By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
Reading: আজ মহা অষ্টমী কুমারী পূজা ও তার সংক্ষিপ্ত তাৎপর্য
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > আজ মহা অষ্টমী কুমারী পূজা ও তার সংক্ষিপ্ত তাৎপর্য
সাতক্ষীরা

আজ মহা অষ্টমী কুমারী পূজা ও তার সংক্ষিপ্ত তাৎপর্য

Last updated: 2025/09/30 at 4:24 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ‌বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহা-অষ্টমী আজ শুক্রবার। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় রাজধানীসহ সারা দেশে ভক্ত ও পূজারীরা পূজা-অর্চনার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করবেন। নতুন কাপড় পরে বাহারি সাজে মন্দিরে মন্দিরে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন তারা। তবে অষ্টমীর মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। একই দিনে হবে সন্ধি পূজাও। বেলা ১১টায় সারাদেশে সকল পূজা মন্ডপে ‌।অনুষ্ঠিত হবে এই কুমারী পূজা। কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী নারীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়।
গতকাল ছিল মহাসপ্তমী। সেদিন ভক্তরা দেবীর আরাধনায় পূজামণ্ডপগুলোতে দিনভর ভিড় জমান। গতকাল সকালে পূজার শুরুতেই দেবী দুর্গার প্রতিবিম্ব আয়নায় ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে স্নান করান। এরপর করা হয় নবপত্রিকা স্থাপন। পূজা শেষে হাতের মুঠোয় ফুল, বেলপাতা নিয়ে ভক্তরা মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে এবারের পূজার প্রথম অঞ্জলি দেন দেবীর পায়ে। করজোড়ে কাতর কণ্ঠে জগজ্জননীর কাছে শান্তিময় বিশ্বের জন্য প্রার্থনা করেন ভক্তরা। ঢাকের বাদ্য, কাঁসর ঘণ্টা কিংবা শঙ্খধ্বনিতে দেবীর আরাধনা করেন তারা। অন্যদিকে বিকেল থেকেই রাজধানীর মন্দিরগুলোতে ভক্তদের ভিড় বাড়তে থাকে। ঢাক-কাঁসরের বাদ্য, ধূপের সুরভিত ধোঁয়া, আরতির নৃত্য, ভক্তিগীতি, ভক্তদের প্রণাম আর পরস্পরের প্রতি শুভেচ্ছা বিনিময়ে মন্দিরগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ আর কাঁসর ঘণ্টা বাজানোর মধ্য দিয়ে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা জমে উঠেছে ঢাকা রাজশাহী ‌চট্টগ্রামে খুলনা বরিশাল রংপুর সিলেট ময়মনসিং বিভাগ সহ সারাদেশে । গতকাল সকালে দেবী দুর্গার চক্ষুদান, নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গুণীজন সংবর্ধনা ও আলোচনা সভার আয়োজন ছিল কিছু মণ্ডপে।

এবারের দুর্গাপূজায় নানা শঙ্কার আশঙ্কা করা হলেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শুরু হয়েছে উৎসব। সরেজমিনে দেশের বিভিন্ন প্রধান ‌প্রধান পূজামণ্ডপ আন্দরকিল্লার জেএম সেন হলে গেলে গতকাল দুপুর ২টায় দেখা যায়, পূজার্থীদের ভিড়। মণ্ডপের আশপাশ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনা করা হয়েছে। প্রবেশ পথ ও বের হওয়ার পথ আলাদা করা হয়েছে। এ মণ্ডপে মেটাল ডিটেক্টর গেট স্থাপন করা হয়েছে। মণ্ডপের ভেতরে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আনসার বাহিনীও দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়া এ মণ্ডপ থেকে বের হওয়ার সময় সড়কে র‌্যাবের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ জেএম সেন হল পূজা মণ্ডপটি নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা। এভাবে চট্টগ্রামের জেলা ও উপজেলায় প্রত্যেকটি মণ্ডপের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি অথবা দুর্গাষ্টমীর মধ্যে যে কোনও একটি ব্রত পালন করলে মহা পুণ্যফল লাভ হয়। তাই জীব মাত্রই উপরিউক্ত তিনটি ব্রতের মধ্যে যে কোনও একটি ব্রত অবশ্য‌ই পালন করা উচিত। অর্থাৎ এই তিন ব্রতই এক সমগোত্রীয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জন্মাষ্টমী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মর্ত্যধামে অবতীর্ণ হওয়ার তিথি,অন্যদিকে শিবরাত্রিও দেবাদিদেব মহাদেব ও পার্বতীর বিবাহ তিথি যা পালন করলে বিশেষ ফলপ্রাপ্ত হওয়া যায় কিন্তু দুর্গাষ্টমী? দুর্গাষ্টমীতে এমন বিশেষ কী ঘটনা ঘটেছিল যে কারণে সনাতন শাস্ত্রে জন্মাষ্টমী এবং শিবরাত্রির সঙ্গে এই দুর্গাষ্টমীর  তুলনা করা হয়েছে? তা জানতে গেলে অবশ্যই জানতে হবে দুর্গা পুজোয় সন্ধিক্ষণ কোন মুহুর্তটাকে বলে আর দুর্গা অষ্টমীর মাহাত্ম্য‌ বা তাৎপর্য কী?
প্রতিবছর প্রচুর মানুষ ভক্তিযুক্ত চিত্তে সন্ধিপুজোর উপোস রাখেন। এই বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩রা অক্টোবর সোমবার হলো মহা অষ্টমী আর মহা অষ্টমীর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ তিথি হল সন্ধিক্ষণ। অষ্টমী তিথির শেষ ধাপ এবং নবমী তিথির প্রথম ধাপকে বলা হয় মহা সন্ধিক্ষণ অর্থাৎ অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট হলো দেবী দুর্গার সন্ধি পুজোর সময়।

দুর্গা অষ্টমীর ব্রত সম্পর্কে বলা হয় যে, এই ব্রত প্রতিটি মানুষের অতি অবশ্যই পালন করা উচিত। কারণ এই ব্রত অত্যন্ত পফলদায়ী।
সনাতন শাস্ত্রে বলা হয় ব্রহ্মা যখন বর দিয়েছিলেন মহিষাসুরকে যে ত্রি জগতের কোন পুরুষ তাকে বধ করতে পারবে না তখন নিজেকে চির অবোধ্য ও অমর অক্ষয় ভেবে উল্লাস করতে শুরু করেছিলেন মহিষাসুর। তিনি স্বর্গ, মর্ত্য পাতাল জুড়ে তার তান্ডব লীলা শুরু করেছিলেন, মহিষাসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সকল দেবতারা স্বর্গ থেকে পালিয়ে ত্রিদেবের শরণাপন্ন হন।
ত্রিদেব তখন যুক্তি করে পরামর্শ দেন যে সকলের শক্তিকে একত্রিত করতে এবং তার মধ্য দিয়েই আদ্যা শক্তি মহামায়ার আবির্ভাব হবে। এরপর সকলের সম্মিলিত শক্তির প্রভাবে আবির্ভূতা হন আদ্যা শক্তি মহামায়া এবং তিনি দশপ্রহরনধারিনী এবং দশ অস্ত্রে সজ্জিতা হয়ে মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উদ্যত হন।
পুরাণ অনুযায়ী দীর্ঘ নয় দিন ও নয় রাত ধরে দেবী দুর্গা ও মহিষাসুরের মধ্যে দীর্ঘ লড়াই হয়েছিল এবং তারপর দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুরমর্দিনী। এই সন্ধিপুজোর সময়ে দেবী দুর্গা রক্তবীজের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন কিন্তু কিছুতেই রক্তবীজকে পরাস্ত করতে পারছিলেন না কারণ রক্ত বীজের শরীর থেকে এক বিন্দু রক্ত মাটিতে পড়ে নতুন অসুরের জন্ম হচ্ছিল। এরপর অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে দেবী দুর্গার ত্রিনয়ন থেকে মা কালী আবির্ভূতা হোন এবং আবির্ভূত হওয়ার পর মুহুর্তেই দেবী কালি রক্তবীজের শরীরের সকল রক্ত পান করে তার নিধন করেন। সনাতন শাস্ত্রে বলা হয় যে সন্ধিক্ষণে দেবীর অন্তর থেকে সকল স্নেহ মায়া মমতার অবসান হয় তাই সন্ধিপুজো চলার সময় মায়ের দৃষ্টিপথের সম্মুখে কাউকে রাখা উচিত নয়। দেবীর দৃষ্টি পদ পরিষ্কার রাখবার কথা এই সময় বলা হয় এবং সন্ধিপুজোর শেষ ধপে অর্থাৎ শেষ চব্বিশ মিনিটে বলিদান করা হয়।

এই বলিদান এর ক্ষেত্রে কোথাও ছাগল বলি হয়। কোথাও বা আখ, কলা, চাল কুমড়ো ইত্যাদি বলি হয়। সন্ধি পুজোর তাৎপর্য সম্পর্কে বলা হয় যে, সন্ধিপুজো করলে সারা বছরে দুর্গাপুজোর ফল লাভ হয়। তাই সংযমী চিত্তে যে মানুষ ভক্তি সহকারে নিষ্ঠা যোগে উপবাস করে সন্ধি ব্রত পালন করে সে যম যাতনা থেকে মুক্তি পায়।
নবপত্রিকা বা কলা বউ দুর্গা পুজোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেবী দুর্গার পুজোর সঙ্গেই ওতপ্রোত জড়িয়ে নবপত্রিকা। নবপত্রিকার পুজো আসলে ইঙ্গিত দেয় মানুষের উৎসব পালন এবং ধর্মাচরণের বহু প্রাচীন রীতির। তাই দুর্গাপুজোর যেমন মাহাত্ম্য, তেমনই স্বতন্ত্র তাৎপর্য আছে নবপত্রিকার পুজোরও। নবপত্রিকা বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। কিন্তু এই প্রতীকটি কী বোঝায়, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। কলা বউ গণেশের বউ নয়। অনেকে ভাবেন, কলা বউ হলেন গণেশের স্ত্রী। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কলা বউ আসলে প্রকৃতির একটি প্রতীক।
নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নটি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নটি পাতা নয়, নটি উদ্ভিদ। যা প্রকৃতির বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করে। এগুলি হল- দুর্গা পুজোয় নবপত্রিকার তাৎপর্য নবপত্রিকা বা কলা বউ দুর্গা পুজোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেবী দুর্গার পুজোর সঙ্গেই ওতপ্রোত জড়িয়ে নবপত্রিকা। নবপত্রিকার পুজো আসলে ইঙ্গিত দেয় মানুষের উৎসব পালন এবং ধর্মাচরণের বহু প্রাচীন রীতির। তাই দুর্গাপুজোর যেমন মাহাত্ম্য, তেমনই স্বতন্ত্র তাৎপর্য আছে নবপত্রিকার পুজোরও। নবপত্রিকা বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। কিন্তু এই প্রতীকটি কী বোঝায়, তা নিযয়ে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। কলা বউ গণেশের বউ নয়। অনেকে ভাবেন, কলা বউ হলেন গণেশের স্ত্রী। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কলা বউ আসলে প্রকৃতির একটি প্রতীক।
নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নটি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নটি পাতা নয়, নটি উদ্ভিদ। যা প্রকৃতির বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করে। এগুলি হল- কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান। মা দুর্গা প্রকৃতির এক অংশ। তাই মা দুর্গারই এক রূপ হিসেবে কলা বউকে পুজো করা হয়।
একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে স্বপরিবার প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পুজো করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ।
দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। বেলগাছের নিচে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের পর আসে মহাসপ্তমী। বোধন মানে দেবীকে ঘুম থেকে জাগানো। শাস্ত্রমতে, আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত দেবদেবীদের ঘুমানোর সময়। ঘুম ভাঙিয়ে দেবীকে মাঝপথে তোলা হয়, তাই অকালবোধন। সেই জাগরণ বা বোধনের পর ঢাকঢোল কাঁসরঘন্টা বাজিয়ে সকালেই দেবীপূজার শুরু। এই সূচনাকে বলে নবপত্রিকা প্রবেশ। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমাস্থ দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হতে থাকে।
বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল, নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার সম্মুখে দেবী চামু-ার আবাহন ও পুজো করা হয়। নবপত্রিকার ৯টি উদ্ভিদ আসলে দুর্গার ৯টি বিশেষ রূপের প্রতীক রূপে কল্পিত হয়।
মহাসপ্তমীর দিন সকালে কাছের কোনো নদী বা জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত বা পরিবারের জ্যেষ্ঠ কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান নদীতে। তার পেছনে থাকে ঢাক বাদকের দল। নারীদের হাতে থাকে শঙ্খ এবং উলুধ্বনি। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী, মন্ত্রোচ্চারণ করে নবপত্রিকা নিয়ে ব্যক্তিটি জলাশয়ে ডুব দেন। এরপর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তাতে দেওয়া হয় সিঁদুরের টিপ। তারপর পূজাম-পে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দুর্গা প্রতিমার ডান দিকে অর্থাৎ গণেশের পরই একটি কাঠের সিংহাসনে স্থাপন করা হয়। পূজো ম-পে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল অনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। এমনকি, পূজার বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা, দুর্গা ও বাকী প্রতিমার সঙ্গে পূজিত হতে থাকে।
শ্বেত অপরাজিতার লতা ও হলুদ রঙের সুতোয় বাঁধা নয়টা গাছ কলা, ডালিম, ওল কচু, জয়ন্তী, অশোক, হলুদ, বেল, ধান, মানকচু। এই নয়টা গাছ, লতাপাতা বাংলার জলে-জঙ্গলে অক্লেশে হয়ে থাকে। দুর্গাপ্রতিমার ডান পাশে নবপত্রিকার এই কলাগাছ স্বাভাবিকভাবে নুইয়ে পড়ে। ফলে বাঙালি একে গণেশের বউ বা কলাবউ বলে। আদতে গণেশের সঙ্গে কলাবউয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এই অযতœলালিত উদ্ভিদগুলো সবই দুর্গারই রূপ। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দেবীর অধিবাস, বোধনের পাশাপাশি নবপত্রিকারূপী দুর্গাকে আবাহন করতে হয়। প্রতিটি গাছেই দেবীর অধিষ্ঠান কলায় ব্রহ্মাণী, কচুতে কাঔলী, হলুদগাছে দুর্গা, জয়ন্তীতে কার্তিকী, বেলে শিব, ডালিমে রক্তদন্তিকা, অশোকে শোকরহিতা, মানকচুতে চামু-া ও ধানে লক্ষ্মী।
এই নয় দেবী একত্রে নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা নামে নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ মন্ত্রে পূজিতা হন। গবেষকদের মতে, নবপত্রিকার পুজো প্রকৃতপক্ষে শস্যদেবীর পুজো। এই শস্য-মাতা পৃথিবীরই রূপভেদ, সুতরাং আমাদের জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে আমাদের দুর্গাপুজোর ভিতরে এখনও সেই আদিমাতা পৃথিবীর পুজো অনেকখানি মিশে রয়েছে।
নবপত্রিকার প্রধান গাছ হলো কলাগাছ, যা ফার্টিলিটির প্রতীক। আবার কচু আশ্বিনের প্রথমে হয়। বাঙালির পেট ভরায়। আবার একই ধরনের আর এক আনাজ মানকচু। শরতের রোদ্দুর পেলে এটাও খুব সুস্বাদু হয়। ফলের মধ্য আছে বেল ও দাড়িম্ব অর্থাৎ ডালিম। বেলপাতা শিব এবং পার্বতীর প্রিয় এবং ওষুধি গুণও আছে। ডালিম আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত ভালো ফলে। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে বা শরীর দুর্বল হলে ডালিম দারুণ কাজ করে।
জয়ন্তী ও অশোক গাছদুটি আয়ুর্বেদের মহৌষধের কাজ করে। আবার জয়ন্তী দুর্গার একটি নাম। এর বীজ স্ত্রীরোগ নিরাময়ের কাজে লাগে। এরও ফলনও হয় আশ্বিনের শেষে। এছাড়া আছে হলুদ। কাঁচা হলুদ থেকে পাকা হলুদ শরীরের পক্ষে যেমন ভাল, তেমন বহু পূজা উপাচারে ব্যবহৃত হয়। এর থেকেই বোঝা যায় এই সময়ে ফুলফলে ভরে এমন ফলদায়িনী বৃক্ষের পাতার সমন্বয় হল নবপত্রিকা। আদতে শস্যের দেবী এবং মানুষের উপকারী গাছ। যা বাংলার মানুষদের অতিসাধারণ খাদ্য।
নবপত্রিকা স্নানের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির পুজো করা হয়। এটি মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষ প্রকৃতিরই একটি অংশ এবং আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বসবাস করা উচিত।

কুমারী পূজা হলো তন্ত্রশাস্ত্রমতে অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়ের পূজা। আরেকটু স্পষ্ট করে বলা যায়, হিন্দু তন্ত্রশাস্ত্রমতে ষোলো বছরের কম বয়সী এমন কন্যা, যার আদ্য ঋতুস্রাব হয়নি এবং পুরুষ সংসর্গে যোনি বিদীর্ণ হয়নি— এমন কন্যাকে দুর্গার দেবীর প্রতীকে পূজা করার নাম হলো কুমারী পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অংশ হিসেবে কুমারী পূজা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা এবং অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে এবং কামাখ্যাদি শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে কুমারী পূজার প্রচলন কমে গেছে।

শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বা কোলাসুরকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে। উল্লেখ্য, কোলাসুর নামক অসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে নেয়। কোলাসুর স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী দেবতাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী মানবকন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করেন কুমারী অবস্থায় কোলাসুরকে হত্যা করেন। পুনর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।

প্রতিবছর দুর্গাদেবীর মহাষ্টমী পূজাশেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মতান্তরে নবমী পূজার দিনও এ পূজা অনুষ্ঠিত হতে পারে।

পুরোহিতদর্পণ প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি এবং মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণিত হযে়ছে। বর্ণনানুসারে কুমারী পূজায় কোন জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যে-কোন কুমারীই পূজনীয় । তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র প্রচলিত।

এক্ষেত্রে এক থেকে ষোলো বছর বয়সী যে-কোনো কুমারী মেয়ের পূজা করা যায়। অনেকের মতে দুই বছর থেকে দশ বছরের মেয়েদের পূজা করা যায়।

বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে সকল বয়সের কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়, এগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো—
১. এক বছরের কন্যাকে বলা হয় সন্ধ্যা, ২. দুই বছরের কন্যাকে বলা হয় সরস্বতী, ৩. তিন বছরের কন্যাকে বলা হয় ত্রিধামূর্তি, ৪. চার বছরের কন্যাকে বলা হয় কালীকা, ৫. পাঁচ বছরের কন্যাকে বলা হয় সুভগা, ৬. ছয় বছরের কন্যাকে বলা হয় উমা, ৭. সাত বছরের কন্যাকে বলা হয় মালিনী, ৮. আট বছরের কন্যাকে বলা হয় কুব্জিকা, ৯. নয় বছরের কন্যাকে বলা হয় কালসন্দর্ভা, ১০. দশ বছরের কন্যাকে বলা হয় অপরাজিতা, ১১. এগারো বছরের কন্যাকে বলা হয় রূদ্রাণী, ১২. বারো বছরের কন্যাকে বলা হয় ভৈরবী, ১৩. তেরো বছরের কন্যাকে বলা হয় মহালক্ষ্মী, ১৪. চৌদ্দ বছরের কন্যাকে বলা হয় পীঠনায়িকা, ১৫পনেরো বছরের কন্যাকে বলা হয় ক্ষেত্রজ্ঞা, ১৬.ষোলো বছরের কন্যাকে বলা হয় অন্নদা বা অম্বিকা।

কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো— নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় ক্রিয়া সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা করা হয়। পৌরাণিক কল্পকাহিনিতে বর্ণিত আছে, এ ভাবনায় ভাবিত হওয়ার মাধ্যমে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজের স্ত্রীকে ষোড়শী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণের মতে— সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে সাধারণ ৫ থেকে ৭ বছরের একটি কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে পূজা করা হয়। চণ্ডীতে বলা হয়েছে— “যা দেবী সর্বভূতেষু; মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্য মধ্যে মায়ের রূপ”

হিন্দু ধর্মে বলা হয়- দেবকী কুমারী প্রতীকে হিন্দুদের মাতৃরূপে অবস্থিত। সর্বব্যাপ ঈশ্বরেরই মাতৃভাবে আরাধনা করার জন্য কুমারী পূজা করা হয়। আবার কুমারী পূজার মাধ্যমে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নিজেকেই শ্রদ্ধা জানায়।

জন্মভূমি ডেস্ক September 30, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদের ফলদান
Next Article পাইকগাছায় নারী সহ দুই শিশু অচেতন হয়ে হাসপাতালে ভর্তি

দিনপঞ্জি

September 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
« Aug    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
সাতক্ষীরা

তালায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 minutes ago
বাগেরহাট

ফকিরহাটে মহাষ্টমীতে পুস্পাঞ্জলী দিতে মন্ডপে ভক্তদের ভিড়

By জন্মভূমি ডেস্ক 29 minutes ago
জাতীয়

দুর্গাপূজার ছুটি নিয়ে এনবিআরের জরুরি নির্দেশনা

By জন্মভূমি ডেস্ক 46 minutes ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

তালায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 minutes ago
সাতক্ষীরা

তালার মাগুরা দূর্গা মন্দিরের আকর্ষণ ১২ ফুট লম্বা রাবণ মূর্তি

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম.এ জলিলের ইন্তেকাল

By জন্মভূমি ডেস্ক 8 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?