
# জেলায় ১৪ হাজার খামারী
# খাবারের পাশাপাশি ইনজেক্শন
শেখ আব্দুল হামিদ
ঈদ-উল- আযহা উপলক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর এলাকার খামারীরা তাদের গবাদি পশু হৃষ্ট পুষ্ট করে স্থানীয় হাট বাজারে নেয়ার চেষ্টা করছেন। মোটাতাজা করতে পশুদের অতিরিক্ত খাবারের পাশাপাশি ইউরিয়াসহ ইনজেক্শন দেয়া চলছে। এ বছর ১৪ হাজার ১১১টি খামার মালিক তাদের মোটাতাজা করা ১ লাখ ১৯ হাজার ৫০৩টি বিভিন্ন জাতের ষাড়, বলদ, গাভী, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। গেল বছর এর সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার ৩১২। তবে কোরবানী দেয়া হয়েছিল ৮৬ হাজার পশু। অতিরিক্ত পশু বহিরাগত এবং স্থানীয় ভাবে খামার ছাড়াই পালিত। চলতি বছর কোরবানীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সূত্রটি জানায়।
গত বছর যে সব গরু বিক্রি করতে পারেনি সে গুলো এ বছর আবার বাজারে উঠাবার জন্য উপযুক্ত করা হচ্ছে। এ বছর জেলায় ষাড়, বলদ, গাভী ও মহিষ মিলে মোট ৫৮ হাজার ১৪৮টি পশু মোটাতাজা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পারিবারিক এবং খামার আকারে পালন ৬১ হাজার ৩৫৫টি ছাগল ও ভেড়া পালন করে হাটে উঠাবার চেষ্টাও চলছে। পেশাদার ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর এ সময়েই তাদের পালন করা পশু হাটে এনে মোটা অংকের টাকা হাতে নিয়ে ফেরেন। গত বছরের ন্যায় এ বছরও ভারতীয় গরু প্রবেশের ক্ষেত্রে বাঁধা থাকাবে বলে দেশী খামারীরা মনে করছেন। তাই লাভের অংক গেল বছরের তুলনায় আরও বাড়বে মনে করে শতস্ফুর্ত ভাবে হাসি মুখে পশু লালন পালন করছেন।
গত বছর খামারীরা আশায় বুক বেধে হাটে বাজারে গবাদি পশু তুলে দাম হাকিয়ে বসে থাকেন এরই মধ্যে সীমান্ত এলাকা দিয়ে কয়েক হাজার গরু অনুপ্রবেশ করায় দেশী খামারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। তবে অবৈধ পথে খুব বেশী গরু প্রবেশ করতে পারবেনা এমনটি আশা তাদের। জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলা সদরে ৫৬ জন খামারী ৪৪৮টি ষাঁড়, ২১৪টি ছাগল, বটিয়াঘাটায় ৭১৫ খামারী ২ হাজার ৫০টি ষাঁড়, ২০০ বলদ, এক হাজার ৯৫ ছাগল, ৭৫টি ভেড়া, ৭৫ গাভী, ডুমুরিয়ায় ৩ হাজার ৭ খামারী ৭ হাজার ৪১০ ষাঁড়, ৪৭৪ বলদ, ২ হাজার ৭০২ ছাগল, ২৩২ ভেড়া, পাইকগাছায় ৯৮৯ খামারী ৯ হাজার ৬৮৭ ষাঁড়, ৭২২ বলদ, ৫ হাজার ৩০০ ছাগল, ৩৪৫ ভেড়া, কয়রায় এক হাজার ১৬৭ খামারী ৮ হাজার ৪৩৪ ষাঁড়, ৩৯৫ বলদ, ৪ হাজার ১৮২ ছাগল, ৩৬০ ভেড়া, দাকোপ ২৫৬ খামারী ১ হাজার ৮৮ ষাঁড়, ৯২২ ছাগল, ১৭৩ ভেড়া, রূপসায় ৮২৪ খামারী চার হাজার ৮৮৬ ষাঁড়, ১৫৭ বলদ, ৩২৭ ছাগল, তেরখাদায় ৬৫৫ খামারী ২ হাজার ২৩৩ ষাঁড়, ৪৫ বলদ, ৩ হাজার ৮৬২ ছাগল, দিঘলিয়ায় দেড় হাজার ৭৮ খামারী ৪ হাজার ১৬০ ষাঁড়, ৯৬ বলদ, ৪ হাজার ৮২ ছাগল এবং ফুলতলা উপজেলায় ৪৫৫ জন খামারী দুই হাজার পাঁচ ষাঁড়, ৮৫ বলদ ও ৯৭২টি ছাগল হৃষ্ট পুষ্ট করছেন। এ সব গবাদি পশু বাণিজ্যিক ভাবে পালন করতে গিয়ে অনেকেই কৃষি, সোনালী, পূবালীসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। মাত্র ৫ ভাগ সুদে ঋণ গ্রহণের পর এক বছরের মধ্যেই পালিত পশু বিক্রয় উপযোগী করে তোলেন। বিক্রি শেষে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেও অনেকে দ্বিগুন লাভ করেন। খামারীরা বলেন, গরু লালন পালন করতে যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হয়। তাছাড়া শ্রমিক খরচ এখন অনেক বেশী। তাই ভারতীয় গরু প্রবেশ না করলে লাভের অংক দেখা যাবে।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, ভারতীয় গরু প্রবেশ না করলে দেশী খামারীরা অতিরিক্ত মূল্য দাবী করে বসে থাকেন। খামারীরা সাধারণত দেশী এবং শংকর জাতের গরু পালন করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের বীজ বেশী ব্যবহার হয়ে থাকে। ঈদ-উল-আযহায় বিক্রির উদ্দেশ্যে গ্রামের প্রায়ই বাড়িতে এখন গরু লালন পালন হয়ে থাকে।
খামারী বটিয়াঘাটা উপজেলার খারাবাদ গ্রামের আমীর এজাজ খান, ফুজ্জাত শেখ, ছয়ঘরিয়া গ্রামের বিচিত্রা মন্ডলসহ অনেকেই বলেন তারা ৬০/৭০টি করে গরু লালন পালন করেছেন। গত বছর কোবানীতে লোকসানে ছিলেন। এ বছর খাবারের মূল্য অনেক বেশী। তার পর যদি ভারতীয় গরু প্রবেশ করে তাহলে লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার অরুণকান্তি মন্ডল বলেন, আগামী ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন হাট-বাজারে দেশী জাতের গরু বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নেয়া চলছে। জেলায় যথেষ্ট পরিমাণ গরুর খামার রয়েছে। আশা করি এ অঞ্চলে উৎপাদিত গরু ঈদ-উল-আযহায় চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের সাথে সমন্বয় না করার কারণে অনেক সময় প্রকৃত খামারীরা ঋণ থেকে বঞ্চিত হয়।