
হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী চিত্রানদীতে আগামী ১৪ অক্টোবর এস এম সুলতান নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (১৩ সেপ্টম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতু থেকে এস এম সুলতান সেতু পর্যন্ত এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বরাবরের মতো পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা নৌকা বাইচে অংশ নেবে।
নৌকা বাইচ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আশফাকুল হক চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতী শীল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দোলন মিয়া, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোঃ হাসানুজ্জামান হাসান, নড়াইল জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র কোষাধ্যক্ষ সিনিয়র সাংবাদিক শেখ ফসিয়ার রহমান প্রমূখ।
বিশ্ববরেন্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৯তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। শোকের মাস আগস্টের কারনে নৌকাবাইচ প্রতিবছরই পিছিয়ে করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবার নাম মেছের আলী ও মা মাজু বিবি। শিল্পীর মৃত্যুর পর স্মৃতিসংগ্রহশালা, শিশুস্বর্গ নির্মাণ, আর্ট কলেজসহ বেশ উন্নয়ন হয়েছে। তিনি নড়াইলবাসীর কাছে ‘লাল মিয়া’ বলে পরিচিত। বরেণ্য এই শিল্পীর মৃত্যুর পর তার বাসভবন ঘিরে গড়ে উঠেছে সুলতান স্মৃতিসংগ্রহশালা, শিশুস্বর্গ, কলেজসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড। দীর্ঘ জীবনে তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবির মদ্যে রয়েছে “ধানকাটা”, “ ধান ঝাড়া”, “ জলকে চলা”, “ চর দখল”, “গ্রামের খাল”, “মৎস শিকার”, “গ্রামের দুপুর”, “নদী পারা পার”, “ধান মাড়াই”, “জমি কর্ষনে যাত্রা”, “মাছ ধরা”, “নদীর ঘাটে”, “ধান ভানা”, “গুন টানা”, “ফসল কাটার ক্ষনে” , “শরতের গ্রামীন জীবন”, “শাপলা তোলা” মত বিখ্যাত সব ছবি।
চিত্রশিল্পের অনন্য অবদানের জন্য এসএম সুলতান ১৯৮২ সালে পেয়েছেন একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার পেয়েছেন। এদিকে, ২০০১ সাল থেকে সুলতান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একজন গুণী চিত্রশিল্পীকে সুলতান পদক দেয়া হচ্ছে।
বরেণ্য এই শিল্পী ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নড়াইল শহরের কুড়িগ্রাম এলাকায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।

