
জন্মভূমি ডেস্ক : দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলার সংকট প্রবল। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নগদ বা ড্রাফট আকারে ডলার মিলছে না বললেই চলে। মাত্র তিনটি ব্যাংক ছাড়া প্রায় সব ব্যাংকেরই নির্ধারিত দরের সর্বোচ্চ সীমায় অবস্থান করছে ডলারের দাম। এ দিকে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনা বেচার দায়ে ১৩টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলবের পর জড়িতদের শনাক্ত করতে তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তারা ১৩ ব্যাংকের বাইরেও অন্য ব্যাংকগুলোতে ডলার লেনদেনের তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু করে দিয়েছে। কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণ হলে বৈদেশিক মুদ্রা আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারেও ডলার বেচাকেনা একেবারেই কম। সম্প্রতি মানি চেঞ্জারস ও খোলাবাজারে ডলারের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) অভিযানের পর বেআইনিভাবে ডলার বেচাকেনা কিছুটা কমেছে। ফলে বেঁধে দেওয়া দরে কেউ ডলার বিক্রি করছেন না। বেশি টাকা দিলে কেউ কেউ গোপনে ডলার বিক্রি করছেন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসায়িক সফরে যাওয়া লোকজন। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের বিদেশ প্রশিক্ষণ জরুরি, তারাও বিপাকে পড়ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলার সংকট ও দর বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ পরিস্থিতি অর্থনীতিকে বিপদে ফেলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডলারের দর কৃত্রিমভাবে অনেক দিন ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে ধরে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে দুই বছর আগে সংকট শুরুর পর দর বেড়ে যাওয়ার চাপ তৈরি হয়। এর পরও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে দর কমিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। আবার বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত দুই বছরে ২ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও সংকট থামানো যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারীদের সংগঠন বাফেদা ও শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি যৌথ সিদ্ধান্ত ছিল সর্বোচ্চ ডলার লেনদেন করবে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু গত কয়েকদিনের মধ্যে মাত্র ৩টি ব্যাংক ছাড়া সবগুলো ব্যাংকেরই নতুন করে বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ সীমা ১১০ টাকায় বিক্রি করেছে। এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, তাদের কিছুই করার নেই। গ্রাহক ধরে রাখতে বেশি দরে রেমিটেন্সের ডলার কিনছেন এবং বেশি দামে তাই ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তদারকি বাড়িয়ে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো দেখেশুনে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ডলার লেনদেন করছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোতে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
একইসঙ্গে মানি চেঞ্জার্স ও কার্ব মার্কেটে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ও গোয়েন্দা সংস্থা। তারা তদন্ত করে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি ডলার বিক্রিরও প্রমাণ পেয়েছে। এমনই অবস্থায় গত রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৩ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।