আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৩ হাজার সদস্য মোতায়েন
জন্মভূমি ডেস্ক : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) তৃতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার। ভোটগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ চলবে। বুধবার সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে ইভিএম মেশিনসহ ৪৬ আইটেমের সামগ্রী বিতরণ কেন্দ্রে কেন্দ্র পৌছানো হয়েছে। ১১ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি ভোটারের জন্য ৪৮০টি কেন্দ্রের তিন হাজার ৪৯৭টি কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য পাঁচ হাজার ২৪৬টি ইভিএম মেশিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গত ৯ মে থেকে ২৩ মে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত টানা ১৫ দিন ধরে চলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দিনরাত প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য ৪৮০ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৪৯৭ জন সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার, ৬ হাজার ৯৯৪ জন পোলিং অফিসারসহ মোট ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৩৩৩টি প্রতিষ্ঠানে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে।
নির্বাচনে মোট ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং ১২৯টি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভোটের দিন সিটি করপোরেশন এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনীর ১৩ হাজার সদস্য মেতায়েন থাকবে। গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অনুষ্ঠিতব্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনীর ১৩ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয় প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।’
মোল্যা নজরুল বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ থেকে ২২ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করছি, সবার প্রচেষ্টায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, অতি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রসহ একজন এসআই অথবা এএসআই ও চারজন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ একজন অঙ্গীভূত আনসার পিসি, একজন অস্ত্রসহ আনসার এপিসি, লাঠিসহ চারজন নারী ও ৬ জন পুরুষ আনসার/ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৭ জন মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রসহ একজন এসআই অথবা এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ একজন অঙ্গীভূত আনসার পিসি, একজন অস্ত্রসহ এপিসি, লাঠিসহ চারজন নারী ও ৬ জন পুরুষ আনসার/ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৬ জন মোতায়েন থাকবে।
নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র্যাব দায়িত্ব পালন করবে। এরমধ্যে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে একটি করে মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রতিটি থানা এলাকায় একটি করে মোট ৮টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে র্যাবের মোট ৩০টি টিম থাকবে। নগরীর ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ১৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে।
এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী এলাকায় আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়। এদিন সব ব্যাংকও বন্ধ থাকবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। দ্বিতীয় সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ২৬ জুন। এবার তৃতীয়বারের মতো এ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৫ মে।
মেয়র পদে লড়ছেন যারা:
নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো. আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম। স্বতন্ত্র মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম লড়ছেন।