তভোগীদের মরহুম পিতা সুরুজ খানের পুকুড় পাড়ে ৪ কাঠার একটি জমি ছিলো। যা তাদের সকলের অনুমতিক্রমে প্রায় ১ কোটি টাকা বিক্রি করে। যা থেকে অর্জিত সমুদয় টাকা সে নিজে ভোগ করে। বাকি ৪ ভাই-বোনকে কোন টাকা দেয়নি।
বাবার নামে মসজিদের পার্শ্বে জমিতে বেশ কিছু দোকান ও ঘর রয়েছে। সেখান থেকে প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ আয় হয় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বছরে দাড়ায় ১৮ লাখ টাকা এবং ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে দাড়ায় প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে উপার্জিত অর্থ থেকেও তিন ভাইবোনকে কোন টাকা দেয়নি।
প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ছিলো আনুমানিক ৬০ হাজর টাকা। যা এক বছরে হয় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট টাকার পরিমান হয় প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
ওয়াদুদ নামের একজনের সাথে একটি জমি নিয়ে ভুক্তভোগীদের বিরোধ চলে আসছিলো। যা বিভিন্ন দেন দরবারের মাধ্যমে ১২ কাঠা জমি পায়। সেই জমি বড় ভাই শওকত আলী খান (বিপুল) নিজ নামে রেজিষ্ট্রি করে নেয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এলাকার ডিস ব্যবসা তিন ভাই মিলে প্রতিষ্ঠা করে। অভিভাবকত্বের মাধ্যমে সে তার নিজের নামে করে নেয়।
যা থেকে প্রতি মাসে আয় প্রায় ৮ লাখ টাকা। বছরে ৯৬ লাখ টাকা এবং ২০ বছরে হয় ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।
মরহুম পিতার মিরপুর ১ নাম্বারে একটি বানিজ্যিক প্লট রয়েছে। সেখানে একটি বহুতল ভবন নির্মান কাজ চলছে। উক্ত জমিতে প্রথমে ডেভেলপার হিসেবে একটি কোম্পানীকে উন্নয়ন করার জন্য দেওয়া হয়। তাদের নিকট থেকে সাইনিং মানি বাবদ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা নেয়। ওই কোম্পানী কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় পরবর্তিতে দেয়া হয় এজি প্রোপার্টি নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে। এজি প্রোপার্টি থেকে সাইনিং মানি বাবদ নেওয়া হয় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই দুই কোম্পানী থেকে নেওয়া হয় মোট ৪ কোটি টাকা। সমুদয় টাকা বাকী ভাই বোনদেরকে না দিয়ে বড় ভাই প্রতারক শওকত আলী খান (বিপুল) আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া এজি প্রোপার্টি সময়মত কাজ শেষ করতে না পারায় জরিমানার অংশ হিসেবে নেওয়া হয় ৮০ লাখ টাকা। মার্কেটের দোকানের অগ্রিম বাবদ স্বপ্ন সুপার সপ থেকে নেওয়া হয় ১ কোটি টাকা, টিভিএস অটো থেকে অগ্রিম বাবদ নেওয়া হয় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, টুনটুন নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অগ্রিম বাবদ নেওয়া হয় ৭০ লাখ টাকা, স্যামসাং থেকে অগ্রিম বাবদ নেওয়া হয় ২৫ লাখ টাকা, হামদর্দ থেকে অগ্রিম বাবদ নেওয়া হয় ১৯ লাখ টাকা। অগ্রিম বাবদ টাকার পরিমান ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। যা সম্পূর্ন টাকা তাদের বড় ভাই শওকত আলী খান (বিপুল) একক ভাবে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৩ এবং ২০০৪ সালের দিকে বিভিন্ন মামলা পরিচালনা এবং ব্যবসা বানিজ্য করার জন্য পৈত্রিক বাড়ি ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে বড় ভাই শওকত আলী খান (বিপুল) কে প্রায় ১ কোটি টাকা লোন উত্তোলন করে দেওয়া হয়। যা পরবর্তীতে মার্কেট থেকে অগ্রিম পাওয়া টাকা থেকে পরিশোধ করা হয়।
ভুক্তভোগী কাওছার আলী খান ও হায়দার আলী খান বিভিন্ন সময় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে ধারদেনা করেও বিভিন্ন বিপদে (শওকত আলী খান বিপুল) কে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু সবকিছুই বর্তমানে শওকত আলী খান অস্বীকার করে সে তার বে-ধর্মী স্ত্রী রোজলীন বিশ্বাস) ও শ্বাশুরী (পুতুল বিশ্বাস)কে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
এসকল বিষয়ে সদয় অবগতির জন্য অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছিলো, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মিরপুর জোন গোয়েন্দা বিভাগ ডি,সি পুলিশ।
এছাড়া ভুক্তভোগী কাওছার আলী খান তার বড় ভাই প্রতারক শওকত আলী খান বিপুল ও তার বিধর্মী স্ত্রী রৌজলিন বিশ্বাস ববি এর বিরুদ্ধে জমিজমা সংক্রান্ত ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। একইভাবে ভুক্তভোগী মিসেস আঞ্জুমান আরা খানম কনক মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তার আপন ভাই শওকত আলী খান বিপুল ও রৌজলিন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে।
জিডিতে বলা হয়েছে, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া পারিবারিক সকল সম্পত্তি ও মিরপুর ১নং-এ অবস্থিত বহুতল বিশিষ্ট শপিং কমপ্লেক্স সঠিক ভাবে পরিচালনা করবে এবং ৩ ভাই-বোনের ভিতরে অর্জিত সমস্ত অর্থ সঠিক এবং ন্যায় সংঘত ও সততার সাথে বন্টন না করে ও প্রাপ্য সম্পত্তি এবং ভাড়ার টাকার হিসাব করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে বে-ধর্মী স্ত্রী ও স্বামী শওকত আলী খান তালবাহানা কথাবার্তাসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও জীবন নাশের হুমকি প্রদান করে।
যেকোন সময় ভাই-বোনেরা বড় ধরনের ক্ষতি সাধনের আশংকায় রয়েছেন।
এ ঘটনায় জিডি নং, ১২৯১ তাং ২৩-৮-২০২৪ইং। এছাড়াও প্রতারক ভাইয়ের বিরুদ্ধে আরও একাধিক জিডি ও অভিযোগ রয়েছে।
এখানেই শেষ নয় : কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে কাওসার আলী খান (কল্লোল) ও তার স্ত্রী, বোন আঞ্জুমান আরা খান কনক, তার বোনের স্বামী, ছোট ভাই হায়দার আলী খান ও তার স্ত্রীকে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে।
কারন পিতার অর্থ-সম্পত্তি যাতে ভাই-বোনদের না দেওয়া লাগে সে কারনে কিছু অসাধু পুলিশকে ম্যানেজ করে অর্থের বিনিময়ে নিয়মিত হয়রানি করছে বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ।
এমনকি সম্পত্তি আত্মসাৎকারী এই প্রতারক ভাই শওকত আলী খান ও তার স্ত্রী এবং শাশুড়ীর কুবুদ্ধিতে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে খুন করে সমস্ত সম্পত্তি ভোগদখল করে আয়াত্তে নেওয়ার লিপ্ত রয়েছে।
তাছাড়া ৫ আগষ্টের পর সে তার লেবাজ পরিবর্তন করে অর্থ দিয়ে বিএনপির নেতা কর্মীদের সাথে ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করে প্রচার করেন সে, এখন নব্য বিএনপি নেতা।
এই শওকত একজন মাঝার ভক্ত মুসলমান ঘরের সন্তান হয়ে একজন খৃষ্টান ধর্ম কুচক্রী নারীকে বিয়ে করে শশুর-শাশুড়ী’র বুদ্ধি পরামর্শে নিজের ভাইকে কয়েকবার খুন করার জন্য উদ্যোগ নেন এই শওকত আলী খান ও তার বিধর্মী স্ত্রী।
খুন এবং মিথ্যা মামলার ভয়ে ভুক্তভোগীরা বর্তমান বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
নির্যাতিতরা এই ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পেতে বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন। সেইসাথে তারা ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।