দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে কোনো আইন না থাকায় অভিযোগের কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভোক্তারা। এ সুযোগে বাজার ধরতে বেপরোয়া কৌশলও অবলম্বন করছে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, যা খাতটিকে বিশৃঙ্খল করে তুলছে। সব মিলিয়ে আস্থার সংকট নিয়ে বড় হচ্ছে অনলাইন ব্যবসা। অনলাইন কেনাকাটা। প্রতারণা নাকি আস্থার জায়গাÑ এমন প্রশ্ন সামনে আসছে বারবার। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ই-কমার্স বাজারের আকার বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার ক্রেতা অনলাইনে পণ্যের অর্ডার দেন।
প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের বছর এটি হবে ১৬ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। অনলাইন লেনদেনে গ্রাহকদের আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এ খাতের উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসার প্রসার ইতিবাচক হলেও সময় এসেছে এই ব্যবসাকে একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে আনার। ডিজিটাল যুগে গ্রাহকদের পণ্যের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে খোলা হচ্ছে নানা রকম অনলাইন শপ। স্মার্ট জীবনযাপনে সময় বাঁচাতে ও প্রয়োজনে শহরের পাশাপাশি মফস্বলেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ তালিকায় রয়েছে গহনা, পোশাক, মোবাইল ফোন, চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, প্রস্তুত করা খাবার, বই, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ওষুধ ইত্যাদি। শুধু পোশাক বা গহনা নয়, বাড়ির জন্য চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্য এখন অনলাইনে কিনছেন।
ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বাইরেও ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ খুলে বেচাকেনা করছেন অনেকে। ই-কমার্স নিয়ে বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করলেও এ নিয়ে অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। অনেকে অনলাইনে দেখানো পণ্যের সঙ্গে সরবরাহ করা পণ্যের মিল পান না। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, ‘অনলাইনে পণ্য কিনলে সময় বাঁচে, ঝক্কিও এড়ানো যায়। তাই ঘরের দুয়ারে প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে নিবন্ধন নেয় ইভ্যালি।’ মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, মোবাইল ফোন সেট, টেলিভিশন ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। স¤প্রতি গাড়ি বিক্রিতেও নেমেছে। কিন্তু শুরু থেকেই তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি। সাধারণ ক্রেতার বেশির ভাগই সমস্যায় পড়েছে ইভ্যালির লেনদেনে। যারা ই-কমার্সের নামে প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। জনস্বার্থ চিন্তা করতে হবে। এখানে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া এবং বিনা স্টাবলিশমেন্টে ব্যবসা করা হচ্ছে। এতে সরকার যথেষ্ট রাজস্ব হারাচ্ছে। ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন জারি করা হয়েছে। এই আইনের উদ্দেশ্য-কোনো ক্রেতা কোনোভাবে প্রতারিত যাতে না হয় এবং আইনত নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করা না হয় কিংবা সরবরাহসহ ব্যবস্থায় ক্রেতার কোনো ক্ষতি না হয় ইত্যাদি। এই আইনের বাস্তবায়ন জরুরি।