অপেক্ষার পর হাসি ফোটে উপকূলীয় জেলেদের মুখে। সাগরে ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে জেলে পরিবারে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। ভাগ্য বদলে যায় জেলেদের। কিন্তু ভাগ্য বদলের জন্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণও দরকার। প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় গত বুধবার থেকে দেশব্যাপী ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা ২২ দিন চলবে। এ ঘোষণা মানা জেলেদের জন্য কষ্টকর। এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় গুরুত্বপূর্ণ। ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের পুনর্বাসন বিষয়টি সামনে আসে। কিন্তু আমরা প্রায় প্রতি বছরই দেখছি, এই পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নে গড়িমসি চলে। নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর সপ্তাহ বা মাস পেরিয়ে গেলেও অনেক অঞ্চলে জেলেদের কাছে ত্রাণের চাল পৌঁছে না। এ বছরও পরিস্থিতি ভিন্ন নয়। খবরে প্রকাশ, ইতোমধ্যে জাল গুছিয়ে তীরে ফিরেছেন জেলেরা। মাছ ধরার ট্রলার বন্ধ করেছেন। আর এরপরই সংসার চালানোর দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে তাদের। তালিকাভুক্ত জেলেরা তাও সামান্য প্রণোদনা পাবেন। কী করবেন তালিকার বাইরে থাকা জেলেরা? কারণ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর তেমন মাছ ধরতে পারেননি তারা। যা পেয়েছেন তাতে দাদনের ঋণই শোধ করতে পারেননি। একদিকে সংসার পরিচালনা, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ- এই দুই চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে জেলেদের। এমন চিত্র বেদনাদায়ক। বন্ধের সময় সরকারের পক্ষ থেকে যে চাল দেয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। এই চাল বিতরণ নিয়েও অনেক সময় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। জেলেদের প্রতি আরো আন্তরিক হওয়া উচিত। জানা গেছে, জেলেদের মধ্যে সরকারের বরাদ্দকৃত চাল দেয়ার কথা থাকলেও এখনো চাল পাননি বরিশালের জেলেরা। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। অনেকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা মাছ শিকার করছেন। মা মাছ ও জাটকা সংরক্ষণরোধে কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশের ঢিলেঢালা অভিযান চলছে। আর এই সুযোগে কতিপয় জেলে দেদার জাটকা ইলিশ ধরে বাজারে বিক্রি করছেন। এদিকে কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশ বলছে, নদীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ১১৭টি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক ২০টি জাহাজ ২৪ ঘণ্টা টহল দিচ্ছে। যার ফলে অন্যবারের তুলনায় এবারের অভিযান অনেক বেশি শক্ত এবং ফলপ্রসূ। এর মধ্যেও জেলেদের জালে যা ধরা পড়ছে সেটা যৎসামান্যই। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের আওতায় ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাসহ সারাদেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার আইন জারি করেছে। এই সময়ে ছোট ইলিশ মাছ রক্ষা অবশ্যই জরুরি একটি পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা মনে করি, মা ইলিশ ধরার ওপর নির্ভরশীল দেশের উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ জেলের জন্য বিকল্প আয়ের বা আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা খুবই দরকার। এছাড়া দরকার এ ব্যাপারে গণসচেতনতা তৈরি করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন মানুষের নজরদারি নিশ্চিত করা। এখন প্রস্তুতিমূলক এ কাজগুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেয়া উচিত। জাটকা রক্ষার পদক্ষেপ পুরোপুরি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে রুপালি ইলিশের সুদিন আমাদের হাতছাড়া হবে না। এর জন্য ইলিশ আহরণকারী, ব্যবসায়ী, ভোক্তা- সবার সচেতন ও সংযমী ভূমিকা প্রত্যাশিত।