By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: উপকূলের মানুষ বহুমাত্রিক ‌ঝুঁকি থেকে স্থায়ী সমাধান ‌ চায়
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > উপকূলের মানুষ বহুমাত্রিক ‌ঝুঁকি থেকে স্থায়ী সমাধান ‌ চায়
তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলের মানুষ বহুমাত্রিক ‌ঝুঁকি থেকে স্থায়ী সমাধান ‌ চায়

Last updated: 2025/12/01 at 3:44 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল যেমন সংকটাকীর্ণ তেমনি সম্ভাবনাময়। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, জীবিকা নির্বাহে ঝুঁকি, অভাব অনটনে বিক্ষুব্ধ-বিপর্যস্ত এক জনপদ এটি। ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি, জোয়ার-ভাটার বিস্তৃতি ও লবণাক্ততার প্রভাবÑ এ তিনটি নির্দেশকের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মোট উপকূলীয় জেলা ১৬টি। এর মধ্যে পূর্ব উপকূলে রয়েছে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর; মধ্য উপকূলের অন্তর্ভুক্ত ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, শরীয়তপুর এবং পশ্চিম উপকূলের আওতাভুক্ত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা। উপকূলীয় জেলাগুলোতে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা সাড়ে ৩ কোটির বেশি। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসসহ মহামারি সৃষ্টিকারী নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে একরকম যুদ্ধ করে টিকে আছে। প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট নানাবিধ কর্মকা-ের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও নানা ধরনের পানিবাহিত রোগের সাথে লড়াই করে চলতে হয়। অভাব-অনটন ও মানবেতর জীবনযাপন যেখানে অধিকাংশ মানুষের নিত্য সঙ্গী। সেই সাথে সুপেয় পানীয়জলের অভাব, ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি, মাটি ও পানিতে অতিমাত্রায় লবণাক্ততা, নানা রকমের দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিসহ নানাবিধ কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকৃত মানুষের জীবন ও জীবিকার ধারা যেমন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে, ঠিক তেমনি এ অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কর্মকা- হয়েছে মন্থর।
পরিসংখ্যান বলছে, উপকূলীয় জেলাসমূহের ১৩১টি উপজেলা লবণ পানির আগ্রাসনে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। মাটি ও পানি অতিমাত্রায় লবণাক্ততার জন্য লবণ সহনশীল কৃষি বা মৎস্য চাষে মানুষের জীবনযাত্রার মানের দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। বৈরী প্রতিকূলতা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততার প্রভাব প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে ফেরে উপকূলের শ্রমজীবী মানুষকে। লবণাক্ততার তীব্রতা অত্যাধিক বেশি হওয়ায় ফসল উৎপাদনে হিমশিম খেতে হয় উপকূলবাসীকে। পশ্চিম উপকূলের আওতাভুক্ত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার মানুষের চিংড়ি চাষ প্রধান উপজীব্য হলেও চিংড়ি ঘেরে পানি সরবরাহকৃত নদীসমূহে অধিক পলি জমা হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময়ে বেশিরভাগ চিংড়ি ঘের পানি পায় না। ফলে চিংড়ি চাষিরা সময়মত চিংড়ির পোণা ঘের বা জলাশয়ে ছাড়তে পারে না। এছাড়া চিংড়ির নানা ধরনের রোগবালাইয়ের আধিক্যের কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের চিংড়ি চাষিরা চিংড়ি চাষে লাভবান তো দূরের কথা সারাবছরে বিনিয়োগের টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে না। চিংড়ি উৎপাদনে আনুষঙ্গিক সকল খরচের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে চিংড়ির বাজারমূল্যের নেতিবাচক প্রভাব চিংড়ি চাষিদের অনেকটা কোণঠাসা করেছে। তার উপর চিংড়ি চাষিদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভিটেমাটি হারিয়ে সবকিছু নিঃস্ব হওয়ার মতো উদাহরণ তো হরহামেশাই চোখে পড়ে।
টেকনাফের নাফ নদের মোহনা থেকে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত নদী রায়মঙ্গল-কালিন্দী পর্যন্ত উপকূল অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার। এছাড়া নদীমাতৃক এই দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০০ নদ-নদী রয়েছে। বর্তমানে যেসব নদী রয়েছে সেগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২,১৫৫ কি. মি.। দেশের আনাচে কানাচে জালের মতো বিস্তৃত এসব নদ, নদী ও সমুদ্রের কারণে দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ বাংলাদেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব আজ বিশ্বব্যাপী পরিলক্ষিত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১৮৫টি আবহাওয়াজনিত তীব্র দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৩.৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আবার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ-বিপদাপন্নতায় পৃথিবীতে বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের উপর কারও হাত নেই ঠিকই কিন্তু দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাতেও বেশ ঘাটতি রয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ষাটের দশকে দেশের ১৩ জেলায় ৫৮১০ কি. মি. উপকূলীয় এলাকায় ১৩৯টি পোল্ডার বা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। অবাক হলেও সত্যি, স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূল সুরক্ষায় নতুন একটি পোল্ডারও তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। পাকিস্তান আমলে তৈরি বেড়িবাঁধ সংস্কার আর পুনঃনির্মাণেই কেটে গেছে অর্ধশত বছরেরও বেশি সময়। দীর্ঘকাল আগে নির্মিত এসব বাঁধ সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা এখন আর সামাল দিতে পারছে না। ৭১০ কি. মি. দীর্ঘ উপকূল রেখার প্রায় ১৫,০০০ বর্গ কি. মি. উপকূলীয় এলাকা এখনো অরক্ষিত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রমতে, ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়সহ একের পর এক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে উক্ত বাঁধসমূহের বেশিরভাগ অংশ নাজুক হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র সুপার সাইক্লোন সিডরে উপকূলীয় ৩০ জেলার ২৩৪১ কি. মি. বাঁধ বিধ্বস্ত হয়। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিলীন হয় ৩৯১ কি. মি. এবং ১৯৫০ কি. মি. বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার ৩৮টি পোল্ডারের ১৬৫১ কি. মি. বেঁড়িবাধের মধ্যে ৬৮৪ কি. মি. বিধ্বস্ত হয়। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে উপকূলীয় ১০ জেলার ৪৭৮ কি. মি. বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে বিলীন হয়ে যায় এবং আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬৭৮ কি. মি.।
সম্প্রতি উপকূলবাসী চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে পার করেছে সুপার সাইক্লোন ‘মোখা’কে মোকাবেলা করার সময়। আমাদের সৌভাগ্য, মোখা এদেশের উপকূলে আঘাত হানেনি। আঘাত হানলে মোখার প্রভাবে যে ক্ষয়ক্ষতি হতো সেটা বিগত দিনে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়সমূহের সব ক্ষয়ক্ষতিকে হার মানাতো। এটা জোর গলায় বলা যায়, বিশ্বমন্দার এই সময়ে মোখার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতিকে কাটিয়ে ওঠাও বেশ দুরুহ হতো। মোখা বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানেনি ঠিকই কিন্তু পরবর্তীতে যে মোখার মতো অন্য কোনো সুপার সাইক্লোন আসবে না, সেটার আশঙ্কা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অধিক গুরুত্বের সাথে আমলে নেওয়া উচিত। মোখা আঘাত হানলে সরকারের পক্ষ থেকে দুর্যোগ পরবর্তী জনগণকে যে ত্রাণ বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো সেই অর্থ উপকূল অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজে ব্যয় করা যেতে পারে, যাতে করে পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলা করতে এলাকাবাসী কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়। শুধুমাত্র দুর্যোগ কাছে এলেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়, যথোপযুক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি কিংবা বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকার সংবাদ। এরপর দুর্যোগ কেটে গেলে আর সেই বেড়িবাঁধের খবর থাকে না। সরকার হয়তোবা বাজেট দেয়। কিন্তু সেই বাজেট কাগজে-কলমেই থেকে যায়। বাধ্য হয়ে উপকূল অঞ্চলে সেসব বাঁধ জীবনের প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে তোলে। স্থানীয় জনগণের এমন অভিযোগ রয়েছে যে, তারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ সংস্কার করে আর বিল তুলে নেয় সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তারা ভুক্তভোগীদের মাথা বিক্রি করে নিজের আখের গোছাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। দুর্যোগ আবির্ভূত হওয়ার পর অপ্রতুল ত্রাণ নিয়ে সেগুলো বিতরণ নাটক এবং ফটোসেশনেই বেশি আগ্রহ দেখিয়ে থাকে জনপ্রতিনিধিরা। সেজন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেট বরাদ্দ এবং সেই বরাদ্দ যেন যথাযথভাবে ব্যয় হয় সেজন্য নির্ভরযোগ্য মনিটরিং সেল গঠন করার দাবিও করেছে স্থানীয় জনগণ। অবশ্য দুর্যোগকালীন সময়ে উপকূলীয় অঞ্চলের দুর্গত মানুষদের সীমাহীন দুর্ভোগ তাদের অনেকটা সয়ে গেছে। তারা ভালোভাবেই বুঝে গেছে, প্রকৃতির সাথে লড়াই করে আপন চেষ্টাতেই নিজেদের প্রতিরক্ষা বলয় নিজেদেরই তৈরি করে বেঁচে থাকতে হবে। প্রকৃতির সাথে লড়াই করতে করতে তারা আবিষ্কার করছে লড়াইয়ের নতুন নতুন পদ্ধতি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা দেখে আসছে, সরকারি ত্রাণ বা সুযোগ-সুবিধা তাদের পর্যন্ত আসতে আসতে সেগুলো নাই হয়ে যায়। বহুজনের হাত বদলে যখন তাদের কাছে পৌঁছায় তখন সেই ত্রাণের আর অস্তিত্ব থাকে না। এছাড়া নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বা জনপ্রতিনিধিদের যারা ত্রাণ বিতরণ করে তাদের মুখ চিনে ত্রাণ কার্যক্রম জনগণকে হতাশ করে। তাই তারা সরকারি ত্রাণের আশা বাদ দিয়ে জোর গলায় সকলে একাত্মতা প্রকাশ করেছে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের।
স্বভাবতই বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত নদীগুলো অনেক বেশি খরাস্রোতা হয়। এসব নদীর দুইপাশে দীর্ঘস্থায়ী কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ ছাড়া মাটির বাঁধ কোনভাবেই টেকসই হয় না। এজন্য খরাস্রোতা নদীসমূহে টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের শতকরা ৫০ ভাগ গাছের এখন আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেসব গাছ হাওয়া হয়ে গেছে। ফলে ৭১০ কি. মি. উপকূলীয় এলাকা লবণাক্ততা ও ঝড় জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেজন্য উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী করার প্রকল্প জোরদার করতে হবে। নতুন বাঁধ নির্মাণ করে সেখানে সবুজ বন তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের জন্য সাইক্লোন শেল্টারের নামে ৭০৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যা সাড়ে ৩ কোটিরও বেশি বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রতিজন মানুষের জন্য বরাদ্দ দুই বর্গফুট জায়গা। এত অল্প জায়গায় একজন মানুষের জন্য বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব নয়। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য বরাদ্দকৃত এই জায়গা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তার উপর দুর্যোগ আঘাত হানার ৫৬ ঘণ্টা আগে আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে জনগণের যেতে বলা হয়। জায়গার অপ্রতুলতার কারণে অনেকে যেতে চায় না। ফলে দুর্যোগ আঘাত হানার কারণে অনেকেরই মৃত্যু হয়। তাই উপকূল অঞ্চলে সাইক্লোন শেল্টারের সংখ্যা অবশ্যই বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশের উপকূলাঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। উপকূলের বহুবিচিত্র ব্যবহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ম্যানগ্রোভ বন, মাছ শিকার, চিংড়িচাষ সংক্রান্ত কর্মকা-, পর্যটন, নৌবাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, জাহাজ ভাঙা, তেল ও গ্যাস সন্ধান ইত্যাদি। প্রায়শই উপকূলের প্রাকৃতিক সম্পদ প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বহুবিধ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশে সত্যিকারের সমন্বিত উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় পরিবেশগত বিবেচনাগুলির সমন্বয় বিধানের কিছুটা অভাব রয়েছে। উপকূলীয় জমির অবাধ বেসরকারিকরণ পরিবেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। মৎস্যজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধি, উপকূলীয় সম্পদের অতিব্যবহার, পানির মানের অবনতি, ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন গ্রুপের রেষারেষি, চিংড়ি ঘের তৈরির জন্য ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস, প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত সীমাবদ্ধতা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, জোরপূর্বক ভূমি দখল, নদীশাসন, জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি প্রধান সমস্যাগুলির অগ্রাধিকারভিত্তিক সুরাহা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় অঞ্চল সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত হলেও কিছু বিষয় নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। পরিবেশবাদীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৪% শতাংশ এলাকা নিমজ্জিত হতে পারে। তার নেতিবাচক প্রভাবে সাড়ে ৩ কোটি লোক জলবায়ু শরণার্থীতে পরিণত হবে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকৃত মানুষদের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছে বাংলাদেশ। অসময়ে প্রবল বৃষ্টি, বর্ষাকালে অনাবৃষ্টি, লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির অভাব, শস্য কমে যাওয়া, নদীভাঙন, ফসলহানিসহ নানাবিধ কারণে উপকূলবাসী জীবনধারণে হিমশিম খাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে প্রায় প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক লোক গৃহহীন হয়ে যাচ্ছে। এ সকল বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে উপকূলবাসীকে রক্ষা করার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলোকে স্থানীয় মৎস্য ও কৃষিজীবী মানুষের জীবন ধারার সঙ্গে সমন্বয় করার পরিকল্পনা করতে হবে। উপকূলীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বিশেষ নজর দিতে হবে। শহর রক্ষা বাঁধ, সড়ক, রাস্তা, বাজার, আবাসন, স্যানিটেশন, স্কুল, কলেজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানির টেকসই পরিকল্পনা ইত্যাদির বিষয়ে কঠোর হতে হবে। উপকূল অঞ্চলকে ঘিরে যে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে সেই শিল্পকে আরও মজবুত করতে উপকূল অঞ্চল রক্ষায় দায়িত্ব নিতে হবে। সমুদ্রকেন্দ্রিক দেশের অন্যতম দু’টি প্রাকৃতিক সম্পদের একটি হচ্ছে সুন্দরবন এবং অন্যটি পর্যটন সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ কক্সবাজার। এই দু’টি প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়। বিশেষ করে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারসহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিঅর্থনীতি ও বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের সুরক্ষা নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি আগামী দিনে বঙ্গোপসাগরকেন্দ্র্রিক সমুদ্রঅর্থনীতি বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি দাতা সংগঠনগুলোসহ সকল সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অতিদ্রুত গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এদেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ভূমিধস, বন্যা প্রবণতা, দারিদ্র্য ইত্যাদি নির্দেশকের উপর ভিত্তি করেই এসব জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। একাধারে হিমালয়ের বরফ গলার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার সমস্যা, নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রতিবছরই এদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের সমুদ্র তীরবর্তী জেলাসমূহে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা ও আর্সেনিক দূষণ গ্রাস করেছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় এ অঞ্চলগুলোতে প্রতি বছর শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। সমুদ্রের লবণাক্ত পানির প্রভাবে কৃষি জমিতে লবণাক্ততার বৃদ্ধি ঘটে। উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের জেলাসমূহ ভৌগোলিকভাবে নদী বিধৌত। এসব এলাকায় প্রতি বছর বন্যা ও নদীভাঙনে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে খরা প্রবল আকার ধারণ করে। রাজশাহী বিভাগের বেশ কিছু এলাকা আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকাগুলোকে ভূপ্রাকৃতিক গঠন বৈচিত্র্যের কারণে ব্যাপক ভূমিধস হয়। সেইসাথে বন্যা ও ভূমিকম্প এসব এলাকার মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঢাকা বিভাগের মেঘনা নদীর উপরের জেলাসমূহ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাসমূহ ভূপ্রাকৃতিকভাবে অনেকটা ভূমিকম্পনপ্রবণ। এসকল জেলার বাড়তি জনসংখ্যার জন্য অতিরিক্ত দালানকোঠা ও গৃহ নির্মাণের জন্য জায়গাগুলো ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া এ অঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় শুষ্ক মৌসুমে খরা লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ দেশের প্রতিটি বিভাগের অধিকাংশ জেলা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব জেলায় ঘন ঘন সংঘটিত নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষ কর্মহীন হচ্ছে, সর্বোপরি মানুষের দৈনন্দিন জীবন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ ১৫টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নবম স্থান সুস্পষ্ট জানান দেয় এদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত শোচনীয় অবস্থা সম্পর্কে। এদেশে প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, ভূমিকম্প, আর্সেনিক দূষণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও নদীভাঙনে। তবে নদীমাতৃক এই দেশের প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে বন্যা। ভৌগোলিক অবস্থান, ভূতাত্ত্বিক কাঠামো, অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত, একই সময়ে প্রধান নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি, নদীতে পলল সঞ্চয়ন, পানি নিষ্কাশনে বাধা, ভূমিকম্প, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ইত্যাদি প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট কারণে প্রায় প্রতি বছরই এ দেশে বন্যা হয়ে থাকে। দেশে ঘটে যাওয়া ছোট ও বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস ও কালবৈশাখীতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। নদী ভাঙনের ফলে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। বজ্রপাত ও বর্তমান সময়ে ভয়াবহ এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা এবং বজ্রপাতে মৃত্যুর আশঙ্কা দুইটিই বেড়ে চলছে। তাপপ্রবাহ বেশি হওয়ায় চলতি বছর বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। গবেষণা বলছে, বজ্রপাতের কারণে বেশিরভাগ প্রাণহানি বর্ষা পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষা ঋতুতে ঘটে। উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে আবহাওয়ার ধরন ও বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটছে। এ কারণেই বজ্রপাত বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলোয় বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্গত। ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিতে ব্যাপক হারে বজ্রপাতের অন্যতম কারণ। দেশটির দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আবার এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস দেশটিতে প্রবেশ করে। আবার উত্তরে আছে পাহাড়ি এলাকা এবং কিছু দূরেই আছে হিমালয়। যেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। এই দুইটা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে বাতাসে গরম ধূলিকণা বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাত বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণা বলছে, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বজ্রপাতের আশঙ্কা বাংলাদেশেই বেশি। মেঘের সঙ্গে তাপের একটা সম্পর্ক আছে। তাপ বেশি হলে মেঘে কেমিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল প্রোপার্টি বেশি হবে। বজ্রপাতও বেশি হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্পও বাংলাদেশে বার বার আঘাত হানছে। মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার ভূমিকম্পে দেশে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা আছে। সেইসাথে ভূমিকম্পে অপূরণীয় ক্ষতি যেমন- বাড়িঘর, দালানকোঠা চুর্ণবিচুর্ণ হওয়া, গাছপালা ও নদীর পাড় ভেঙ্গে যাওয়া, নদীর বাঁধ জলাধার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটা, মাটিতে ফাটল, পাহাড়ি ধস, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা আছে। কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে কেঁপে উঠছে স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্পে। এর অনেকগুলোর উৎপত্তিস্থলও দেশের ভেতরে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে এদেশেও হতে পারে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প। আর তেমন কোনো ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি কী হবে তা কল্পনাও করা যায় না। কারণ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ যতটুকু সক্ষমতা অর্জন করেছে, তার তুলনায় ভূমিকম্প মোকাবেলার প্রস্তুতি বা সক্ষমতা একেবারেই ক্ষীণ। রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সঠিক সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে একেক ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন চিহ্নিত করতে সরকারের সহযোগী সংস্থাগুলোর উদ্যোগে সমন্বিত কারিগরি জরিপ করা দরকার। না হলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি এবং এর ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
বন উজাড় করাও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আরেকটি কারণ। কেননা, বনভূমি পৃথিবীর ফুসফুস। একটি দেশের প্রকৃত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। সেখানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ১৫.৫৮ শতাংশ। বৃক্ষরাজি পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে পরিবেশকে নির্মল ও শীতল রাখে। কিন্তু মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে ক্রমাগত বৃক্ষের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকায় বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্প হ্রাস পেয়ে তাপমাত্রা বাড়ছে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের রিপোর্টে বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ কমেছে ৬,০৭,৬২০ একর। এ বিশাল বনভূমি বিদ্যমান থাকলে প্রায় ৭৫ মেগা টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানো যেত বলে ধারণা করা হয়। ওই সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে চট্টগ্রামে (৫৭,৫৭০ একর)। বিশ্বব্যাপী বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। মূলত মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে যত্রতত্র নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার এদেশে মানুষ বাসস্থান তৈরি করতে বৃক্ষ নিধন করছে। এছাড়া অবৈধ দখল, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ফার্ম হাউজ, দোকান, রিসোর্ট ইত্যাদি কাজে বন উজাড় করছে। ফলে এ দেশের পরিবেশ দিন দিন চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে এবং সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহ তারই উদাহরণ
মূলত প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কিছু কারণই এ অসহনীয় তাপপ্রবাহের জন্য দায়ী। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত পরিবর্তন, উপমহাদেশীয় উচ্চ তাপবলয়, বৃষ্টিপাত হ্রাস এবং এল নিনোর সক্রিয়তা। তাপপ্রবাহের জন্য মানবসৃষ্ট কারণগুলোর উল্লেখযোগ্য হলো: অতিমাত্রায় বন উজাড়, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ব্যাপক হারে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, উন্মুক্ত স্থানের অভাব, পুকুর-জলাশয় ভরাট, জনঘনত্ব ইত্যাদি। তাপপ্রবাহ আবহাওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হওয়ার সত্ত্বেও ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এবারের চিত্রটি ভিন্ন মাত্রা প্রকাশ পেয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, সমন্বয়হীনতা, জলাশয় ও উন্মুক্তস্থান ভরাট, অতিরিক্ত যানবাহন ও জনঘনত্ব, অপরিকল্পিত স্থাপনা, সবুজের আচ্ছাদন হ্রাস, অত্যধিক হারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, ইট-কংক্রিটের অতিরিক্ত বসতি ইত্যাদি বাংলাদেশের প্রধান নগর এলাকাগুলোর অতিরিক্ত তাপমাত্রার জন্য দায়ী। নগর এলাকায় জনঘনত্ব ও আবাসিক স্থাপনার ঘনত্ব অধিক। এখানে অল্প জায়গার ভিতরে অনেক মানুষের রান্নাবান্না, চলাচলে ব্যবহৃত যানবাহন ব্যাপক আকারে বায়ুদূষক গ্যাস উৎপন্নের পাশাপাশি শহর এলাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। যানবাহনগুলোর ইঞ্জিনে ত্রুটি, মানসম্মত জ্বালানি ব্যবহার না করা, ফিটনেসের অভাব ইত্যাদি কারণে নগর এলাকায় এসব যানবাহন তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের নবতর সংযোজন হলো সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহ। তাপপ্রবাহজনিত এ প্রাকৃতিক পরিস্থিতি সহজে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন একটি কাজ। তবে তাপপ্রবাহজনিত হতাহত থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হয়ে শহর এলাকার সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন ও সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে উদ্যোগ নিতে হবে। পর্যাপ্ত ও সঠিক বৃক্ষের পরিমাণ বাড়াতে হবে ও সেগুলোর যথাযথ পরিচর্যা করতে হবে। জনগণকে শহর এলাকার ভবনের ছাদবাগানে উৎসাহিত করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলো হলেও এর ক্ষতিকর দিকগুলো গরিব দেশের উপর গিয়ে পড়ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিল্পোন্নত দেশের জনগণের অতিমাত্রার ভোগবিলাসিতা, যন্ত্রনির্ভরশীলতার ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য সফলের জন্য পৃথিবীতে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। এসব দেশের কলকারখানা ও যানবাহন থেকে অতিমাত্রায় কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে তাপমাত্রা। তাতে মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। সমুদ্র ও নদীর কম্পন বাড়ছে। ফলে নদী ও সমুদ্রের উপকূলে ভাঙনের হারও বেড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের বেশিরভাগ নদী শুকিয়ে যাচ্ছে।

জন্মভূমি ডেস্ক December 2, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article সাতক্ষীরার বাজারে উঠতে শুরু করেছে খেজুরের নতুন
Next Article মাছের জেলা ‘সাতক্ষীরা’

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

মাছের জেলা ‘সাতক্ষীরা’

By জন্মভূমি ডেস্ক 27 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলের মানুষ বহুমাত্রিক ‌ঝুঁকি থেকে স্থায়ী সমাধান ‌ চায়

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার বাজারে উঠতে শুরু করেছে খেজুরের নতুন

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

মাছের জেলা ‘সাতক্ষীরা’

By জন্মভূমি ডেস্ক 27 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার বাজারে উঠতে শুরু করেছে খেজুরের নতুন

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

By করেস্পন্ডেন্ট 5 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?