সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ। বাংলাদেশের উপকূল বিশাল। আর উপকূলে রয়েছে বেশ কয়েকটি দ্বীপ। কোনো কোনো দ্বীপ হাজার বছরের পুরোনো এবং অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্যেরও অধিকারী। দেশের উপকূল ও দ্বীপের মানুষের কথা আমরা খুবই কম শুনি। ওইসব মানুষের কল্যাণে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন বাজেটও তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে হয়ে ওঠে না। উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনা করছে সরকার। উপকূলীয় দ্বীপগুলোর উন্নয়নের জন্য অফশোর আইল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বোর্ড একসময় বেশ কার্যকর ছিল। এখন এটি নেই। আজকের লেখায় উপকূল ও দ্বীপ নিয়ে আলোচনা করব। বিশেষ করে দেশের বিশেষ সম্ভানাময় এলাকা সন্দ্বীপের উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে কিছু কথার অবতারণা করছি।প্রায় হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ দ্বীপ চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত সন্দ্বীপ। দেশে ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে নানা দিক দিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলাটি বেশ ব্যতিক্রম ও সমৃদ্ধ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সন্দ্বীপ বিশাল অবদান রাখছে। শুধু সন্দ্বীপ উপজেলার মানুষের কাছ থেকে বিদেশ থেকে মোট প্রাপ্ত রেমিট্যান্স ১১ শতাংশের অধিক। এত বিশাল রেমিট্যান্স দেশের কোনো উপজেলার মানুষ বিদেশ থেকে উপার্জন করে আনতে পারছে না। কিন্তু এর বিনিময় তো দূরের কথা, নানা ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে দ্বীপের চার লাখ মানুষ যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, অবহেলিত। কিন্তু কেন!তবে সন্দ্বীপে যে উন্নয়ন মোটেই হয়নি, তা নয়। নানা দিক দিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলায় বেশ উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। মানুষের জীবনমানে কিছু ক্ষেত্রে বেশ পরিবর্তন এসেছে। তবে আরও বেশি প্রয়োজন। চাহিদা অনুযায়ী দ্বীপবাসী উপকৃত হতে পারেনি। এর নানা কারণ রয়েছে। উন্নয়নের কয়েকটি ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:স্থানীয় রাস্তা: সন্দ্বীপের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের রাস্তা পাকা হয়ে গেছে। সন্দ্বীপে উড়িরচরসহ ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। উড়িরচরে সন্দ্বীপের মূল খণ্ড থেকে সামান্য নদী পার হয়ে যেতে হয়। উড়িরচরের সঙ্গে সরাসরি রাস্তার যোগাযোগ নেই। নৌকা দিয়ে সন্দ্বীপ থেকে উড়িরচরে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষাকালে বেশ সমস্যা। কোনো জেটি নেই। কাঠজাতীয় নৌকায় উঠতে হয় উভয় তীরে, যা অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য খুবই কষ্টকর।তবে পৌরসভা এলাকায় রাস্তা অনেক আগে পাকা করা হয়েছে। এখন প্রায় ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়ে ফেলেছে। নতুন করে দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।বিদ্যুৎ: অনেক জল্পনাকল্পনা শেষে অবশেষে সন্দ্বীপে সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন লাইন এবং ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সাবস্টেশন বসানো হয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটিও বসানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছে। এটি সন্দ্বীপের ক্ষেত্রে বিশাল সফলতা। সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না, বরং বলব এই বিদ্যুৎকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে সন্দ্বীপে ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্থাপনা করা খুবই সহজ হবে। কম মূল্যে শ্রমিক পাওয়া যাবে। বিশেষ করে সন্দ্বীপে মহিলারা বেশ কর্মঠ। শিক্ষিত, মধ্য শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সব মহিলাকে ক্ষুদ্র শিল্পে উৎপাদনে পাওয়া যাবে।অর্থনৈতিক অঞ্চল: এরই মধ্যে সরকার সন্দ্বীপের দীর্ঘাপাড়া ইউনিয়নসহ বিরাট এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে গ্যাজেট প্রকাশিত হয়েছে। রফতানিমুখী শিল্প থেকে যে কোনো মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই সমতলে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ দ্বীপবাসীর জন্য তথা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ।জেটি নির্মাণ: সন্দ্বীপে সবচেয়ে বড় সমস্যা যাতায়াত। এখনও সন্দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নদীপথ। চট্টগ্রাম থেকে স্টিমার, নৌকা ও স্পিডবোটের মাধ্যমে সন্দ্বীপে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করে থাকে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের কুমিরা দিয়ে স্টিমার ও নৌকায় মানুষ যাতায়াত করে থাকে। কুমিরা থেকে সোজা সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হবে। বিগত সময় গুপ্তছড়ায় একটি জেটি নির্মিত হয়েছিল, কিন্তু তা ব্যবহারের আগে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এখন সরকার আবারও জেটি নির্মাণ করছে। গুণগত মানসম্পন্ন না হলে সেটিও আগের মতো নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। কত দিন তা ব্যবহার করা যাবে বলা মুশকিল। গুপ্তছড়া ও কুমিরার দিকে উন্নত মানের জেটি হলে সহজে স্টিমার দিয়ে মানুষ কাদা না মাড়িয়ে সন্দ্বীপে যাতায়াত করতে পারবে। চেষ্টা চলছে, দেখা যাক কবে আমাদের এই যাতায়াত সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।কিছু পরিকল্পনা সন্দ্বীপের জন্য জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করা প্রয়োজন। আর গৃহীত পরিকল্পনাগুলোকে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করছি।প্রশিক্ষিত জনবল: সন্দ্বীপের মানুষের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক আয়ের বিষয় হচ্ছে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রেরণ। দেশের ১১ শতাংশ রেমিট্যান্স সন্দ্বীপ উপজেলার মানুষ বিদেশ থেকে পাঠাচ্ছে। এটি বেশ বড় অবদান। এই জনশক্তির প্রায় পুরোটাই অদক্ষ শ্রমিক। তাই সন্দ্বীপে অনতিবিলম্বে একটি ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও একটি পলিটেকনিক্যাল কলেজ স্থাপন করা দরকার। সন্দ্বীপে এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তাই অধিকাংশ মানুষকে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিদেশ যেতে হয়। তাতে বেতন কম ও পরিশ্রম বেশি হয় এবং আয়ও কম হয়। দক্ষ জনশক্তি ছাড়া এই সমস্যার কোনো সমাধান নেই। অষ্টম শ্রেণি পাস করে ভোকেশনাল ট্রেনিং নিয়ে সন্দ্বীপবাসীর কর্মসংস্থানের জন্য উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। তাছাড়া হোস্টেলসহ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্থাপিত হলে হাতিয়া, সীতাকুণ্ড, মিরশ্বরাই এসব থানার ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। তাতে উপকূলীয় জনশক্তির প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।এই প্রতিষ্ঠান দুটি করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংসদ সদস্য এই কাজটি খুব সহজে করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। দেশের স্বার্থে বিষয়টি খুবই জরুরি। প্রশিক্ষিত জনবল ছাড়া সন্দ্বীপে অমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।ক্রসড্যাম নির্মাণ: ক্রসড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে সন্দ্বীপকে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। বিশ্ব গবেষণা সংস্থা কর্তৃক বিষয়টি পরীক্ষিত। বেশ কিছুদিন আগে এই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টিতে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। সন্দ্বীপের স্থানীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। এখনই উপযুক্ত সময়। যেহেতু সন্দ্বীপে অর্থনৈতিক শিল্প হচ্ছে, তাই শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়া ও পণ্য বিপণনের জন্য ক্রসড্যামের মাধ্যমে নোয়াখালীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। ২০১২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সন্দ্বীপ সফরের সময় ক্রসড্যামের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। নিশ্চয়ই বিষয়টি তার বিবেচনায় নেওয়াটা সহজ হবে।সন্দ্বীপকে নদীবন্দর ঘোষণা: সন্দ্বীপকে স্থানীয় নৌবন্দর ঘোষণা করার মাধ্যমে সন্দ্বীপ উপকূলীয় অঞ্চলে জেটি স্থাপন করা দরকার। যেহেতু সন্দ্বীপে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, তাই পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য নৌবন্দর খুবই জরুরি। সন্দ্বীপে যদি শিল্প অঞ্চল স্থাপিত করা হয়, সেক্ষেত্রে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য জেটি নির্মাণ করা হলে পণ্য সরবরাহের খরচ কমে আসবে, পণ্যমূল্য কম হবে। সন্দ্বীপকে নৌবন্দর ঘোষণার জন্য নৌ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টিতে প্রধান উপদেষ্টার।দৃষ্টি আকর্ষণ করানো গেলে সহজে বিষয়টির ফলাফল পাওয়া যাবে।অফশোর আইল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বোর্ড: একসময় ওই নামে প্রতিষ্ঠানটি ছিল, বর্তমানে নেই। শুধু সন্দ্বীপের জন্য নয়, সব উপকূলীয় দ্বীপের জন্য এই সংস্থা খুবই জরুরি। সারা বিশ্বে উপকূলীয় দ্বীপের জন্য এই সংস্থা খুবই জরুরি। সারা বিশ্বে উপকূলীয় দ্বীপ একেকটি নদী বা সাগরকূলে গড়ে উঠেছে। আমাদের অতি কাছে সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরকে অনুকরণ করে আমরা দেশকে উন্নত করতে পারি।ভাসানচর: সন্দ্বীপের নিয়ামস্তি ইউনিয়ন ভেঙে গিয়ে গড়ে উঠেছে ভাসানচর। স্থানীয়ভাবে এটিকে ঠেঙ্গারচরও বলা হয়। ভাসানচরের প্রকৃত মালিক সন্দ্বীপবাসী। সন্দ্বীপের বাংলাবাজার ঘাট দিয়ে ভাসানচরে স্পিডবোটে যাওয়া যায়। সময় লাগে আধা ঘণ্টা। অন্যদিকে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট থেকে ভাসানচরে যেতে ট্রলারে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। বর্তমানে ভাসানচরে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থানের জন্য আবাসন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ২০১৭ সালের পরিদর্শন প্রতিবেদনে ভাসানচরকে হাতিয়ার অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। ভাসানচর সন্দ্বীপের অতি নিকটবর্তী মূলভাগ। নদী সিকস্তি আইন ও বিধান অনুযায়ী ভাসানচর সন্দ্বীপের অংশ। কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপে জোর করে ভাসানচরকে হাতিয়ার অংশ দেখানো হয়েছে। সন্দ্বীপবাসীর পক্ষে প্রভাবশালী কেউ নেই। এখন সন্দ্বীপবাসীকে উদ্যোগ নিতে হবে। ভাসানচরকে সন্দ্বীপের অংশ করার জন্য কার্র্যকর পদক্ষেপ দেশবাসী দেখতে চায়।নদীভাঙা পরিবারের গৃহনির্মাণ: সন্দ্বীপের লাখো বাসিন্দা নদীভাঙনের কবলে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। কেউ কেউ নদীর কূলে বেড়িবাঁধের তীরে কোনোভাবে দিন কাটাচ্ছে। নেই কোনো বাসস্থান, নেই কোনো শিক্ষা, নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবা। এমন মানবেতরভাবে জীবনযাপন করে নদীভাঙনের শিকার মানুষগুলো। সরকার সারা দেশে অসহায় মানুষের আবাসন করে কর্মসংস্থান করে দিচ্ছে। ঠিক তেমনি নদীভাঙনের শিকার মানুষের জন্য সন্দ্বীপে আবাসনের ব্যবস্থা করা হোক। এজন্য পরিকল্পনা তৈরি করে সংসদ সদস্যের মাধ্যমে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে আবাসনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।জনপ্রতিনিধি ও ঐক্য: যে কোনো কিছু অর্জন করতে হলে শক্তিশালী, যোগ্য ও সবল জনপ্রতিনিধির প্রয়োজন। আমাদের সব প্রতিনিধি সুন্দরভাবে নির্বাচিত। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও সংসদ সদস্য সবাই বিপুল ভোটে নির্বাচিত। কাজেই আমাদের ভিত্তি অতি শক্তিশালী। তবে প্রয়োজন ঐক্যের। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সবাইকে একই সুরে কথা বলতে হবে। ব্যক্তিগত সুবিধা বাদ দিয়ে সন্দ্বীপের জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করতে হবে। সন্দ্বীপের সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে হবে। তবেই মূল সমস্যা সমাধান সহজ হবে।দ্বীপভাতা চালু: সন্দ্বীপে একমাত্র আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ ছাড়াও আরও চারটি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে একটি সরকারি কলেজ। মহিলা কলেজটি আজও এমপিওভুক্ত হয়নি। জনগণের দাবি দ্রুত মহিলা কলেজটি এমপিওভুক্ত করা। সরকারি হাসপাতালে প্রচুর রোগী রয়েছে, কিন্তু ডাক্তার নেই, যন্ত্রপাতি নোই, নার্স নাই। তাই এলাকাবাসী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। উপজেলা পর্যায়ে অনেক পদে সরকারি কর্মকর্তা নেই। দ্বীপ হওয়ার কারণে অন্য জেলার নিয়োগকৃত সরকারি কর্মকর্তারা সন্দ্বীপে যেতে চান না। সেগুলোয় কয়েক দিন থেকে চলে যান। থাকার সুব্যবস্থা না থাকায় ডাক্তারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা সন্দ্বীপে যেতে আগ্রহী নন। আগ্রহী গোষ্ঠীর জন্য দ্বীপ অঞ্চলগুলোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দ্বীপভাতা চালু করা দরকার। বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ দ্বীপভাতা প্রদান করা হলে সন্দ্বীপসহ সব উপকূলীয় দ্বীপে ডাক্তার, অধ্যাপক ও কর্মকর্তাদের থাকার আগ্রহ বেড়ে যাবে, যা এলাকার জন্য খুবই উপযোগী হবে।সন্দ্বীপের মৌলিক সমস্যা মাদক: সারা দেশের মতো সন্দ্বীপে মাদকের বিস্তার ভয়াবহ। প্রতি ঘরে মাদকের হিংস্র থাবা বিস্তারলাভ করেছে। যুবসমাজ মাদকে নানাভাবে আক্রান্ত। সরকার সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেছে। তাই আমাদের মাদককে ‘না’ বলতে হবে। সরকার জনপ্রতিনিধি, পুলিশ সকলকে এই ব্যাপারে সৎভাবে মাদক নির্মূলে অগ্রসর হতে হবে। সন্দ্বীপে মাদক উৎপাদন হয়না। চট্টগ্রাম বা দেশের অন্য যে কোনো জেলা থেকে সন্দ্বীপে মাদক আসে। পুলিশ ও প্রশাসন সক্রিয় হলে সন্দ্বীপ থেকে মাদক নির্মূল দু-এক দিনের ব্যাপার।অন্যদিকে আমাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী শিক্ষা চালু করতে হবে। সন্দ্বীপে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ক্লাস শুরুর আগে সব ছাত্রছাত্রীকে মাদককে ‘না বলুন’ শীর্ষক বক্তব্য দিতে হবে। সব অভিভাবককে মাদক সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে। সন্দ্বীপের সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি, ক্লাব ও রাজনৈতিক দলকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। মাদক ক্ষতিকর, মাদক ত্যাগ করুন, মাদকের কোনো ব্যবসার সঙ্গে কেউ জড়িত হবে নাÑএই মর্মে সবাইকে অঙ্গীকার করে নিজের জীবন পরিচালনা করতে হবে। বিশেষ করে পুলিশসহ সরকারের সকল স্তরের প্রশাসনকে মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রকৃত মর্মে সতর্ক থাকতে হবে। তবেই সন্দ্বীপের যুবসমাজ দেশ গড়ার জন্য প্রকৃতভাবে নিজেদের প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে।