জন্মভূমি ডেস্ক : হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালনের নিযুক্ত করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। সোমবার মোখবারকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। তিনি দুই মাস এ দায়িত্ব পালন করবেন।
এক বিবৃতিতে খামেনি বলেছেন, দেশের সংবিধান অনুযায়ী মোখবার নির্বাহী বিভাগের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনে তিনি আইন ও বিচার বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কাজ করবেন।
এছাড়া হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাগেরি কানিকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ইরানের মন্ত্রিসভা। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আলী বাগেরি কানি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এরআগে ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি সেক্রেটারি ছিলেন।
ইরানের সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্টের মৃত্যু বা অক্ষমতার ক্ষেত্রে, সর্বাধিক ৫০ দিনের মধ্যে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
এর আগে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ অন্যদের মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেছে ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজ ও সংবাদ সংস্থা তাসনিম।
কে এই মোহাম্ম মোখবার : বর্তমান ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবেরের বয়স ৬৮ বছর। এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে তিনিই হচ্ছেন নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট। তার নেতৃত্বে স্পিকার ও বিচার বিভাগের প্রধান মিলে প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন।
মোহাম্মদ মোখবেরের জন্ম ১৯৫৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর। তাকে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির খুব ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচনা করা হয়।
২০২১ সালে রইসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময় তিনি ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অক্টোবরে ইরানের একটি প্রতিনিধি দল মস্কো সফর করেন। সেই টিমে ছিলেন মোহাম্মদ মোখবের। এই সফরে ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং অধিক পরিমাণে ড্রোন রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সরবরাহ দিতে রাজি হয় ওই প্রতিনিধি দল। ওই দলে ছিলেন ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের সিনিয়র দু’জন কর্মকর্তা এবং সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন কর্মকর্তা। সুপ্রিম নেতার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিনিয়োগ বিষয়ক তহবিল ‘সেতাদ’-এর প্রধান হিসেবে এর আগে দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ মোখবের।
পারমাণবিক বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইরানের যেসব ব্যক্তি ও এনটিটির বিরুদ্ধে ২০১০ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তার মধ্যে মোহাম্মদ মোখবের অন্যতম। তবে দু’বছর পরে ওই তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয় ইইউ।
২০১৩ সালে সেতাদ এবং ৩৭টি ইরানি কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নির্দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেতাদ।