
জন্মভূমি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং শান্তির জন্য যা যা করা দরকার তাই করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, সংঘাতে নয়। বাংলাদেশ সর্বদা শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার সবই করবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে বাংলাদেশ একটি নির্ভরযোগ্য নাম’।
সোমবার আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনও সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। আমরা অস্ত্র প্রতিযোগিতা চাই না। কারণ, নারী, শিশু ও প্রতিটি পরিবার এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে। তাই তাদের এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য।’
সরকার প্রধান বলেন, বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে এখন বেশি কঠিন। কারণ, অশুভ শক্তি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। প্রযুক্তির সাম্প্রতিক বিকাশ ও অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অশুভ শক্তির নতুন হুমকি বাড়ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি মানুষকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রে সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা এটাও দেখছি যে অপশক্তিগুলোও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং মানুষের জীবনের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। কাজেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীদের জটিল বহুমাত্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। আর এজন্য উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে শান্তিরক্ষা মিশনকে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকার বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ও বিপজ্জনক অঞ্চলে জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মিশন এলাকার পরিবেশ, আবহাওয়া ও ভূখণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক, অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করছি। সরকার শান্তিরক্ষীদের যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টে আধুনিক মাইন-প্রতিরোধী, অতর্কিত হামলা-সুরক্ষিত যানবাহন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করেছে। আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা আমরা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবো।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মদানকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
নিহত পাঁচ শান্তিরক্ষীর পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। তিনি আহত পাঁচ শান্তিরক্ষীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ইন্টারন্যাশনাল পিসকিপার জার্নাল উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের থিম- ‘পিস বিগিনস উইথ মি’ খুবই সময়োপযোগী। এই নীতিবাক্য নিয়ে আমরা আমাদের জাতির পিতার দেখানো পথে বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করবো এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী দেওয়ার চেষ্টা করবো এটাই আজ আমাদের অঙ্গীকার।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যাতে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারে সেজন্য তার সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আমি আশা করি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা তাদের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে দেশের সম্মান ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখবে।
সরকার প্রধান বলেন, আপনারা (শান্তিরক্ষীরা) সংঘাত প্রতিরোধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিত করতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। আপনাদের আন্তরিক কাজের কারণে ওই সব দেশের জনগণ আপনাদের নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়েছে। বাংলাদেশি কন্টিজেন্টের সঙ্গে যুক্ত অনেক দেশের স্থানীয় নাগরিকরা আপনাদের কাছ থেকে বাংলা সংস্কৃতি ও ভাষা শিখেছেন। আপনারা অন্যান্য দেশের সহকর্মী শান্তিরক্ষীদের সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আপনাদের পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার প্রশংসা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ সুদান, মালি, লেবানন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও ডিআর কঙ্গোসহ বিভিন্ন দেশে মোতায়েন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন।