By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
Reading: উপকূলীয় এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে সাবার করছে দুর্বৃত্তরা
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > উপকূলীয় এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে সাবার করছে দুর্বৃত্তরা
তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলীয় এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে সাবার করছে দুর্বৃত্তরা

Last updated: 2025/10/05 at 3:37 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 19 hours ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌ : সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ও গাবুরা ইউনিয়নের সংযোগস্থল চৌদ্দরশি ব্রিজের পশ্চিমে খোলপেটুয়া নদীর তীরে প্রায় ৩০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা চর বনায়নের গাছ কেটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। দিনের পর দিন নির্বিচারে এসব গাছ কেটে নেওয়া হলেও এ বিষয়ে প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলছেন, দিন-রাত সমানতালে করাত, কুড়াল দিয়ে নিঃশব্দে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে দুই ইউনিয়নের সঙ্গবদ্ধ কয়েকটি চক্র। অপরদিকে নদীর চরে বনায়ন অঞ্চলে যেখানে-সেখানে গর্ত খুঁড়ে মাছ শিকারের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। শিকারিরা তাদের সুবিধার্থে বনায়নের গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলছেন। গর্তে পানি আটকে থাকায় সেখানে নতুন গাছও জন্মাতে পারছে না। ফলে দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে চর বনায়ন। অথচ বহু বছর ধরে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ছোট-বড় দুর্যোগে প্রাচীর হিসেবে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করছে চর বনায়নের এসব গাছ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ বিষয়ে বারবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনকে অবগত করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ফলে গাছ কাটা অব্যাহত থাকায় নদীর চরটি ধীরে ধীরে উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বনের ভেতরে ছোট-বড় নানা প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা গাছের ডালপালা ফেলে রাখা হয়েছে বনের ভেতরে। এ ছাড়া অসংখ্য গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে, যা জোয়ারের সময় পানিতে ভরে যায়। স্থানীয়দের দাবি, এসব গর্তে জোয়ারে রেনুপোনা আসে, যা পরে ধরে বাজারে বিক্রি করা হয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গাবুরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের খোলপেটুয়া, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ গাজী পাড়া ও ওই চরে গড়ে ওঠা বনের কাছাকাছি বসবাসরত পরিবারের এই বনের গাছ নিধনে মেতে উঠেছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, খোলপেটুয়া নদীতে প্রায় ৭০০ বিঘা জায়গা জুড়ে একটি বড় চর জেগে উঠেছে। এখানে প্রথমে স্থানীয়রা বনায়ন শুরু করলেও পরবর্তীতে এটি সুন্দরবনসংলগ্ন হওয়ায় নদীর জোয়ারে ভেসে আসা নানা গাছের ফল চরে আটকে গাছগুলো জন্ম নেয়। এতে নদীর প্রায় ৭০০ বিঘা জায়গা জুড়ে বেড়িবাঁধ ঘেঁষে চরে গড়ে ওঠে সবুজ ঘন বন। তবে গড়ে ওঠা সেই সবুজ বন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
তাদের অভিযোগ, স্থানীয় একটি চক্র প্রথমে ওই চরে যেখানে-সেখানে গর্ত খুঁড়ে মাছ শিকারের সুবিধার্থে ফাঁদ তৈরির জন্য বনায়নের ওই গাছ কাটা শুরু করেন। পরে পার্শ্ববর্তী গাবুরার কয়েকটি এলাকার কিছু মানুষও এই ধ্বংসযজ্ঞে যোগ দেন। এভাবে কয়েক মাসের মধ্যে কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যা আজও চলমান।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামের খোকন সরদার বলেন, ‘আগে চরে প্রচুর গাছ ছিল। এখন চর প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। গাছ কাটার শব্দ যাতে লোকালয়ে না আসে, সেজন্য করাত দিয়ে কাটা হয়। আবার অনেক সময় গাছ কেটে রেখে যায়, দুই-এক দিন পর সেই গাছ নিয়ে যায়। যাতে মানুষকে বোঝানো যায় গাছটা মারা গিয়েছে, তাই মরা গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে।’
স্থানীয় বসবাসকারী তরুণ মোস্তফা আল আমিন বলেন, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ঘেঁষে প্রায় ৭০০ বিঘা জায়গ বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। বনে পশু-পাখি থাকবে, থাকবে নানা ধরনের কীটপতঙ্গ। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে চলবে বাস্তুসংস্থান চক্র। কিন্তু সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আধুনিকতা আর কৃত্রিমতার ছোঁয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে। সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করায় বন থেকে আজ বিলুপ্ত প্রায় পশু-পাখি। যার প্রভাব পড়ছে বাস্তুসংস্থান চক্রে। এমন বাস্তবচিত্র লক্ষ্য করা যায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের বনাঞ্চলে।
পরিবেশ বিদদের মতে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে কৃত্রিম বনায়ন করা হলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে। ঘাটাইলের পূর্বাঞ্চল স্থানীয়দের কাছে পরিচিত পাহাড়ী এলাকা হিসেবে। এ উপজেলার আয়তনের প্রায় একতৃতীংশ ভূমি ছোট বড় অসংখ্য টিলা দিয়ে গঠিত। টিলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বনাঞ্চল, যা ছিল গাছপালায় ঘেরা ঘন জঙ্গল।
একটা সময় মাথা উচু করে এই বনে রাজত্ব করত শাল-গাজারি। সঙ্গে ছিল আমলকি, হরিতকি, বহেরা, অর্জুন, তিতিজাম, আনাইগোটা, খেঁজুর, বট, শিমুল, ছাগলনাদি, চুকাইগোটা, জয়নাগোটা, পিতরাজসহ নাম না জানা নানা বৃক্ষ। আর এ সকল বৃক্ষের সঙ্গে মিতালি ছিল বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আর প্রাণিদের। তিন যুগ আগেও বন্যপ্রাণির ছোটাছুটি আর পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ছিল এ অঞ্চল। কিন্তু সরকারিভাবে বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের কার্যক্রম আঘাত হেনেছে প্রাকৃতিক এ বনভূমিতে। বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ১৩ প্রজাতির দেশীয় গাছ। বনে বিদেশী গাছের আগমনে খাদ্য ও বাসস্থান সংকটে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে পাখি। বনে সারাদিন ঘুরে দু’চারটা শেয়াল ছাড়া অন্য কোনো প্রাণির দেখা মেলা ভার। তবে বন কর্মকর্তার দাবী কিছু পাখি বাসা বাধে। আর শিয়াল, সজারু এবং বানরের দেখা পাওয়া যায় কিছু এলাকায়।
বনবিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, ঘাটাইল উপজেলায় মোট বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর। ৯০ দশকে ‘সামাজিক বনায়ন’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করে বন বিভাগ। আর এই কর্মসূচির বলি হয় এখানকার প্রাকৃতিক বন। বর্তমানে সামাজিক বনায়নের দখলে প্রায় ১৫ হাজার একর বনভূমি। যার পুরোটাই একটা সময় ছিল প্রাকৃতিক বন।
স্থানীয়রা জানায় কর্মসূচি সফল করতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে এক শ্রেণির মানুষ দিয়ে দিনে-রাতে কুঠারের আঘাত চালানো হয় বনে আপনজালা দেশীয় বৃক্ষের গায়ে।
সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামের বয়জৈষ্ঠ্য মোহাম্মদ আলীর ভাষ্য, প্রাকৃতিক বনের অস্তিত্ব মেলে কাগজে-কলমে।সরজমিনে প্রায় পুরোটাই সামাজিক বনায়নের দখলে। বনাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সৃজন করা সামাজিক বনায়নের বাগানগুলো ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ জায়গায়ই দখল করে আছে বিদেশী বৃক্ষ। বৃক্ষের নাম আকাশমনি, মিনজিয়াম, ইউক্লিপটাস।
দেওপাড়া মালেঙ্গা এলাকায় আকাশমনি গাছের বাগানের পাশ দিয়ে বিকেলবেলা গরুর পাল নিয়ে যাচ্ছিলেন মধ্যবয়সি আদিবাসী নারী সীমা রানী। তার ভাষ্য, বিদেশী এই গাছের তেমন কোনো ডালপালা নেই। ফল নেই। বীজের স্বাদ তেতো। পাতা বিষাক্ত। পাতা এতোটাই বিষাক্ত যে ওইসব গাছের নিচে ঘাস পর্যন্ত জন্মায় না।
বাগানের পাশেই টিলার ঢালুতে (স্থানীয় ভাষায় বলে বাইদ) আমনধানের জমিতে পরিচর্যা করছিলেন কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। পরিচর্যা বলতে আকাশমনি গাছের ঝরাপাতা ক্ষেত থেকে তুলে দূরে ফেলছিলেন তিনি। গাছের পাতা পঁচে তো জৈবসার হবে, তাহলে ফেলে দিচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নে তার উত্তর-এই গাছের পাতা ফসলি জমিতে পড়লে ফসল পুড়ে যায়। পাতা বিষাক্ত। পঁচে না।
এদিকে সীমা রানী ও আব্দুর রাজ্জাকের কথার সত্যতা মেলে সৃজন করা বাগানের ভেতর প্রবেশের পর। গাছের নিচে যে স্থানে পাতা ঝরে পড়ে আছে সেইস্থানে ঘাস বা আগাছা জন্মায়নি। আধাঘণ্টা হাটার পরও চোখে পড়েনি কোনো পাখি উড়ার দৃশ্য। অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি গাছে পাখির বাসার।
দেওপাড়া গ্রামের কৃষক হারুন মিয়া জানান,পাখি ফসলি জমিতে আক্রমণ করা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে থাকে। কিন্তু এলাকায় পাখি কমে যাওয়ায় পোকা দমনে ক্ষতিকর কিটনাশকের উপর আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। হারুন মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে সূর্য্য। সন্ধ্যা না নামতেই দূর থেকে ভেসে আসে শিয়ালের হাঁক। এ হাঁক-ডাক বনে নয়, লোকালয়ে।
মাকড়াই গ্রামের বাদল খান বলেন, বনে খাদ্য সংকটে সন্ধ্যা হলেই গ্রামের দিকে পথ ধরে শিয়াল। হানা দেয় গৃহস্থের হাঁস-মুরগীর উপর। কখনো আবার ছাগল-ভেড়া ধরে টানাটানি শুরু করে। অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে মানুষ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারে শিয়াল।
এলাকাবাসি জানায় শিয়ালের এই অত্যাচার আগে খুব একটা ছিলনা। তাদের আশঙ্কা খাদ্যাভাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বন থেকে বিলিন হবে অবশিষ্ট থাকা এ প্রাণিটি।।বন ভেদ করে চলে গেছে ঘাটাইল-সাগরদিঘী সড়ক। গত মাসে এই সড়ক ধরে যাওয়ার পথে শুকনি নামকস্থানে তীব্র দুর্গন্ধ অনুভূত হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পচন ধরা মৃত শিয়ালের দেহ থেকে।
পথচারী বিল্লাল হোসেন বলেন, বনে কোনো প্রাণি
মারা গেলে শিয়াল ছাড়া আর কোনো প্রাণি নেই মরদেহ খাওয়ার। শিয়ালের মাংস শিয়াল তো খায়না। আর কাক তো দূরের কথা কোনো পাখিই এই গাছে বাসা করে না।পাহাড়ী মানুষের দাবী সামাজিক বনায়ন করার আগে বাঘ, মেছোবাঘ, বনশূকর, হাতি, বানর, সজারুসহ বিভিন্ন প্রাণি এবং প্রায় ৩০ প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যেত এই বনে।
টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল)’ নামে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সরকার একটি প্রকল্প চালু করে। দেশের ২৮ টি জেলায় ৫ টি বনাঞ্চলে প্রকল্পটি বাস্তাবায়ন করছে বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর। এতে সম্পৃক্ত ১৬৫ টি উপজেলার ৬০০ গ্রাম। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- নতুন করে ৭৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বনায়ন ও বন্যপ্রাণির আবাস্থল ও চলাচল পথের উন্নয়ন, বিপন্ন বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ, বিপন্ন প্রজাতির গাছপালার লাল তালিকাকরণ, কিছু স্থাপনা নির্মাণ, বনাঞ্চলের আশেপাশের বননির্ভর ৬০০ গ্রামের ৪০ হাজার পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদি।
ঘাটাইল বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এখানে সুফল প্রকল্পটি চালু হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। ছয়টি বিটের মধ্যে প্রাথমিকভাবে বটতলী এবং ধলাপাড়া বিটে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। লাগানো হয় এক লাখ বনজ, ফলদ ও ওষুধি গাছ। আর এসব গাছ লাগানো হয়েছে প্রাকৃতিক বনের ভেতর। শাল-গাজারি গাছের নিচে। এদিকে ‘সুফল’ নামে এই প্রকল্পের কার্যক্রম ভাবিয়ে তুলছে স্থানীয়দের। তাদের শঙ্কা, এই প্রকল্পই একদিন কাল হয়ে দাঁড়াবে প্রাকৃতিক বনে অবশিষ্ট থাকা শাল-গজারির জন্য।
কুশারিয়া গ্রামের রিপন হোসেন বলেন, গজারি গাছের নিচে অন্য গাছের চারা রোপন করার সময় জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে। ফলে বনে অবশিষ্ট থাকা পশু-পাখি বিদায় নিয়েছে। আর কাঠচোরদের কাছে আকর্ষণীয় গাছ হচ্ছে গজারি। প্রকল্পের রোপন করা চারা গাছগুলো একটু বড় হলেই একদিন নাই হয়ে যাবে বড় গজারি গাছ। তিনি আরও বলেন, মৌসুমে গজারি গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল ধরে ফল ও বীজ হয়। সেই বীজ অঙ্কুরিতও হয়। শুধু দৃশ্যমান কোনো গাছ দেখা যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.শেফালি বেগম বলেন, আমি অবশ্যই সামাজিক বনায়নের বিপক্ষে। প্রাকৃতিক বন ছাড়া মনুষ্যসৃষ্ট কোনো বনে পাখি এবং প্রাণি বাস করতে পারে না। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সামাজিক বনায়ন করার ফলে বাসস্থান এবং খাদ্য সংকটে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় বৃক্ষ, পাখি এবং প্রাণিকূল। ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে বনের বাস্তুসংস্থান চক্র। পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হলে একটি দেশে প্রাকৃতিক বনের কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো.আখতার হোসাইন খান বলেন, সামাজিক বনায়নের নামে আমাদের এমন কিছু করা উচিত না যা প্রাকৃতিক বনকে ধ্বংস করবে। সামাজিক বনায়ন করতে হবে রাস্তার আশেপাশে। যেখানে জমি পতিত রয়ে গেছে সেখানে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের জলবায়ু ও মাটি নিয়ে যে সকল গাছ বেড়ে উঠে সে সকল গাছ আমরা ধ্বংস হতে দিতে চাই না।
কিছু প্রশ্ন ছুড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন বলেন, এই সমাজ কি কখনো চেয়েছে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে আমাদের সামাজিক বন করে দাও? কোন আইনে কার পরামর্শে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সামাজিক বনায়ন করা হল? জনগণ কি চেয়েছিল বন কেটে আমরা সামাজিক বনায়ন করি? তাহলে কি সরকারি আদেশে প্রাকৃতিক বন কাটা হয়েছে? বনটা কি আগে থেকেই ল্যাংটা ছিল? তাঁর দাবী এসব প্রশ্নের উত্তর আগে খুঁজে বের করতে হবে। প্রাকৃতিক এই বনে প্রায় একশ প্রজাতির বৃক্ষ ছিল। ছিল বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণি। যা ছিল বনের সৌন্দর্য। সামাজিক বনায়ন করার ফলে প্রকৃতিকে বিবেচনা করা হয়নি। জীববৈচিত্রকে বিবেচনা করা হয়নি। বিবেচনা করা হয়েছে গাছগুলো বড় হলে কেটে সরকার নিবে কিছু আর লোকাল লোকজন নিবে কিছু। এভাবে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করার ফলে আমাদের ইকোসিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদেশী বৃক্ষ আকাশমনি গাছের পাতা জমিতে পড়লে জমি অনুর্বর হয়ে যায়। ফসল নষ্ট হয়ে যায়। যে সকল মাইক্রোফ্লোরা মাটিকে উর্বর রাখে সেই ফ্লোরাগুলো কমে যাচ্ছে। মাটিতে জৈববস্তু যদি না পঁচে তবে সয়েল ফরমেশন হবে না। মাটির গঠন আগলা হয়ে যাবে। খাদ্য একস্তর থেকে আরেকস্তরে যায় সেটা ব্যহত হতে পারে। সবুজ উদ্ভিদ কমে গেলে খাদ্য কমে যাবে, খাদ্য কমে গেলে সবুজ উদ্ভিদের উপর নির্ভর যে প্রাণি তা টিকে থাকতে পারবে না।
তাহলে এই অবস্থান থেকে উত্তরণের উপায় কি? এমন প্রশ্নে জনাব জসীম উদ্দীন বলেন, প্রথমত সামাজিক বনায়ন না থাকলেও সমস্যা নেই। মানুষ এখন আর বনের উপর নির্ভরশীল নয়। আকাশমনি গাছ যা লাগানো হয়েছে আর লাগানো যাবেনা। যদি সামাজিক বনায়ণ করতেই হয় তবে দেশীয় বৃক্ষ লাগাতে হবে। মেয়াদ শেষে একসাথে আর গাছ কাটা যাবেনা। প্রত্যেক বছর বনায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে সামাজিক বনায়নের কুফল বুঝাতে হবে। বুঝাতে হবে প্রাকৃতিক বনের সুফল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল। সবোর্পরি আমরা যদি প্রাকৃতিক বনায়নে ফিরে না যেতে পারি তবে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি খরাসহ অনেক কিছু ঘটতে পারে। হঠাৎ করে বন্যা হয়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে সবকিছু।
সামাজিক বনায়নে লাগানো বিদেশী গাছ যে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তা স্বীকার করে ঘাটাইল বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এখন মিশ্র গাছের বাগান করা হচ্ছে। লাগানো হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির গামার, গর্জন, কদম, চাপালিসহ অন্যান্য বৃক্ষ। এরপরও সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের আগ্রহের কারণে বিদেশী গাছ লাগানো হয়। তার দাবী কিছু পাখি বাগানে বাস করে। শিয়ালের দেখা সব জায়গায়ই মেলে। ধলাপাড়া ও শালিয়াবহ এলাকায় সজারু এবং দেওপাড়া এলাকাতে বানরের দেখা পাওয়া যায়। তবে এখানে বন্যপ্রাণির অভয়াশ্রম নেই বলে তিনি জানান।
উপকূলের সুরক্ষা কবজ বৃক্ষ-লতা বন্দনার সময়-সুযোগ নেই দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী উপজেলার বন বিভাগের দায়িত্বরত বন রক্ষকদের। তাইতো সামাজিক বনায়নের দোহাই দিয়ে রাস্তার দু’পাশের সারি সারি বৃক্ষ নির্বিচারে নিধন করছে। গাছ কাটার বিষয়ে আইনের অভাবে থেমে নেই ব্যক্তিমালিকানাধীন গাছের মালিকরাও। জ্বালানীকাঠ ব্যবহার, ব্যক্তিগত বাড়ি ঘর ও রাস্তাঘাট তৈরি, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো নির্মাণ থেকে যা বন্ধে সুষ্ঠু নীতিমালা নেই। ফলে চরম উদ্বিগ্নে কাটাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেতাগী পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের সবদার চান মুন্সীর মাজার থেকে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স প্রধান ফটক পর্যন্ত সড়কের দুপাশের রেইনট্রি, আকাশমণি, কড়ই, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছিল। সেইসব সারি সারি গাছের বেশিরভাগ গাছ নেই। তবে সড়কের স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের দুই পাশে কাটার পর ডালপালা মোড়ানো, তাছাড়াও কয়েকটি আকাশমণি গাছ মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি গাছে নম্বর দেয়া। এ সড়কের দুই পাশে বড় গাছ থাকায় সব স্থানে রোদ্দুর থাকলেও এখানে সুশীতল ছায়া ছিল। হাসপাতাল অভিমুখি সড়ক হওয়ায় রোগী থেকে শুরু করে সেই ছায়ায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে পরিশ্রান্ত মানুষেরা কিংবা পথচারীরা বসে বিশ্রাম নিতে পারতেন।
উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের বদনীখালী বাজার প্রয়াত এমপি গোলাম সবুর টুলু পার্ক থেকে কনার খাল পর্যন্ত সড়কের দুপাশে লাগানো গাছ নিধন করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে  দরপত্র আহ্বান করে গাছ বিক্রি  করে বন বিভাগ। স্থানীয়রা মনে করতেন, এই লাল চিহ্নিত নম্বরগুলো গাছ গণনার জন্য দেয়া হয়েছে। গাছগুলো কাটা হবে, এ কথা শুনে বিস্মিত হয়ে বদনখালী বাজার এলাকার মানুষ বলেন, এসব আমরা জানি না। এটা জানি, গাছগুলো আমাদের সম্পদ। এগুলো না কাটলে সুফল ভোগ করতাম আমরা সবাই। কিন্ত গাছ বিক্রির এই খবর জানার পরপরই স্থানীয় লোকজনের উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। একসঙ্গে এত গাছ কাটার কথা শুনে অনেকেই বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তাছাড়াও উপজেলার বেতাগী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের দাস বাড়ী থেকে সদর ইউনিয়নের বাসন্ডা পুলের হাঁট ৪ কিলোমিটর সড়ক, কাজীর হাঁট মহাসড়ক থেকে বেড়িবাঁধ হয়ে জলিসা ইউপি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক, বদনীখালী খেয়াঘাট থেকে কাউনিয়া খোয়া ঘাট ২ কিলোমিটার সড়ক ও বদনীখালী থেকে চরখালী ৩ কিলোমিটার একাধিক সড়কের বিভিন্ন এলাকায় লাল কালিতে গাছে নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। গাছগুলো কবে কাটা শুরু হবে-এমন প্রশ্নে বনবিভাগ জানান, সেটা বলা যাচ্ছে না, তবে সাময়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও পর্যায়ক্রমে গাছ কাটা শুরু হবে এবং এক-দেড় বছর সময় লাগতে পারে।
জানা গেছে, ১৫ হাজার ৯৫৭ হেকক্টর আয়তনের এ উপজেলায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৬৪ জন সংখ্যা ও ৪ হাজার ৩৬৯ হেক্টর বন রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তবে উপজেলা বন বিভাগ জানিয়েছে, ১৯৯১ সাল থেকে বন বিভাগ এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৮০ কিলোমিটার সড়কে সামাজিক বনায়নের আওতায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নানা প্রজাতির গাছ  রোপণ করা হয়েছিল। তাদের হিসেব অনুযায়ী এরমধ্যে উন্নয়নের প্রয়োজনে ৫০ কিলোমিটার সড়কে সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অবশ্য সামাজিক বনায়নের বিধিমালা অনুযায়ী অংশীদারীত্বমূলক বনায়নের সর্বনিম্ন বয়স ১০ বছর আর সর্বোচ্চ ২০ বছর। কিন্তু গাছগুলোর বয়স ১৫ থেকে ২০ বছরেরও অধিক, তাই এখন কাটতেই হবে। সবুজে মোড়া হাজারো গাছের সমারোহ এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের প্রাণ। শত শত পথচারীর অক্সিজেন আর আশ্রয়। কিন্তু পথচারী কিংবা এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করছেনা। সবাই যেন, সয়েগেছে তাদের অক্সিজেনদাতা বৃক্ষগুলো কাটার উৎসব দেখার পরেও।
স্থানীয় বাসিন্দা মোকলেচুর রহমান অবাক হয়ে বলেন, ‘এই গাছগুলো আমাদের জীবন বাঁচায়। এদের আশ্রয় করেই আমরা টিকে আছি। আমাদের মানবজাতির অক্সিজেন হলো গাছ। এই গাছগুলো কাটলে আমাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আমাদের কামনা ছিলো গাছগুলো বেঁচে থাকুক।’
কৃষক ও পরিবেশ বান্ধব স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ব্যাপক পরিমানে গাছ ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পেতে তাই অধিক হারে গাছ লাগানোর কথা কিন্ত  সেখানে গাছ কাটার কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত গাছ কাটবে কেন? পরে আবার লাগানোর চেয়ে এগুলো কীভাবে রক্ষা করা যায়, সেই পথ খোঁজা উচিত। প্রশাসন স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরাও থাকব। প্রয়োজনে স্থানীয় মানুষদের বনবিভাগ অন্যভাবে সুবিধা দিক। তবুও সময়ের প্রয়োজনে শত শত গাছ কাটার উদ্যোগ বন্ধ করা জরুরি।’
বেতাগী সরকারি কলেজের ভূগোল বিষয়ের অধ্যাপক মানবেন্দ্র সাধক বলেন, এক্ষেত্রে সরকারি কোন কর্মসূচি থাকলে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে সুষ্ঠুনীতিমালা প্রনয়ন, জনগোষ্ঠিকে নতুন করে বনায়নে উদ্বুদ্ব করণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত উপজেলা এনজিও বিষয়ক সন্বয়ক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মনে করি, সামাজিক বনায়নের এই নীতি থেকে বন বিভাগের বেরিয়ে আসা দরকার। এ রকম মুনাফাকেন্দ্রিক নীতি শেষ পর্যন্ত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগানোর দিকে নিয়ে যায়। পরিবেশ, প্রকৃতি ও বাস্তবায়ন সংস্থানের কথা চিন্তা করে সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্র দেশীয় ঔষধি, বনজ ও ফলদ গাছ লাগানো প্রয়োজন। তাতে করে গাছ না কেটে উপকারভোগী ও বন বিভাগ দুইই লাভবান হতে ও এলাকাও সুরক্ষা হতে পারে।
বেতাগী উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, বিধিমালা অনুযায়ীই গাছগুলো কাটতে হবে। রাস্তায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গাছ লাগানো হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা গাছের পরিচর্যা করেছেন। সামাজিক বনায়ন বিধিমালা-২০০৪ অনুযায়ী, গাছ বিক্রির টাকা উপকারভোগী ৫৫ ভাগ, বন অধিদপ্তর ১০ ভাগ, ভূমির মালিক হিসেবে সওজ ২০ ভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) পাঁচ ভাগ পাবে। বাকি ১০ ভাগ টাকা দিয়ে আবার বনায়ন করা হবে।
সড়কে গাছ কাটার বিষয়ে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রশাসক ফারুক আহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এই বিষয়টি বন বিভাগের দায়িত্বে। তবুও মানুষের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। তবে মানুষ যাতে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন না করে সে বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা বাড়তে হবে এবং সরকারি আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
বন বিভাগ ও পরিবেশকর্মীদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জোয়ারের সঙ্গে সৈকতে বালি জমে গাছের শিকড় আটকে বনের গাছ মারা যাচ্ছে। তবুও আশানুরূপ তেমন কোনো প্রকল্প কিংবা উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা সমুদ্র তীরের সংরক্ষিত বনের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য অবলোকনের জন্য ছুটে যান গঙ্গামতি, লেম্বুর বন, ফাতরার বনের পাশে। এ বনে রয়েছে গেওয়া, কেওড়া, ছইলা, নারিকেল, ঝাউবনসহ অসংখ্য প্রজাতির গাছ। প্রভাবশালী ও দুষ্কৃতকারীদের নজর পড়ায় এর অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় স্থানীয়রা।
×
কুয়াকাটা পরিবেশকর্মী ইমতিয়াজ তুষার বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের দুই দিকে বন রয়েছে। এই বনায়ন একটি সৌন্দর্য বহন করে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় বিশাল ভূমিকা রাখে। এই বন আগুনে পুড়িয়ে এবং গাছ কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয়ে বন প্রহরীদের সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসায়ী, পরিবেশকর্মী সবার সক্রিয় হওয়া দরকার। যাতে এই এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা যায়। তিনি আরও বলেন, বন রক্ষা করা না গেলে একসময় এই কুয়াকাটা সৈকত বিলীন হয়ে যাবে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোফরেস্টি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাসুদুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন সাগরের পানির স্তর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। বনায়নের দিকে সুনজর রাখতে হবে। নতুন নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে বনায়ন সৃষ্টি করার বিকল্প নেই।
×
উপকূল বন বিভাগের বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, সবুজ বেষ্টনী একটি কন্টিনিউয়াস প্রসেস। উপকূলীয় যেসব বনায়ন ইতোপূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছে সেগুলো টেকসই করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বন বিভাগ। যেসব চর জেগে উঠছে সেগুলোকে বনায়নের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এভাবেই ক্রমান্বয়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হচ্ছে।
অপরদিকে বরগুনার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ হরিণঘাটা ম্যানগ্রোভ বনটিকে ধ্বংস করছে ভূমিদস্যু ও বনদস্যুরা। প্রায় ১৫টি পরিবার পরিকল্পিতভাবে বনের গাছ কেটে জমি দখল করে তৈরি করেছে বসতবাড়ি, মাছের ঘেরসহ কৃষি জমি। একরের পর একর জমি দখল করছে ভূমিদস্যুরা।
এর আগে ২০১৩ সালে হরিণঘাটা সংরক্ষিত বনের একই অংশে গাছপালা কেটে প্রায় ৯ একর জমি দখল করে ৩৫টি পরিবার। ক্রমশ সেই সংখ্যাটি বেড়ে এখন প্রায় শতাধিক পরিবার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন বিভাগ ওই দখলদারদের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করলেও উচ্ছেদের বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেই।
বরগুনার তালতলী থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন টেংরাগিরি বা ফাতরার বন। এ বনের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের ছোবল আর ভাঙনের ফলে এ বনটি এখন বিলীনের পথে। ৬২ বছরে এ বনের শত কোটি টাকা দামের দুই হাজার একর জমিসহ কয়েক লক্ষাধিক গাছ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানা যায়। গত ২৫ মার্চ এ বনের বেহুলা নামক অংশে ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। আগুন বনে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ও সেচ মেশিন দিয়ে ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বন বিভাগ।
এ ঘটনায় তেমন কোন ক্ষতি হয়নি দাবি করে বন বিভাগের তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মতিয়ার রহমান স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার কথা জানান। তবে স্থানীয় পরিবেশকর্মী আরিফ রহমান বলেন, সংরক্ষিত এই টেংরাগিরি বনের মধ্যে প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলেছে। এতে বনের অনেকটা অংশ পুড়ে গেছে। কিছুদিন আগেও এরকম আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পরও আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
এ ছাড়া সাগরঘেঁষা এখানকার বনের মূল আকর্ষণ ঝাউবন হলেও অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে তা বিলীনের পথে। এখানকার সৈকতের পাশে বেসরকারিভাবে ৩৬০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলায় সৈকতের তীর থেকে বালি উত্তোলনের ফলে ঝাউগাছ ভেঙে সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে।
২০১৪-১৫ সালে এ সৈকতে ১০ হেক্টর ও ২০২০-২১ সালে ৭ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছের চারা রোপণ করে বন বিভাগ। কিন্তু ২০১৮-১৯ সাল থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটায় শুরু হওয়া বালিক্ষয়ে ভাঙতে শুরু করে ঝাউবন, যা সংরক্ষণের দায়িত্ব না নিলে উপকূলীয় এলাকা ও সৈকত বিপন্ন হতে পারে বলে মনে করেন সাগরপাড়ের বাসিন্দারা।

জন্মভূমি ডেস্ক October 6, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article দশমিনায় নৌকা তৈরি করেই সংসার চলে
Next Article পাইকগাছায় পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহবায়ক কমিটি ঘোষনা

দিনপঞ্জি

October 2025
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
« Sep    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলীয় ২ কোটি মানুষের মারাত্মক ঝুঁকি জলবায়ু পরিবর্তন

By করেস্পন্ডেন্ট 13 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর ব্যাপক ফলন

By জন্মভূমি ডেস্ক 11 hours ago
বাগেরহাট

শরণখোলায় উপজেলা বিএনপি’র মানববন্ধন

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলীয় ২ কোটি মানুষের মারাত্মক ঝুঁকি জলবায়ু পরিবর্তন

By করেস্পন্ডেন্ট 13 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর ব্যাপক ফলন

By জন্মভূমি ডেস্ক 11 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার উপকূলেএক দল কাটে গাছ, অন্যরা খোঁড়ে গর্ত

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?