জন্মভূমি ডেস্ক : ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশী পণ্যের বড় বাজার। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪৮ শতাংশের গন্তব্য ইইউভুক্ত ২৭ দেশ। বছরে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার। তার বিপরীতে ইইউ থেকে আমদানি ৪০০ কোটি ডলারেরও কম। ফলে ইইউর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বেশ এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ইইউতে বাংলাদেশী পণ্যের মোট রপ্তানির মধ্যে ৯৩ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। গত অর্থবছর রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলারের পোশাক, যা মোট পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশের বেশি
আশির দশক থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক চলমান। ১৯৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে বাণিজ্যিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যার মধ্যে ছিল ২১টি অনুচ্ছেদ। এরপর থেকেই ইইউ সদস্য দেশগুলোতে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়তে থাকে। ১৯৮২ সালে ইইউ থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল মোট আমদানির ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ। নব্বই দশকের পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে পণ্য আমদানি হ্রাস এবং ইইউতে পণ্য রপ্তানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। ফলে বাড়তে থাকে বাণিজ্য ঘাটতি, যা ছিল বাংলাদেশের অনুকূলে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশী পণ্যের বড় বাজার। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪৮ শতাংশের গন্তব্য ইইউভুক্ত ২৭ দেশ। বছরে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার। তার বিপরীতে ইইউ থেকে আমদানি ৪০০ কোটি ডলারেরও কম। ফলে ইইউর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বেশ এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ইইউতে বাংলাদেশী পণ্যের মোট রপ্তানির মধ্যে ৯৩ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। গত অর্থবছর রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলারের পোশাক, যা মোট পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশের বেশি। তৈরি পোশাক ছাড়াও এ বাজারে হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জুতা, বাইসাইকেল ইত্যাদি জিএসপি সুবিধার আওতায় পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানি হয়।
ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জার্মানির বাজারে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। গত অর্থবছর মোট রপ্তানির ১৩ শতাংশ বা ৭০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় জার্মানিতে। তারপর স্পেনে ৩৬৮, ফ্রান্সে ৩২৯, পোল্যান্ডে ১৮৫, নেদারল্যান্ডসে ২০৯, ইতালিতে ২৩৯, ডেনমার্কে ১৩১ ও বেলজিয়ামে ৯৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইইউতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার। ছয় বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই বাজারে রপ্তানি ছিল ২ হাজার ১৩৩ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের মোট পণ্য আমদানি ছিল ৭ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারের। এই আমদানির ২৫ শতাংশ চীন থেকে এসেছে। দ্বিতীয়ত ভারত থেকে ১৮ শতাংশ। আর ইইউ থেকে আমদানি ৫ শতাংশের কম।
সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশন ২০২৪-৩৪ সালের জন্য জিএসপির নতুন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে। খসড়াটি ইইউ পার্লামেন্টে অনুমোদিত হলে প্রায় ১২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ইইউতে পোশাক রপ্তানি করতে হবে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ১-২ শতাংশ দাম কমবেশির কারণেই ক্রয়াদেশ হারায় পোশাক শিল্প কারখানা। সেখানে জিএসপি সুবিধা না থাকলে শুল্কের কারণে তৈরি পোশাকের দাম প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে যাবে। বাড়তি দামের কারণে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান হাতছাড়া হবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্য দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির কল্যাণে জিএসপি প্লাসের যোগ্যতা অর্জনে যেসব শর্ত রয়েছে তা পূরণে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন। এছাড়াও ইউরোপের বাজারে স্থায়ীভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে ইউরোপের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির কথাও বাংলাদেশ বিবেচনা করতে পারে।