
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর: সাগরে নিষেদ্ধাজ্ঞা শেষ হলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছ শিকারে যেতে পারছে না জেলেরা। এতে বেকার হয়ে পড়েছে লক্ষাধীক জেলে। লোকসান গুনছে ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাজারেও সঙ্কট ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের। এই পরিস্থিতির জন্য সমুদ্রের নিষেজ্ঞার সময়কে দায়ী করছে মাছ ব্যবসায়ীরা। গত বছর ইলিশসহ কক্সবাজার সাগর উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়েছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ। এবারে সেই তুলনায় অনেক ঘাটতি থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের নিষেজ্ঞা শেষ জেলেরা আশায় বুক বেঁধেছিল সাগরে মাছ শিকারে যাবে। আর ট্রলার ভর্তি ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে পন্টনে ফিরবে। এজন্য ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীদেরও ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সবকিছু যেন হয়েও হয়ে উঠেনি।সর্তক বার্তা থাকায় আবহাওয়া অফিসের নির্দেশনায় মাছ ধরার ট্রলার নিরাপদ জায়গায় নোঙ্গর করা হয়েছে। অল্প দূরত্বে ঝুঁকি নিয়ে কিছু ট্রলার মাছ শিকারে গেলেও প্রায় ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরের সাগরে ইলিশের বিচরণে যেতে পারছেনা জেলেরা। এরই মধ্যে গত ২০ দিনের ব্যবধানে মহেশখালী ও বাঁকখালী পয়েন্ট ঘটেছে ৩ ট্রলার ডুবির দুর্ঘটনা। সাগরে মাছ শিকারে যেতে না পেরে বেকার হয়ে পড়েছে নিবন্ধিত ৬৫ হাজারসহ লক্ষাধিক জেলে। ক্ষতির মুখে পড়েছে ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাজারেও পড়েছে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের সঙ্কট। সঠিক ব্যবস্থাপনার সাথে সরকারের সহায়তা চাইছেন ক্ষতিগ্রস্থ জেলেরা।জাফর আলম নামে সমিতিপাড়ার এক জেলে জানায়, গেল ৫৮ দিনের বন্ধের সময় এমনিতেই অনেক কষ্টে ছিলাম। ভেবেছিলাম সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে সব কষ্ট কেটে যাবে। কিন্তু দুঃখ্য হচ্ছে সাগরে নিষেদ্ধাজ্ঞা শেষ তবুও যেতে পারছিনা সিগনালের কারণে। কষ্ট যেন কোনোভাবেই পিচু ছাড়ছেনা। আরেক জেলে শফিকুর রহমান জানান, এখন বন্ধ খোলে দেওয়া আর না দেওয়া সমান। কারণ আবহাওয়ার এই খারাপ অবস্থায় চাইলেও সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। এই অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।ট্রলার মালিক লিয়াকত হোসেন জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবং বিভিন্ন জনের কাছে টাকা ধার করে গভীর সাগরে ট্রলার পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু যেই মুহুর্তে সাগর উন্মুক্ত করা হয়েছে সেই মুহুর্তে বৈরী আবহাওয়া। এটি খুবই দুঃখ্য জনক। শুধু আমি বলে কথা নয়, এই ভোগান্তিতে পড়েছে আরো অনেক ট্রলার মালিক।জেলেদের প্রস্তাবনায় সর্বসম্মতিক্রমে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে ৬৫ দিনের পরিবর্তে ৫৮ দিনের বন্ধের সময় নির্ধারণ করা হলেও এই নিষেজ্ঞার সময় নিয়ে দ্বিমত আছে মাছ ব্যবসায়ীদের। তারা সময় পরিবর্তেন দাবি জানিয়েছে সরকারকে। মোহাম্মদ হানিফ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, সরকার যদি এই বন্ধ আরো আগে দিত তাহলে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হত না। বৈরী আবহাওয়ার কারণে গভীর সাগরে যেতে না পারায় পন্টনে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ নেই বললেই চলে। যা অল্প মাছ উঠে তাও ঝুঁকি নিয়ে অল্প দূরত্বে যাওয়া ট্রলারের ছোট মাছ।সাইফুল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, স্বাভাবিক সময়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছে ভরপুর থাকে। স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাছ রফতানি করা হত। কিন্তু এবারে পন্টনের চিত্র পাল্টে গেছে বৈরী আবহাওয়ার কারণে। লইট্টাসহ ছোট প্রজাতির কিছু মাছ ছাড়া বড় মাছ নেই বললেই চলে।শহরের বাজারের চিত্রও একই। বড় বাজার, বাহারছড়া বাজার, কালুর দোকানসহ শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের দেখা নেই। অল্প সংখ্যা ছোট প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ রয়েছে। যা অল্প দূরত্বের ট্রলারে ধরা পড়ছে। যার ফলে মাছের দামও রয়েছে বেশি।কক্সবাজারের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার সুজয় পাল জানান, বিভিন্ন দেশে ৭-৮ মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে। আগের নিয়ম ৬৫ দিনের বন্ধের পরিবর্তে ৫৮ দিনের বন্ধ বাস্তবায়ন করা হয়েছে জেলেসহ মৎস গবেষক ও সংশ্লিষ্টদের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে। সুতরাং সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সকলের আন্তুরিক হতে হবে। বৈরী আবহাওয়া শেষ হলেই আবারো মাছ শিকারে যেতে পারবে। এ নিয়ে এত বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। জেলেদের সহায়তায় সরকার সব সময় পাশে রয়েছে।জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, গত বছর ইলিশসহ জেলেদের জালে ধরা পড়েছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ। কিন্তু এই বছর সেই ট্রার্গেট পূর্ণ হবে কিনা তা অনিশ্চিয়তায় পড়ে গেছে বৈরী আবহাওয়ার কারণে। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, এমন পরিস্থিতি আরো কিছুদিন থাকবে। কক্সবাজারে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক উভয় ধরণের ফিশিং বোটের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। নিবন্ধিত ৬৫ হাজারসহ অনিবদ্ধিত জেলের সংখ্যা লক্ষাধিক।