শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন পর অধিকাংশ কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইস (নিম্নসীমা) উঠিয়ে নেওয়ার পর আপাতত কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। লেনদেন, মূল্যসূচক ও বাজারমূলধনও বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) মধ্যেও বিরাজ করছে ফুরফুরে মেজাজ।
এ অবস্থাকে নিজেদের সফলতা হিসাবে বিবেচনা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে এতকিছুর পরও বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না। বিনিয়োগকারী ও বাজারসচেতন ব্যক্তিদের মতে, গত ১৫ দিনে বাজারে লেনদেন ও দাম বৃদ্ধির তালিকায় যেসব কোম্পানি এগিয়ে রয়েছে, তারা গ্যাম্বলারদের (কারসাজি) আইটেম হিসাবে পরিচিত। ফলে এই ঊর্ধ্বগতি পরিকল্পিত বলেই তারা মনে করেন। সেটি হলে এ ঊর্ধ্বগতি কতদিন টেকসই হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আস্থা-অনাস্থার দোলাচলে থাকা শেয়ারবাজারের এ পরিস্থিতিতেও আশার দিক হলো, এখনো বাজারে বেশকিছু শেয়ারের দাম বৃদ্ধির সুযোগ আছে, যা মূল্যসূচককে এগিয়ে নিতে পারে। অর্থনীতিবিদ ও বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, মোটা দাগে বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ সংকট এখনো বিদ্যমান। চাহিদার দিক থেকে সংকট হলো বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। আর সরবরাহের দিক থেকে সংকট হলো, বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। সব মিলে দুর্বল অস্তিত্বে টিকে আছে শেয়ারবাজার।
স্বভাবতই শেয়ারবাজারের এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। তবে আমরা মনে করি, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটই যেহেতু মূল সমস্যা, সেহেতু সর্বপ্রথম এ সংকট কাটাতে উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। বাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদে বাজারকে টেকসই করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারসাজির মাধ্যমে কেউ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করলে আইন অনুসারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কমিশনকে তৎপর থাকতে হবে। শেয়ারবাজারে কোনো সিন্ডিকেট যাতে গজিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারেও কমিশনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সমন্বয়ের মাধ্যমের কাজ করতে হবে। পুঁজিবাজারে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে বাজারে সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাজারের এ পরিস্থিতিতে এখন সর্বোচ্চ সতর্কতার সময় এসেছে। এ সতর্কতার ওপরই নির্ভর করছে আগামী দিনের শেয়ারবাজার ও অর্থনীতির অবস্থা। শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত