দেশের ব্যাংক খাতের মতো নন-ব্যাংক আর্থিক খাতেরও অন্যতম বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ঋণ বিতরণ করা হয়, তার প্রায় ৩০ শতাংশ ইতোমধ্যেই খেলাপি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এসব প্রতিষ্ঠানে বিতরণকৃত ঋণের ৪৩ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও বেশি, যা এ খাতের জন্য অশনিসংকেত। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। বস্তুত দেশের ব্যাংক খাত এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে, যা বহুদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।এ খাতে সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি ১৫ লাখ টাকায়, যা বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ঋণ বিতরণ ছিল ৭২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ঋণ পরিশোধের সময় পিছিয়ে দেওয়ায় ঋণগ্রহীতাদের অনেকেরই কিস্তির পরিমাণ বেড়েছে। এখন ওইসব গ্রাহকের অনেকেই খেলাপি।
এ কারণেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি ছিল ৭২ হাজার ৮০৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা; গত জুন শেষে বিতরণকৃত মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ৬৫৬ কোটি টাকা। এরও তিন মাস আগে মার্চে মোট ঋণ ছিল ৭১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ওই তিন মাসে ঋণ বেড়েছিল ৮৮৫ কোটি টাকা।অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রত্যাশিত লাভ তো দূরের কথা, আমানতকারীদের আসলের ঘরেই টান পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে; একই সঙ্গে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি হবে ক্ষতিগ্রস্ত। খেলাপি ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষের আরও বেশি কঠোর হওয়া প্রয়োজন। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে হলে এসব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও জালিয়াতি রোধ করে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।