সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সাতক্ষীরার শ্যামনগর সহ উপকূলীয় মানুষের টেকশই মজবুত পাউবোর বেড়িবাঁধের দাবিতে কান্না আর কতদিন বছরের পর বছর যায় যুগের পর যুগ যায় কিন্তু উপকূলীয় মানুষের দু চোখের কান্না যায় না যে সরকার আসুক শান্তনা সবাই দেয় কিন্তু বেড়িবাঁধ কেউ দেয় না প্রতিবছর একাধিকবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে হয় প্রকৃতি দূর্যোগের সাথে মোকাবেলা করে উপকূলের মানুষ বেঁচে আছে।জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী মানুষের জীবনযাত্রা। নদীর এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে, কিন্তু জীবনযুদ্ধে উপকূলের নারীদের দুঃখ শেষ হয় না। নোনা পানির তাদের পরিবর্তনের জীবনচিত্র
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির চেহারা বদলে যাচ্ছে বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের। পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। প্রতিনিয়ত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনজীবিকা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। টিকে থাকতে হচ্ছে সংগ্রাম করে। প্রকৃতির গতিপ্রকৃতি পাল্টে যাওয়ায় জনজীবনে এসেছে পরিবর্তন। প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে টিকে থাকতে হচ্ছে তাদের। প্রাকৃতিক বৈরী প্রভাবের ফলে জীববৈচিত্র্যও ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। সময়ের বিবর্তনে উপকূল অঞ্চলের জীবনধারায় এসেছে নানা পরিবর্তন। প্রতিটি মানুষের পেশা বদলে যাচ্ছে। বছরের পর বছর যারা মাছ বিক্রি করত তারা অন্যান্য পেশার দিকে ঝুঁকছে।
কেউ কেউ শহরের দিকে পা বাড়াচ্ছে। কৃষক আর চাষাবাদের দিকে এগোয় না। চাষাবাদের মাধ্যমে দেনাপাওনা পরিশোধ করা কষ্টকর হয়ে ওঠে। তারা পিতৃভূমি হারিয়ে ফেলছে। ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে। বিশুদ্ধ খাবার পানিরও সংকট দেখা দিচ্ছে। দেশের উপকূলের ১৯ জেলায় ৪ কোটির বেশি মানুষের বসবাস; যা দেশের আয়তনের শতকরা ৩২ ভাগ। উপকূল অঞ্চলের একটি সম্প্রদায় মুন্ডা। ধারণা করা হয়, জঙ্গল পরিষ্কারের জন্য ভারত থেকে ৩০০ বছর আগে এ ভূখণ্ডে আসে তারা। বর্তমানে এদের অবস্থান খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি জায়গায়। তার মধ্যে খুলনার কয়রা ও ডুমুরিয়া এবং সাতক্ষীরার দেবহাটা ও তালা উপজেলা উল্লেখযোগ্য। পেশা হিসেবে এরা বেশিরভাগই দিনমজুরি করে। অনেকে আবার সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। সুন্দরবনের ওপর নির্ভর বলতে মূলত মধু সংগ্রহ, মাছ শিকার এসব। তবে বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাদের স্বাভাবিক জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
প্রতিকূল পরিবেশে কঠোর পরিশ্রম করতে পারায় তৎকালীন শাসকরা সুন্দরবনের গাছ কেটে বসতি গড়তে মুন্ডাদের এ দেশে এনেছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তারপর আর ফিরে যাওয়া হয়নি তাদের। আজও সুন্দরবন ঘিরেই তাদের জীবনমরণ। তবে ভালো নেই তারা। সুন্দরবনসংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কালিঞ্চি, ভেটখালী, তারানিপুর, সাপখালী, ধুমঘাট, মুন্সিগঞ্জ, কাশিপুর, কচুখালী এলাকায় বসবাস করে মুন্ডারা। জেলার দেবহাটা ও তালা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মুন্ডাদের বসতি। সাতক্ষীরা উপকূলে মুন্ডা জনগোষ্ঠী রয়েছে আড়াই সহস্রাধিক। এ ছাড়া খুলনার কয়রা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় তাদের বসতি রয়েছে। বাংলাদেশের বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনেও এদের বসতির চিহ্ন মেলে। কম্পাট মুন্ডা, খাঙ্গার মুন্ডা, খাড়িয়া মুন্ডা, পাথর মুন্ডা, দেরগে মুন্ডা, সাঙ্কা মুন্ডা ও মাঙ্কী মুন্ডা- বাংলাদেশে এ সাত মুন্ডা গোষ্ঠীর উল্লেখ পাওয়া যায়। সুন্দরবন এলাকার মুন্ডাদের জীবনজীবিকা বনের ওপরই নির্ভরশীল।
মুন্ডা পরিবারের ৯৫ শতাংশ ভূমিহীন। অশিক্ষা, অজ্ঞতা ও অভাব পুঁজি করে সৃষ্টি হয়েছে এ সম্প্রদায়ের কষ্টের জীবন। জমিজমা যা ছিল তা-ও হারিয়েছে নানা কারণে। বর্তমানে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হয় অধিকাংশকে। আগে মুন্ডাদের প্রধান জীবিকা ছিল সুন্দরবনের গাছ কাটা। বিশেষ করে গোলপাতা ও গরান কাঠ কাটা ছিল তাদের অন্যতম কাজ। বর্তমানে অনেকে আদি পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত। বাঙালির মতো মুন্ডারা কৃষিকাজে নিয়োজিত হলেও অধিকাংশই ভূমিহীন। তাই এ অঞ্চলের মুন্ডারা দিনমজুরির ভিত্তিতে মাছ ধরে। অন্যের জমিতে বেতনভুক কাজ, নৌকা নির্মাণ, কাঠমিস্ত্রির কাজ করে। পরিবেশের বিপর্যয়ে প্রভাব পড়েছে মুন্ডা নারীদের জীবনেও। মুন্ডা নারীরাও আজ ঘরের বাইরে নানা কাজ করে। জাল বোনা, সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ- কাঁকড়া ধরা, মৌ সংগ্রহসহ সব ধরনের কাজে দেখা যায় মুন্ডা নারীদের। এ ছাড়া গৃহপালিত পশুর দেখভাল, কৃষি থেকে শুরু করে নানা কাজে অংশ নেয় তারা।
‘ইটভাটার কাজ কী আমরা জানতাম না, আইলার পর আমাদের চারপাশের অনেকেই এখন ইটভাটায় কাজ করি। কার ইচ্ছা করে বলুন নিজের বাড়ি ছেড়ে দূরে কাজ করতে যেতে। তাও আমাদের যেতে হয়, পেটের ক্ষুধা তো কারও কথা শোনে না। আগে কত ভালো সময় ছিল, আমরা চাষাবাদ করতাম। যদিও অন্যের জমিতে ফসল ফলাতাম তাও পরিবারের সঙ্গে থাকতে তো পারতাম। আমাদের সম্প্রদায়ের যারা এ অঞ্চলে থাকি, তাদের বেশিরভাগেরই সেই অর্থে চাষের জমি নেই। যতটুকু আছে, আমরা চেষ্টা করতাম ফসল ফলাতে। আমরা প্রতিদিন মজুরির ভিত্তিতে কাজ করি, সেটা হতে পারে কৃষিকাজ, মাছ চাষ কিংবা অন্য কোনো টুকিটাকি কাজ। আর সেজন্যই আমরা এ এলাকায় দিনমজুর হিসেবে পরিচিত।
এখনও কিন্তু আমরা দিনমজুরি করি, তবে আমাদের এখানে ফসল উৎপাদন কম কারণ কয়েক দিন পরপর ঘূর্ণিঝড়, বন্যার প্রকোপ ঘটে। আর এসব কিছু মানেই আপনারা জানেন আমাদের লোকালয়ে লবণপানির প্রবেশ। পুরো এলাকায় আপনি যেখানে যাবেন সেখানে অতিরিক্ত লবণাক্ততার জন্য জমির ফসল হয় না, এ গল্প শুনবেন। আমাদের এ অঞ্চলের চারদিকে নদীতে যখন বন্যা হয়, পাড় ভেঙে গিয়ে লবণপানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। তবে অনেকে আবার চিংড়ি চাষের জন্য নিজেরাও নালা কেটে লবণপানি প্রবেশ করায়। এ সমস্যা না হয় আমরা কিছু একটা করে বন্ধ করতে পারি, কিন্তু দিনে দিনে নদীর পানির সঙ্গেও তো লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ সমস্যা কী করে সমাধান করব, তা জানা নেই। আর সমস্যা তো একটা না, ওই আইলার পর থেকে নানান ধরনের রোগ আমাদের দেখা দিচ্ছে। চুলকানি থেকে শুরু করে পেটের রোগ, জ্বর কী নেই তার মধ্যে। আমাদের মেয়েরা আরও বেশি ধুঁকছে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যায়। এ অঞ্চলে শুধু আমরা মুন্ডারা না, সব মেয়ের বাচ্চা জন্মানোর সময় সিজার করতে হয়। যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও বিপদের মুখে। আর এসবের ফলস্বরূপ আমাদের ছেলেমেয়েরাও ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না, হয়তো তারাও ভবিষ্যতে আমাদের মতো দিনমজুর হবে।’ কথাগুলো বলছিলেন শরৎ মুন্ডা, যার বাস খুলনার কয়রা উপজেলার টোপখালী। পেশায় দিনমজুর।
পোড়াকাটলা এলাকার বাসিন্দা মিতা রানী (৪৫) বলেন, ‘আমার তলপেট খুব ব্যথা করে, কোমরের অংশ অবশ হয়ে যায়, মনে হয় পেটের ভেতর থেকে কিছু একটা ছিঁড়ে নিচে নেমে আসছে। তা ছাড়া প্রচণ্ড সাদা স্রাব হয় আর চুলকায়। ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। আর প্রসাব করতেও খুব কষ্ট হয়। গ্রামের ডাক্তাররা জরায়ু কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এ বয়সে অপারেশন করাতে স্বামী রাজি হননি। আপাতত চিকিৎসা নিচ্ছি। কিন্তু খুব বেশি হলে ১০-১৫ দিন ভালো থাকি।’
শেফালী বেগম (৩৮) বলেন, ‘আমার আমার বাড়ি সাতক্ষীরার দাতিনাখালী। ফলে জন্ম থেকেই নোনা পানির সঙ্গে বসবাস। তবে আগের তুলনায় যেন নোনাভাব বেড়েছে। আস্তে আস্তে নোনাভাব এত বাড়ে যে পুকুরের পানি মুখেই নিতে পারি না। অথচ তাতেই গোসলসহ সব কাজ করতে হয়। আমাদের চর্মরোগ ও জরায়ুতে সমস্যা হচ্ছে।’
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কসংকেত পেলেই ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে হয় উপকূলের মানুষকে
পরিবেশকর্মীদের একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, উপকূলীয় এলাকায় নোনা পানিতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নারীরা। এতে তাদের জরায়ুতে নানা রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, গর্ভকালীন খিঁচুনি, গর্ভপাত এমনকি অপরিণত শিশু জন্মের হার বেড়েছে। এ ছাড়া দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজ, গোসল, কৃষি, গবাদি পশু পালন, চিংড়ির পোনা ধরাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে নারীরা লিউকোরিয়াসহ সাধারণ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা, স্বাস্থ্যকর্মী এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক নারীকে অল্প বয়সে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জরায়ু অপসারণ করতে হচ্ছে।
তারা বলছেন, বাংলাদেশের এ অংশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া এবং সে লবণাক্ত পানির অত্যধিক সংস্পর্শের ফলে এ সমস্যা বেড়েই চলেছে। শারীরিক নানা অসুস্থতার কারণে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। আবার কম বয়সে মুখে কালো ছোপ পড়া এবং শরীরের রঙ কালো হয়ে যাওয়ায় বাল্যবিবাহ বেড়েছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বোঝামুক্ত হতে চান অভিভাবকরা, সাতক্ষীরার অনেক গ্রামেই অবিবাহিত কোনো কিশোরী নেই বললে চলে।
করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকার সময় বাড়ির কাজ আর খেলাধুলা করেই কাটছিল হাওয়ালভাঙ্গি আটুলিয়ার মনিরা খাতুনের (১৩)। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় আত্মীয়ের বাড়িতে নেওয়া হয়। সে জানতে পারে একটু পরই তার বিয়ে। এ উপকূলে তার মতো বাল্যবিবাহের শিকার আছিয়া খাতুন (১৭), কারিশমা (১৬), সোনিয়া খাতুন (১৫), লাকি আক্তার (১৭) ও তানিয়া (১৬)।
বাল্যবিবাহের এ চিত্র বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম খুলনায় খুবই সাধারণ। দারিদ্র্য এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাল্যবিবাহের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। করোনা মহামারির পর তা বহুগুণে বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের অন্যতম সাতক্ষীরায় বাল্যবিয়ে প্রায় ঘরে ঘরে। তা ছাড়া লবণাক্ততার কারণে কৃষিজমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুরুষের বড় একটা অংশকে পরিবার ছেড়ে শহরে কাজ করতে যেতে হয়। যাদের সে সামর্থ্য নেই, তারা গ্রামে অলস সময় কাটায়।
২০১৪ সালে পরিচালিত বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে নদী ও ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাবে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে পানীয় জল ও সেচের ঘাটতি বাড়বে, যা প্রায় ২৯ লাখ দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা অ্যাডভান্সিং আর্থ অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সের গত বছর প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ অভিবাসী বা স্থানান্তরিত হবে। নিম্নভূমির দেশ হওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ বিশেষভাবে সংবেদনশীল বলে জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।
সোহানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলে লবণাক্ততা বেড়েছে। আর লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক নানা সমস্যা দেখা যায়। লবণের জন্য মেয়েদের মাসিক প্রক্রিয়ার ম্যানেজমেন্ট স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। লবণপানি ব্যবহারের ফলে মেয়েদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি আমাদের গবেষণার পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে। শ্যামনগরের প্রতিটি গ্রামে জরায়ুসংক্রান্ত রোগে ভুগছে এমন নারীর সন্ধান পাওয়া যাবে।’
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নারীদের জরায়ুসংক্রান্ত অসুখের তীব্রতা নোনা পানি প্রবণ গ্রামগুলোয় বেশি। লবণপানির এ সমস্যা আসলে কতটা গভীর তা আরও স্পষ্ট করে বোঝা যায় ‘ডিস্ট্রিবিউশন অব গ্রাউন্ডি ওয়াটার স্যালানিটি অ্যান্ড ইটস সিজনাল ভ্যারিয়াবিলিটি ইন দ্য কোস্টাল অ্যাকুইফারস অব বেঙ্গল ডেল্টা’ শীর্ষক গবেষণায়। এতে বলা হয়, ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততা উপকূলের আশপাশের বেশিরভাগ অঞ্চলে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। বেশিরভাগ উপকূলীয় অঞ্চলে মূল বা দ্বিতীয় জলবায়ুতে লবণাক্ততার পরিমাণ (ক্লোরাইড গণনা) শুকনো মৌসুমে ১০৩-১২,৪৩৩ এবং বর্ষাকালে ৩৪ থেকে ১১,৩৬৬ পর্যন্ত থাকে। বর্ষাকালে হয়তো দুয়েকটি সবজি লাগানো যায়। বাকি সময় তো এখানকার মাটিতে ঘাসও হয় না। তাহলে অত শাকসবজি কোথায় পাবে? ১২ মাস তরকারি কিনে খাওয়ার ক্ষমতা তো সবার থাকে না। অবশ্য নদীতে নামলে টুকটাক খাবার মাছ হয়। তবে সেই প্রবণতা কমে আসছে। কারণ নদীতে মাছের তুলনায় মাছ ধরার লোক বেশি এখন।
পরিবেশকর্মী কৌশিক কুমার দাস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার টেকসই সমাধানের জন্য ত্রাণ সহযোগিতার চেয়ে দক্ষ মানুষ বেশি তৈরি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিশেষ করে শিল্পপতিদের কাছে বিনীত অনুরোধ- তারা যেন সবকিছুতে ব্যবসায়িক চিন্তা না করে পরিবেশকেও ভালোবাসেন, যাতে আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সুন্দর ও নির্মল রাখতে পারি। আমরা সবাই মিলে কাজ করে জলবায়ু সুবিচার নিশ্চিত করব।’
উপকূলীয় মানুষের টেকশই মজবুত বেড়িবাঁধের দাবিতে কান্না আর কতদিন
Leave a comment