ক্রীড়া প্রতিবেদক : টপ অর্ডারের ব্যাটাররা ইনিংস বড় করতে পারেননি। চাপের সময় হাল ধরেছিলেন আসালাঙ্কা। জুটি গড়ে পুঁজি বাড়িয়ে নেন দলের। তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তিনি সেঞ্চুরে পেয়েছেন ১০১ বলে। সেঞ্চুরি করে পরের ওভারেই তানজিম সাকিবের বলে ছক্কা মেরে আরও চড়াও হয়েছিলেন তিনি। ছক্কা মেরে পরের বলে উঠিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়েছেন ১০৮ রানে। তার ১০৫ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৫টি ছয়। আসালাঙ্কা ফেরার পর নতুন নামা রাজিথাকেও আউট করেন তানজিম সাকিব। আসালাঙ্কার বিদায়েই মূলত লড়াই শেষ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার। চামিরা শেষ ব্যাটার হিসেবে রান আউট হলে ৪৯.৩ ওভারে ২৭৯ রান তুলে শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয় ২৭৯ রানে।
আগে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা। তবে শুরুটা ভালো করতে পারেননি লঙ্কানরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই টাইগারদের আনন্দে ভাসান শরিফুল ইসলাম। ওভারের শেষ বলে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন কুশল পেরেরা। আউট হবার আগে মাত্র ৪ রান করেন এই ব্যাটার।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। পাওয়ার প্লের বাকিটা সময় নির্বিঘ্নে কাটান দুজন, গড়েন পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি। ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা এই জুটি ভাঙেন টাইগার অধিনায়ক। দলীয় ৬৬ রানে লঙ্কান অধিনায়ক ফেরেন ১৯ রানে।
সঙ্গীর বিদায়ের পর দ্রুত সাজঘরে ফেরেন নিশাঙ্কাও। দলীয় ৭২ রানে বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া তানজিম সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে করেন ৪১ রান। এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালঙ্কা।
দুই মিডেল অর্ডার ব্যাটার মিলে বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন। ক্রমেই বিধ্বংসী হয়ে উঠা জুটি ২৫তম ওভারে ভাঙেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। দলীয় ১৩৫ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে সাদিরা সাজঘরে ফিরে গেলে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। তবে সেই ওভারেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে ভিন্ন রকম এক ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫তম ওভারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে টাইমড আউট হয়েছেন ম্যাথিউস। কোনো বল খেলার আগেই টাইমড আউট হয়ে গেছেন তিনি। এমসিসির আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাটারের আউটের ৩ মিনিটের মধ্যে পরের বলটা খেলতে হবে। কিন্তু আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, ২ মিনিটের মধ্যে খেলতে হবে। ম্যাথুস ২ মিনিটের মধ্যে উইকেটে এলেও বল খেলতে পারেননি।
ম্যাথুস হেলমেট নিয়ে নেমেছিলেন, তাতে পুরো নিরাপদ বোধ করেননি তিনি। ফলে আরেকটি হেলমেট আনা হয়, কিন্তু সেটিও উপযুক্ত মনে করেননি এই ব্যাটার। এসবের মাঝে সময় গড়াতে থাকে, ফলে টাইগার অধিনায়ক সাকিব আবেদন করলে আম্পায়াররা আউট ঘোষণা দেন।
ম্যাথুস বারবার তাঁর হেলমেট ইঙ্গিত করে বোঝাতে চেষ্টা করছিলেন ওটা ঠিকঠাক করতে একটু সময় লেগেছে। এ সময় তাঁর হাতে ছিল দুটি হেলমেট। নিয়মটি সাকিবের ভালোভাবে জানা ছিল বলেই আবেদন করেন আম্পায়ার মরিস এরাসমাসের কাছে। নিয়ম অনুযায়ী লঙ্কান ব্যাটার আউট। আর তাতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রথমবারের মতো দেখল ‘টাইমড আউট’।
ফলে কোন বল না খেলেই সাজঘরে ফিরেন ম্যাথিউস। দলীয় ১৩৫ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটলেও দলের রানের চাকা সচল রাখেন চারিথ আসালঙ্কা। শেষ দিকে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও মাহিথ থিকসানাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীলঙ্কার বড় রানের পুঁজি নিশ্চিত করেন আসালঙ্কা। সেই সঙ্গে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ শতক। এই বাঁহাতি ব্যাটারের শতকে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে উইকেট হারিয়ে রানের সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা।
শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ১০৮ রান করেন আসালঙ্কা। টাইগারদের হয়ে ৩টি উইকেট নেন তানজিম সাকিব। ২টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম।