জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনার দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব শেখ ইমাম হোসেনকে অমানুষিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। বুধবার বেলা ১২টায় দলীয় কার্যালয়ে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।
মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, হাইকোর্ট থেকে সকল মামলায় ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ীর ফিলছিলেন ইমাম। সোমবার দিবাগত রাতে বাড়ীর সামনে থেকে বিনাকারণে আটক করে দৌলতপুর থানা পুলিশ। তাকে গত ৭ জানুয়ারি রাত ৩টার দিকে দৌলতপুরের পাবলা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মশার কয়েল থেকে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আটক দেখায়। আটকের পর অমানষিক নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে হত্যার হুমকি দিয়ে পুলিশের শেখানো স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দিতে বাধ্য করে মঙ্গলবার তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। সাজানো-পাতানো দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রসহনের ভোটের পূর্বরাতে খুলনার দৌলতপুরের পাবলা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আনসার সদস্যদের মশার কয়েল থেকে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এঘটনাকে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে সোনালী ব্যাংকের দৌলতপুর কর্পোরেট শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার যশোরের কেশবপুরের গৃধরনগরের মোঃ নজরুল ইসলামের ছেলে মোঃ নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে দৌলতপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১৫(৩) মামলা করেছিলেন (যার নং০২, ০৭-০১-২০২৪ইং)। ইতোপূর্বে এ মামলায় সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার করে জাসাস মহানগর শাখার আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার নূর ইসলাম বাচ্চু ও বিএনপি নেতা মোঃ রিয়াজুল ইসলামকে সীমাহীন নির্যাতন করলেও পুলিশের শেখানো স্বীকারোক্তি নিতে পারেনি। কিন্তু পুলিশের দায়েরকৃত অন্য গায়েবী মামলা থেকে উচ্চআদালতে আট সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়ে বাড়ী ফেরার পথেই দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব শেখ ইমাম হোসেনকে আটক করে অমানষিক নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে হত্যার হুমকি দিয়ে পুলিশের শেখানো স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দিতে বাধ্য করে। কতিপয় পুলিশ সদস্যের অতিউৎসাহী ভূমিকায় খুলনাবাসী ক্ষুব্ধ। পুলিশকে এহেন কর্মকান্ড থেকে বিরত থেকে রাজনীতকদের রাজনীতি করার পরিবেশ সৃষ্টির আহবান জানানো হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরে এপর্যন্ত মহাগরীতে ১৫টি মিথ্যা মামলা হয়েছে। মহানগর ও জেলায় ৫০টি মামলায় ৫ হাজারের বেশী বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা, জেলা আহবায়ক আমির এজাজ খান, মহানগর সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলার ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আবু হোসেন বাবু, জেলার সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীসহ নগর ও জেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পথে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। প্রায় সাড়ে তিন মাস যাবৎ কারাগারে আমীর এজাজ খান মানবেতর জীবনযাপন করছে। এজাজকে ঢাকার পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়াও হয়েছে। মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা বাসায় না পেয়ে শশুর বাড়িতে পুলিশ ভাঙচুর করেছে। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরন করা হয়েছে। মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগরের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে বৃদ্ধা মায়ের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন করনা হয়েছে। মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ এর বাসায় পুলিশ বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীর সাথে চরম অসৌজন্যমুলক আচরণ করেছে। পুলিশ মিরাজের বাড়ির সকল সিসি টিভি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলেছে। যুগ্ম আহবায়ক শেখ সাদীকে না পেয়ে তার ভাইকে গ্রেফতার করেছে। খালিশপুর থানা বিএনপির সদস্য সািচব হবীব বিশ^াস ও ছাত্রদলের সদস্য সচিব তাজিম বিশ^াসের বাড়িতে তান্ডব চালিয়েছে পুলিশ।
পাবলা দক্ষিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের কোন ঘটনাই ঘটেনি। ৭ জানুয়ারি বা ৮ জানুয়ারি কোন গণমাধ্যমে ওই ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনার কোন সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। শুধুমাত্র বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানী করার জন্য এই ধরনের মিথ্যা অগ্নিসংযোগের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। দৌলতপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব ইমাম হোসেনকে গ্রেফতারের আগে একই মামলায় ৩জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয় এবং স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। আমরা অবাধ বিষ্ময় হয়ে লক্ষ্য করলাম, দৌলতপুর থানা বিএনপির সংগ্রামী সদস্য সচিব সাবেক ছাত্রনেতা ইমাম হোসেন মহামান্য হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়ে প্রায় ৩ মাস পর বাড়ি ফিরলে তাকে তার বাড়ির সামনে থেকে দৌলতপুর থানার পুলিশ গ্রেফতার কওে কথিত নাশকতা মামলায় গ্রেফতার দেখায় এবং সারারাত তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। জোরপুর্বক স্বীকারোক্তিমুলক জবাববন্দি আদায় করা হয়। পুলিশের নির্যাতনে শেখ ইমাম হোসেন মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে দৌলতপুর থানার পুলিশ তাকে হাসাপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তাকে সিএমএম আদালতে হাজির করার আগে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করে। আদালত চত্ত্বরে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। শেখ ইমাম হোসেন বিএনপির একজন পরীক্ষিত নেতা। দীর্ঘ ৩০ বছরের অধিক সময়ে সে রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতি করা ছাড়া অন্য কোন অভিযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপি আহবায়ক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা, স. ম আ রহমান, সাইফুর রহমান মিন্টু, বেগম রেহেনা ঈসা, কাজী মাহমুদ আলী, বদরুল আনাম খান, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, আশরাফুল আলম খান নান্নু, একরামুল হক হেলাল, শেখ সাদী, হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ, এনামুল হক সজল, শেখ জাহিদুল ইসলাম, মো. মুরশিদ কামাল, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, হাবিবুর রহমান বিশ্বাস, মুর্শিদুর রহমান লিটন, নাসির খান, সরদার আব্দুল মালেক, মিজানুর রহমান মিলটন, শফিকুল ইসলাম শফি, সামছুল বারিক পান্না, এড. তছলিমা খাতুন ছন্দা, এ্যাড. কানিজ ফাতেমা আমিন, আজাদ আমিন, শরিফুল ইসলাম টিপু, রকিবুল ইসলাম মতি প্রমূখ।
উল্লেখ্য, দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ^াস মঙ্গলবার জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খুলনা মহানগরীর পাবলা কারিকরপাড়া ভোট কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতার হওয়া দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব শেখ ইমাম হোসেন। তিনি মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দৌলতপুর আমলি আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ইমাম হোসেনকে অমানুষিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ: বিএনপির অভিযোগ
Leave a comment