প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানার পর চার মাস হতে চললো। কিন্তু লোকসান মোকাবেলায় এখনো পর্যন্ত বরাদ্দ পায়নি সরকারি কোনো দপ্তরই। ফলে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বেড়িবাঁধ ও সড়ক সংস্কার সহসাই হচ্ছেনা। তার উপর দুর্বল বাঁধগুলো জোয়ারের পানিতে ভাঙছে প্রতিনিয়িত। আবার অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমার ভরাকটালের পানিতে অনেক বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। এতে সবর্স্ব হারিয়ে দিশেহারা কৃষক ও মৎস্য চাষীরা রয়েছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে। আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত খাতসমূহের বরাদ্দ নিরূপন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী বিশেষ বরাদ্দ এলেই দ্রু কাজ শুরু করা যাবে। তবে কবে নাগাদ লোকসান মোকাবেলায় বরাদ্দ আসবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না।
গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান লÐভÐ করে দিয়েছিলো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। বিধ্বস্ত হয়েছিলো ঘর-বাড়ি, বসতভিটা। ভেঙ্গে পড়ে বড় বড় গাছপালা। বাঁধ ভেঙ্গে লবণ পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। সড়ক যেন হয়ে হয়ে উঠে এক একটি মৃত্যু ফাঁদ। পানির তীব্রতায় ভেসে যায় হাজার হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের ও পুকুর। ফসলের জমি হয় প্লাবিত। অভাব দেখা যায় গোখাদ্যের। সহায় সম্বল হারিয়ে অনেককেই রাস্তার উপর আশ্রয় নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেনি এখনও।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আম্ফানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ৬০ কিলোমিটার। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর খুলনা সার্কেল জানিয়েছে, আম্ফানের পরপরই তারা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি দুটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। স্বল্প মেয়াদিতে অর্থ চাওয়া হয়েছে ৩৫ কোটি ১২ লাখ আর দীর্ঘ মেয়াদিতে ২২০ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের খুলনা সার্কেল তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাশ বলেন, সাধারণত মেইনটেইনের জন্য খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে যে কাজগুলো হয় শুধুমাত্র সেই কাজের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এটা আম্পন পরবর্তী বরাদ্দ কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন বৃষ্টির মৌসুমে অন্যান্য বছরগুলোতে যে ধরনের বরাদ্দ পাওয়া যায় এগুলো তারই অংশ।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের সংখ্যা ৩১৯টি। যার মধ্যে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন ১৪২টি। যেখানে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯১ হাজার হেক্টর। আর কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ৫০৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১৪৮ কিলোমিটার। এছাড়া উপক‚লের তিন জেলায় মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ১৪৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে এখনো অর্থ ছাড় না হওয়ায় প্রনোদনার বাইরেই থেকে গেছে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীরা।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কমকর্তা ড. খালেদ কনক জানান, আম্পনে শুধুমাত্র বাগেরহাটে চিংড়ির ক্ষতি হয়েছিলো প্রায় তিন কোটি টাকার। সইে তালিকা করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হলেও এখনও পর্যন্ত অর্থ ছাড় হয়ে আসেনি। কবে নাগাত আসবে অথবা আদৌ আসবে কিনা এটা তিনি নিশ্চিত নন।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হেলাল হোসেন বলেন, টেকসই বাঁধ তৈরি করার জন্য সরকার নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আর মেরামতের কাজ করছে সেনাবাহিনী।
তবে এখনো পর্যন্ত বরাদ্দ না আসায় নিজস্ব উৎস্য থেকে ক্ষতি কাটানোর কাজ চলছে। যার মধ্যে আছে ঘর তৈরি, সুপেয় পারি ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট মেরামত ইত্যাদি। তবে নিজ নিজ দপ্তর থেকে আম্ফান পরবর্তী লোকসান মোকাবেলায় আলাদা আলাদা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ মিললেই কাজ শুরু হবে।
বিভাগীয় কমিশনার ড. মু: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করে কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ভর্তুকি ও প্রণোদনার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু এখনও বৃষ্টির মৌসুম চলছে সে কারনে টেকসই কাজ একটু দেরীতে শুরু করা হচ্ছে। শুকনো মৌসুম শুরু হলে পুরো দমে কাজ শুরু হবে।