
জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনার হরিণটানা থানাধিন কৃষ্ণনগর মৌজায় পিপঁড়ামারী এলাকায় এক প্রবাসীর জমি ভূমিদস্যুরা জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আদালতে ভুক্তভোগিদের মামলা চলমান থাকলেও থানা পুলিশ এবিষয়ে অবগত হয়ে কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়নি। বরং ওসির কক্ষে ডেকে নিয়ে শালিস বৈঠকের মাধ্যমে ভুক্তভোগি পরিবারটিকে জমি পাওয়া যাবে না জানানো হয়। এবিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার, দুর্নীতি দমন কমিশন, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি, কেএমপি কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জমি দখলের প্রক্রিয়ার উদ্বিগ্ন নাগরিক ও মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হরিণটানা থানাধিন কৃষ্ণনগর মৌজায় পিপঁড়ামারী এলাকায় কয়রা উপজেলার বাসিন্দা আঃ ছাত্তার সানা’র প্রবাসী ছেলে মোঃ আনারুল হক ২০১০ সালে ৪কাঠা জমি ক্রয় করেন। সেখানে ঘেরা-বেড়া দিয়ে একটি কাঁচা ঘর তুলে দখলে ছিলেন। ২০২১ সালে একই দাগ-খতিয়ানে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তানিয়া সুলতানা ৫কাঠা জমি ক্রয় করেন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে তিনি প্রবাসী আনারুলের জমি নিজের বলে দাবি করেন। এরপর গত ৪ ফেব্রুয়ারি হরিণটানা থানার ওসি এমদাদুল হক এই জমির বিষয় নিয়ে প্রবাসী আনারুল হকের বৃদ্ধ বাবা ও ভাইসহ অন্যন্যদের থানায় ডেকে নেন। সেদিনই শালিসের মতো বসিয়ে দলিল ও কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করে ওই পরিবারটি জমি পাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এই জমি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা হলে অনেক বড় ঝামেলায় পড়তে পারে বলেও ভুক্তভোগি পরিবারকে বলা হয়।
এদিকে থানায় বৈঠকের পরপরই ওই জমিতে ভুক্তভোগি পরিবারের ঘেরাবেড়া ও কাঁচাঘর ভেঙ্গে জোরপূর্বক দখল পক্রিয়া শুরু করে শিক্ষিকা তানিয়া সুলতানার লোকজন। সেখানে পুলিশ সদস্যরা সাদা পোষাকে উপস্থিত ছিলেন বলে ভুক্তভোগি পরিবারটি জানান। উল্লেখিত জমির বিষয়ে খুলনার সহকারি জজ আদালতে ভুক্তভোগি পরিবারের মামলা থাকা সত্তেও অবৈধ দখল ঠেকাতে থানা পুলিশের সহায়তা চেয়েও নিরাশ হয়ে ফিরে এসেছেন। এবিষয়ে তারা পুলিশ হেডকোয়ার্টার, দুর্নীতি দমন কমিশন, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি, কেএমপি কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এবিষয়ে খুবি’র শিক্ষিকা তানিয়া সুলতানা বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। আমাদের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে থানায় উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের কথা থাকলেও তারা আসেনি। পরবর্তিতে বিষয়টি নিয়ে তারা আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
এবষিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনার কো-অর্ডিনেটর এড. মোমিনুল ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে মামলা থাকলে থানা পুলিশের শালিসী বৈঠক বসানোর কোনো এখতিয়ার নেই। যদি সেখানে মারামারি মতো ঘটনা ঘটে বা সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ। জমির মালিকানা যাচাই বাছাই কাজ পুলিশের না। যদি কেউ করে থাকেন সেটি আইন সংগত হয়নি। এধরনের ঘটনা পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি জরুরী মনে করছি।
এবষিয়ে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এড. বাবুল হাওলাদার বলেন, পুলিশ অন্যায় কাজের সহায়তা করবে এটি কখনই কাম্য নয়। জমি-জমা দখলের বিষয়ে পুলিশের সহায়তার ঘটনা দুঃখজনক। এটি সমাজে পুলিশ সম্পর্কে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ মতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্ত টিম গঠণের মাধ্যমে সত্যতা বের করা।
অভিযোগের বিষয়ে হরিণটানা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ এমাদুল হক বলেন, একই জায়গা দুই পক্ষ দাবি করায় আমরা থানায় ডেকেছিলাম দুই পক্ষকে। সুরহা না হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেই।