
ফিলিস্তিনে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে সর্বাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করছে। ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়িতে নির্বিচার বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। নিরীহ সাধারণ মানুষ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছে, কিন্তু কোথাও আশ্রয় পাচ্ছে না।
যেখানে যাচ্ছে সেখানেই হামলার শিকার হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, গাজা উপত্যকাকে ‘ধ্বংসস্তূপে’ পরিণত করবেন, ‘জনমানবশূন্য দ্বীপে’ পরিণত করবেন। এমন আক্রোশ পরিস্থিতিকে কেবল আরো খারাপের দিকেই নেবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যেও দ্বিধাবিভক্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট সমাধানে জাতিসংঘ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। বরং দ্বন্দ্ব বাড়ছে। মীমাংসা হচ্ছে না। নতুন নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ইসরায়েলের আগ্রাসনকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে চীন, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশ অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশও অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহবান জানিয়েছে। বিশ্ববিবেকও মনে করে, যুদ্ধ এই সমস্যার কোনো সমাধান দেবে না।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবরে দেখা যায়, পাল্টাপাল্টি হামলায় এরই মধ্যে উভয় পক্ষে এক হাজার তিনশর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে আরো প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। খবরে প্রকাশ, ইসরায়েল ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে। দেশটি গাজা সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে। যুদ্ধবিমান ও কামান থেকে ‘নন-স্টপ’ গোলা ও বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে।
হামাসও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে এবং ক্ষয়ক্ষতি কেবলই বাড়তে থাকবে। পরিস্থিতির উত্তাপ কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। সারা দুনিয়ায় পক্ষে-বিপক্ষে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের অনেক দেশেও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার পক্ষে ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শিত হচ্ছে।
দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার এই সংঘাত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে অবৈধ বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র স্থাপনের আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তও মানা হচ্ছে না। এক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সংঘাতে ছয় হাজার ৪০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে ৩০৮ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। হামাস দাবি করেছে, বছরের পর বছর নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা, নিজ বাসভূমি থেকে তাদের উৎখাত ও অবৈধভাবে বসতি নির্মাণ এবং পবিত্র আল-আকসা মসজিদের অবমাননাসহ বিভিন্ন কারণে তারা এই হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে যে আলাপ-আলোচনা চলছিল, এই ঘটনা নিঃসন্দেহে তাকে বাধাগ্রস্ত করবে। অন্যদিকে বৃহৎ শক্তিগুলো পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে যেকোনো শান্তিপ্রক্রিয়ায় তাদের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়বে। আমরা আশা করি, অবিলম্বে যুদ্ধ ও বোমাবর্ষণ বন্ধ করা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের জীবনকে কোনোভাবেই বিপন্ন করা যাবে না। হিংসার মাধ্যমে নয়, আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে।