রূপসা : দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রূপসা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে যার অন্যতম উদাহরণ রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের অত্যান্ত জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক। এই সড়কটিতে চলাচলকারী সকলের কাছে এটি এখন মৃত্যু আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই সড়কের দুই পাশে অসংখ্য শিল্প কলকারখানা রয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক ২৩ টি কারখানা ও ছয়টি বরফকল রয়েছে। অসংখ্য মাছের ডিপো সহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ সকল প্রতিষ্ঠান গুলোতে কর্মরত শত শত শ্রমিক সহ সাধারণ পথচারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কটিতে চলাচল করতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বলেন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের তুলনায় আমাদের রূপসা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যার অন্যতম একটি দৃশ্যমান উদাহরণ হচ্ছে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কের বেহাল অবস্থা। যে সড়কটি ব্যবহার করে দেশের রপ্তানি খাতে অসামান্য অবদান রাখা স্বত্ত্বেও দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই সড়কটির সংস্কারের কোন উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়েনি। এছাড়া ও রূপসা উপজেলায় অসংখ্য জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের চরম বেহাল অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে সড়কের এ অবস্থা চলমান থাকলেও সড়ক গুলি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান উদ্যোগ খুব একটা চোখে পরেনি। সরেজমিন দেখা গেছে ইউনিক সী ফুডস থেকে জাবুসা ওরিয়ন পাওয়ার প্লান্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় রাস্তাটির গুরুত্ব থাকলেও অবহেলায় জরাজীর্ন অবস্থা। প্রতিদিন এই ভাঙ্গা, খানা খন্দকের রাস্তায় ১০ চাকার বালু আর পাথর বোঝাই অসংখ্য ট্রাক চলাচল করে। রাস্তার ধারণ ক্ষমতার চাইতে কয়েক শত গুন ভারি যানবাহন চলাচল করে আসছে। সেই সাথে মাছ কোম্পানির মাছ ভর্তি ট্রাক ও কন্টেইনার গাড়ি চলাচল করে আসছে। এই রাস্তাটির পার্শ্ববর্তী নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বালি সরবরাহের জন্য ড্রেজারের মোটা লোহার পাইপ আড়াআড়ি ভাবে রাস্তার উপর দিয়ে পার করে বালু ব্যবসায়ীরা বহাল তবিয়তে তাদের চালিয়ে যাচ্ছে। ড্রেজারের পাইপের উঁচু অংশ অতিক্রম করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই ট্রাকের এক্সেল ভেঙ্গে চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। যার ফলে পথচারীসহ এলাকাবাসিকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাস্তার সব থেকে খারাপ অংশটুকু হচ্ছে নিউ ফুডস থেকে কোস্টগার্ড স্টেশন অফিসের সামনে হয়ে জেমিনি সী ফুডস পর্যন্ত। রাস্তাটির ব্যাপারে ভ্যান চালক জাহিদ হাসান বলেন রাস্তাটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ভ্যানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে এ রাস্তাটি নতুন করে করা জরুরি। অপর ভ্যান চালক মোঃ রবিউল বলেন, রাস্তাটি এতটা ভেঙ্গেছে তাতে চলাচল করতে খুব অসুবিধা হয়ে পড়েছে। এ রাস্তা দিয়ে ভ্যান চালিয়ে যে ইনকাম হয়। তার থেকে ভ্যানের পিচনে ব্যায় হয় বেশি। রূপসা চিংড়ি বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু আহাদ হাফিজ বাবু বলেন চিংড়ি শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত দশ চাকার বিভিন্ন বালু, পাথর, কয়লা বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে এ রাস্তাটি মানুষের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাটি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা একাধিক বার লেখালেখি করা স্বত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রিয়াম ফিস এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, এই সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার কারণে দিন দিন চলাচলের অনুপোযোগী পড়ছে, আমি আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মামুন শেখ বলেন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাস্তাটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে আমি আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের কাজ শুরু হবে। রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এলজিইডি এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে রাস্তা সংষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে খানিকটা অস্বস্তি বোধ করে তিনি বলেন, সড়কটি শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন মাজার হতে জাবুসা ওরিয়ন পাওয়ার প্লান্ট পর্যন্ত মোট ৩৭০০ মিটার দৈর্ঘ্য যার মধ্যে ২০০০ মিটার নদী শাসনের কাজ করতে হবে এবং রাস্তাটি সম্প্রসারিত করে পারি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে আর, সি, সি রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। যার জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্ধের প্রয়োজন এই বিষয়ে ইতিমধ্যে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে ইষ্টিমেট তৈরি করে অর্থ বরাদ্দের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পাঠাবো এবং অর্থ বরাদ্ধ হলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারবো।