মোঃ মোস্তফা কামাল, লোহাগড়া : আজ নড়াইলের লোহাগড়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শুরুতেই নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত হয়েছিল। তবে লোহাগড়া মুক্তির স্বাদ পায় ৮ ডিসেম্বর। সেদিন লোহাগড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধারা লোহাগড়া থানায় গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে উড়িয়ে দেয় লাল সবুজের পতাকা। এরপরই স্বর্তঃস্ফুর্ত বিজয় উল্লাসে রাস্তায় নেমে আসে হাজার-হাজার মুক্তিপাগল জনতা। জয় বাংলা ধ্বনীতে মুখরিত হয়ে পড়ে সমগ্র লোহাগড়া। সর্বত্র পৎ-পৎ করে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।
ইতিহাস থেকে জানা গেছে, নভেম্বরের শুরুতে লোহাগড়ার বিভিন্ন স্থান থেকে পরাজয়ের পর স্থানীয় রাজাকাররা লোহাগড়া থানায় আশ্রয় নেয়। সেখানে পুলিশ ও রাজাকাররা মিলে অস্ত্র ও গোলাবারুদের বিশাল মজুদ গড়ে তোলে। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক ভেবেচিন্তে থানায় আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
মধ্য নভেম্বরের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা লোহাগড়া থানা আক্রমণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা নেয়। এ জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রয়াত সংসদ সদস্য শরীফ খসরুজ্জামানের উপস্থিতিতে ২ রা ডিসেম্বর নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু মীরের বাড়িতে এক গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে গ্রুপ কমান্ডার ইমান আলী, ওয়ালিয়ুর রহমান, নূর মিয়াসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন গেরিলা যোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে মাকড়াইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির হোসেনের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধার দল আরেক গোপন বৈঠকে লোহাগড়া থানা আক্রমণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ৮ ডিসেম্বর ফজরের আযানের সঙ্গে সঙ্গে শরীফ খসরুজ্জামানের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা পশ্চিম দিক থেকে লোহাগড়া থানা আক্রমণ করেন। চার ঘণ্টাব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধের পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়।
যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর গুলিতে লোহাগড়ার দিঘলিয়া ইউনিয়নের কোলা গ্রামের সরদার হাবিবুর রহমান ও যশোর সদর উপজেলার জঙ্গল বাঁধাল গ্রামের মোস্তফা কামাল শহীদ হন। পরে শহীদ হাবিবুর রহমানকে লোহাগড়া থানায় এবং শহীদ মোস্তফা কামালকে ইতনা স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে দাফন করা হয়। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধারা ২২ জন পুলিশ ও স্থানীয় ৫/৬ জন রাজাকারকে আটক করে।
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে লোহাগড়া মুক্ত হলেও এখানে শহীদদের স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মৃতিসৌধ নেই। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মীরা।
এদিকে লোহাগড়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শুক্রবার দিনব্যাপি নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বর্ণাঢ্য র্যালি, শহীদ হাবিবুর রহমান ও মোস্তফা কামালের কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল।