
সিরাজুল ইসলাম শ্যামনগর: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলবর্তী নদী ও খালের তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে। এর একটি কারণ হচ্ছে উপকূলের হাট-বাজারগুলোতে বর্জ্যব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে সমস্ত বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়।সাতক্ষীরার আকর্ষণ পায়ে হেঁটে সুন্দরবন, একমাত্র পায়ে হেঁটে সুন্দরবন দেখার জন্য সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ ও নিলডুমুর। এ এলাকাকে ঘোষণা করা হয়েছে পর্যটন নগরী, তবে আজও পর্যন্ত বর্জ্যব্যবস্থাপনার নেই কোনো ব্যবস্থা।নীলডুমুর, মুন্সিগঞ্জও কলবাড়ি এলাকায় প্রতিদিন হাজারও পর্যটকের ঢল নেমে থাকে। এ সমস্ত এলাকায়, পর্যটকরা এসে প্লাস্টিকও পলিথিন ফেলার ব্যবস্থাপনা না থাকায় এসব বর্জ্য ফেলানো হয় নদীতে। নীলডুমুর বাজারে দোকান ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে ১৪০টি এ সমস্ত দোকানে ডাস্টবিন থাকলেও ডাস্টবিনের বর্জ্য ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় এ সমস্ত বর্জ্য ফেলতে হয় বাজার পার্শ্ববর্তী খোলপাটুয়া নদীতে।বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি মহাসিন আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নীলডুমুর বাজার এলাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করতে আসেন, পলিথিন, প্লাস্টিক যাবতীয় বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে যায়। এই ময়লা আমাদের দোকানিরা পরিষ্কার করার পর ওই বর্জ্য নদীতে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জিএম আব্দুল জলিল বলেন, উপকূলীয় এলাকায় বিয়েসহ খানা-পিনার ব্যবস্থা করা হলে, প্লাস্টিক প্লেট ও গ্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে এ সমস্ত প্লাস্টিক বস্তা বন্দী করে ফেলে দেওয়া হয় নদীতে। তিনি আরও বলেন, এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপন করা হলে উপকূলবর্তী নদীগুলোতে আর কেউ বর্জ্য প্লাস্টিক পলিথিন জাতীয় ফেলতো না।নদীতে পলিথিন ও প্লাস্টিক ফেললে যেমন ক্ষতি হয় সুন্দরবনের তেমনি সুন্দরবন বর্তি নদী ও খালগুলোতে, ধীরে ধীরে পলি পড়ে চর জেগে উঠার কারণে বৃদ্ধি হচ্ছে নদীর পানি।সুন্দরবন সংলগ্ন কলবাড়ি বাজার ব্যবসায়ী বিভাষ মন্ডল বলেন, কলবাড়ি বাজারে কোন ধরনের ডাস্টবিনের ব্যবস্থা না থাকায় সকল বর্জ্য ফেলতে হয় চুনা নদীতে, আমরা চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করুক এ বাজারে। তা না হলে এক সময় সুন্দরবন বর্তি যে নদী খাল আছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের কারণে পলি পড়ে চর জেগে যাবে। এছাড়া নদীতে প্লাস্টিক ফেলবার কারনে ভেসে যেয়ে সুন্দরবনের কিনারে লেগে যাওয়ার কারণে ওই স্থানে কোন গাছের চারা হচ্ছে না। সুন্দরবনে অবৈধ উপায়ে কিছু সংখ্যক জেলে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করছে। এর ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে, তেমনি নদীর জলজ প্রাণী বিলুপ্তি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলপ্রাণী শুন্যের কোটায় নেমে আসবে বলে জানায়।সুন্দরবনের ১০কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রকার ফ্যাক্টরি জাতীয় স্থাপনা তৈরি করা যাবে না, তবে এ আইন অমান্য করে বুড়িগোয়ালিনীতে গড়ে উঠেছে ছোট, বড় বেসকিছু কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ ও বাগদা রেনু পোনার হ্যাচারি স্থাপনা, সরজমিনে যেয়ে দেখা যায় এ সমস্ত স্থাপনার যত বর্জ্য সবগুলো নদীতে ফেলা হচ্ছে।সাতক্ষীরা পশ্চিম সুন্দরবনের আওতাধীন বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তার কাছে, সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকরা কোন ধরনের পলিথিন জাতীয় বর্জ্য ফেলছে কি না এবং বর্জ্য ফেললে কোন ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে গেলে কোনভাবেই প্লাস্টিক ও পলিথিন ফেলার সুযোগ থাকেন না, কারণ বনবিভাগের পক্ষ থেকে গাইটম্যান দেওয়া হয় প্রতি ট্রলারে একজন করে।সুন্দরবন ভ্রমণ করতে যেয়ে কোন পর্যটক ভুলক্রমে প্লাস্টিক ও পলিথিনের মত বর্জ্য ফেলা হলে সেটা আমরা জানতে পারলে আইনের আওতায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, পর্যটকবাহী ট্রলারে কোনো প্রকার প্লাস্টিক দ্রব্য প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।নদীতে পলিথিন ও প্লাস্টিক ফেলে কোন ধরনের ক্ষতি করছে এবং এর প্রভাব সুন্দরবনের উপর পড়ছে কিনা, এবিষয়ে বুড়িগোয়ালিনী নৌ থানার পুলিশের অফিসার ইনচার্জ এমদাদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পলিথিন নদীতে ফেললে এই পলিথিন জলজপ্রাণীসহ বন্যপ্রাণী খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাছাড়া পলিথিন নদীতে পড়ার কারণে উপকূলের নদীর তলাদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে, সেকারণে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে সুন্দরবনে বসবাসরত বন্য প্রাণীর অকাল মৃত্যুসহ বিলুপ্তের পথে। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার বন্ধ না করলে জলজপ্রাণীর ব্যাপক ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনা রয়েছে,এবং এ সকল বিষয় নিয়ে উপকূলবর্তী বেশ কিছু বাজারে জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভা করা হয়। তারপরেও যদি নিষিদ্ধ পলিথিনসহ বর্জ্য আর্বজনা নদীতে ফেলে তাহলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।নিষিদ্ধ পলিথিনের মতো ক্ষতিকারক দ্রব্য নদীতে ফেলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজপ্রাণীর উপর প্রভাব পড়ছে কি না, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনি খাতুন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদীতে পলিথিন ফেললে জলজপ্রাণী ও বন্যপ্রাণী, এসমস্ত ভাসমান পলিথিন খেলে অসুস্থ হয়ে মারাও যেতে পারে। উপজেলার নদীকেন্দ্রিক বাজারগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা উপজেলার উপকূলের নদীর ধারে অবস্তিত বাজার কেন্দ্রীক বর্জ্যব্যবস্থাপনা তৈরি করব।এবং আইন শৃঙ্খলা মিটিংসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলোচনা রেখেছি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছি অতি তাড়াতাড়ি বাজার কেন্দ্রিক কিছু বর্জ্যব্যবস্থাপনা তৈরি করা হবে ।উপকূলবর্তী বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মোল্লার কাছে ইউনিয়নের হাট-বাজারে বর্জ্যব্যবস্থাপনা তৈরি করার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা নিবার্হী কর্নর্কতা নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেই অনুযায়ী উপকূলের বাজার কেন্দ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে কাজ করছি, আগামী বাজেট মিটিংয়ে এটি পাশ করে কার্যক্রম শুরু করবো। তাছাড়া আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্প থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান দেখে সেখানে হয়তো একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। চেয়ারম্যান আরও বলেন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের যে সকল বাজার আছে এ সমস্ত বাজারগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখার জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে যাচ্ছি এবং নদীতে কোন প্রকার পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় কোন কিছু ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে তা না হলে সুন্দরবনের এর প্রভাব পড়বে। এভাবে শুধু শ্যামনগর উপজেলার বুড়ি গোয়ালিনী নয় এভাবে বর্জ্যফেলা হচ্ছে উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার নওয়াবে কি পাতাখালি পারশেমারি চাঁদনী মুখা ডুমুরিয়া কলবাড়ি মুন্সিগঞ্জ হরিনগর ভেটখালী সহ অসংখ্য বাজারে,

