By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: উপকূলে ‌বেকারত্ব দূর করবে কাঁকড়া চাষ
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > উপকূলে ‌বেকারত্ব দূর করবে কাঁকড়া চাষ
তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলে ‌বেকারত্ব দূর করবে কাঁকড়া চাষ

Last updated: 2025/11/25 at 2:30 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌: আমাদের দেশে কাঁকড়ার চাহিদা না থাকলেও বিদেশে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে জীবন্ত কাঁকড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকং ও মালয়েশিয়ায় কাঁকড়া রফতানি শুরু হয়। তখন কতিপয় রফতানিকারক নিজ উদ্যোগে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও খুলনা অঞ্চল থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করে সেসব দেশে পাঠাতেন।
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর চাহিদা ও মূল্য বাড়ায় চিংড়ি চাষীদের মাঝে কাঁকড়া চাষ সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ে। বিগত বছরগুলোতে এদেশ থেকে ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ মেট্রিক টন কাঁকড়া তাইওয়ান, কোরিয়া, হংকং, চীন প্রভৃতি দেশে রফতানি হয়। কাঁকড়া চাষের সুবিধা হচ্ছে, এতে পরিশ্রম তেমন নেই, উৎপাদন ব্যয়ও তুলনামূলক কম। এ খাত থেকে রফতানি-আয়ের পরিমাণ বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
সম্প্রতিক উপকূলবাসীর মধ্যে কাঁকড়ার উচ্চ বাজারমূল্য নতুন আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় নদী ও সংলগ্ন খালসমূহে চিংড়ি পোনা সংগ্রহকারীদের জালে প্রচুর।
আমাদের দেশে কাঁকড়ার চাহিদা না থাকলেও বিদেশে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে জীবন্ত কাঁকড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকং ও মালয়েশিয়ায় কাঁকড়া রফতানি শুরু হয়। তখন কতিপয় রফতানিকারক নিজ উদ্যোগে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও খুলনা অঞ্চল থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করে সেসব দেশে পাঠাতেন।
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর চাহিদা ও মূল্য বাড়ায় চিংড়ি চাষীদের মাঝে কাঁকড়া চাষ সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ে। বিগত বছরগুলোতে এদেশ থেকে ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ মেট্রিক টন কাঁকড়া তাইওয়ান, কোরিয়া, হংকং, চীন প্রভৃতি দেশে রফতানি হয়। কাঁকড়া চাষের সুবিধা হচ্ছে, এতে পরিশ্রম তেমন নেই, উৎপাদন ব্যয়ও তুলনামূলক কম। এ খাত থেকে রফতানি-আয়ের পরিমাণ বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
সম্প্রতিক উপকূলবাসীর মধ্যে কাঁকড়ার উচ্চ বাজারমূল্য নতুন আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় নদী ও সংলগ্ন খালসমূহে চিংড়ি পোনা সংগ্রহকারীদের জালে প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়ার পোনা ধরা পড়ে। তাছাড়া জোয়ারের পানিতে কাঁকড়ার পোনা চিংড়ির ঘেরে প্রবেশ করে সেখানে বড় হয়। ফলে চিংড়ির সাথে বাড়তি সম্পদ হিসেবে প্রচুর কাঁকড়াও পাওয়া য়ায়। রফতানি বাণিজ্যে স্থান করে নেয়ার কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোতে কাঁকড়া চাষের ব্যাপকতা শুরু হয়েছে। কাঁকড়া রফতানি ক্রমান্বয়ে বাড়ায় বর্তমানে একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশে পাওয়া বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের মাড ক্রাব বা শীলা কাঁকড়ার আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও বেশি মূল্য, প্রাকৃতিক উৎসে পোনার প্রাচুর্যতা, কম সময়ে বাজারজাত করার সুযোগ ইত্যাদি কারণে উপকূলীয় চাষীদের কাছে কাঁকড়া চাষ ও ফ্যাটেনিং ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে কাঁকড়া চাষ ও ফ্যাটেনিং পুরোপুরিভাবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণের ওপর নির্ভরশীল। চাষের ব্যাপকতা বাড়ার সাথে সাথে শি মুনাফা লাভের আশায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে নির্বিচারে মা কাঁকড়া, পোনা এবং অপরিপক্ক ছোট কাঁকড়া আহরণের প্রবণতা বাড়ছে। তাই কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বর্তমানে প্রচলিত প্রাকৃতিক উৎস থেকে নির্বিচারে অপরিপক্ক বা ছোট কাঁকড়া ধরার প্রবণতা রোধ করার জন্য এর পোনা উৎপাদন এবং চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। অপরিপক্ক ও ছোট কাঁকড়া আহরণের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ক্রমবর্ধমান কাঁকড়া শিল্প মুখ থুবড়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তাই কাঁকড়া চাষকে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল রাখতে হলে চিংড়ির ন্যায় হ্যাচারিতে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন প্রয়োজন।
বর্তমানে কাঁকড়া চাষের চেয়ে ফ্যাটেনিং করে বাজারজাতকরণ বেশি লাভজনক। সাধারণত অপরিপক্ক স্ত্রী কাঁকড়া (অপরিপক্ক গোনাড এবং এই ওজন ১৭০ গ্রামের নিচে) এবং অপুষ্ট পুরুষ কাঁকড়া (কম মাংসল এবং ওজন ৩৫০ গ্রামের নিচে) বিদেশে রফতানি হয় না। এগুলো স্থানীয় বাজারে খুব কম দামে বিক্রি হয়। এ জাতীয় কাঁকড়াসমূহ উপযুক্ত পরিবেশে ২-৪ সপ্তাহ লালন-পালন করে গোনাড পরিপক্ক বা মাংস পরিপুষ্ট করাকে ফ্যাটেনিং বলা হয়।
কাঁকড়ার জন্য দো-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। পুকুরের আয়তন ০.১-১.০ হেক্টর হলে ভালো। আয়তন কম হলে কাঁকড়া মজুদ করতে সুবিধা হয়। তাছাড়া ব্যবস্থাপনার দিক দিয়েও সুবিধা। নদী বা সমুদ্রের কাছে হলে খুবই ভালো হয়। এতে জোয়ার-ভাটার সঙ্গে পানি ওঠানামা করা যায়। পানি ওঠানোর জন্য গেট থাকা ভালো। পলায়নপর স্বভাবের জন্য প্রায় ১.৫ মিটার উঁচু বাঁশের বানা (পাটা) দিয়ে পুকুরের চারপাশ ঘিরে ফেলা হয়। বানা প্রায় আধা মিটার মাটির নিচে পুঁতে দিতে হয়, যাতে কাঁকড়া পুকুরের পাড় গর্ত করে পালিয়ে যেতে না পারে। মাটির পিএইচের ওপর ভিত্তি করে পাথুরে চুন গুঁড়া করে সারা পুকুরে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। মাটির পিএইচ ৭-৭.৫ এর মধ্যে থাকলে হেক্টরপ্রতি ১২৫ কেজি পাথুরে চুন দিতে হবে। চুন ছিটানোর পর জোয়ারের পানি তুলতে হবে এবং সাত দিন পর হেক্টরপ্রতি ৭৫০ কেজি জৈব সার (গোবর) দিতে হবে। জৈব সার প্রয়োগের তিন দিন পর হেক্টরপ্রতি ২৫ কেজি ইউরিয়া এবং ১৫ কেজি টিএসপি সার প্রয়োগ করা হয়। অজৈব সার প্রয়োগের তিন-চার দিন পর পুকুরে কাঁকড়া মজুদ করা হয়।
মজুদ ও ফ্যাটেনিংয়ের জন্য প্রতিহেক্টর ঘেরে ১০ হাজারটি অপরিপক্ব স্ত্রী কাঁকড়া মজুদ করা যায়। কাঁকড়ার ওজন ১৮০ গ্রাম বা তার বেশি হলে ভালো হয়। কারণ এ ওজনের কাঁকড়ার দাম সবচেয়ে ভাল
মজুদের পর নিয়মিত খাবার দিতে হবে। খাবার হিসেবে শতকরা ২৫ ভাগ তেলাপিয়া মাছ এবং ৭৫ ভাগ গরু-ছাগলের ভুঁড়ি অথবা শতকরা ৫০ ভাগ তেলাপিয়া মাছ এবং ৫০ ভাগ বাগদা চিংড়ির মাথা (মাংসল অংশ) প্রতিদিন পুকুরে সরবরাহ করতে হবে। কাঁকড়ার দেহের ওজনের আট ভাগ হারে প্রথম সাত দিন এবং পরবর্তী দিনগুলোতে পাঁচ ভাগ হারে খাবার সরবরাহ করতে হবে। ফ্যাটেনিংয়ের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি নয়, বরং গোনাডের পরিপুষ্টতাই মুখ্য। প্রচুর পরিমাণে প্রাণিজ মাংসল খাদ্য সরবরাহ করতে হয়, যা দ্রুত পচনশীল। তাই পুকুরের পানির গুণাগুণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার সরবরাহ করলেও পানি নষ্ট হতে পারে। পানির গুণাগুণ যাতে নষ্ট না হয় সে কারণে এবং প্রয়োজনবোধে অমাবস্যা বা পূর্ণিমার ভরা জোয়ারের সময় ৪-৭ দিন পানি পরিবর্তন করতে হবে।
কাঁকড়া মজুদের ১০ দিন পর থেকে দুই-তিন দিন পর পর কাঁকড়ার গোনাড পরিপুষ্ট হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হয়। কাঁকড়াকে আলোর বিপরীতে ধরে দেখতে হবে যে, কাঁকড়ার ভেতর দিয়ে আলো অতিক্রম করে কিনা। যদি কাঁকড়ার ভেতর দিয়ে আলো অতিক্রম করতে না পারে তাহলে বুঝতে হবে গোনাড পরিপুষ্ট হয়েছে। বিপরীতে গোনাড পরিপুষ্ট না হলে কাঁকড়ার দুই পাশের পায়ের গোড়ার দিক দিয়ে আলো অতিক্রম করবে। সাধারণত গোনাড পরিপুষ্ট হলে পুকুরে পানি ওঠানোর সময় কাঁকড়া গেটের কাছে চলে আসে। পুষ্ট কাঁকড়া স্কুপনেট বা টোপ দিয়ে প্রলুব্ধ করে ধরতে হবে। কাঁকড়া সম্পূর্ণভাবে আহরণের জন্য পুকুরের পানি নিষ্কাশন করতে হবে। ধরার সঙ্গে সঙ্গে কাঁকড়াকে বিশেষ নিয়মে বেঁধে ফেলতে হবে। অন্যথায় কাঁকড়ার চিমটা পা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। খুলনার পাইকগাছা ও সাতক্ষীরার দেবহাটায় কাঁকড়া চাষ বা ফ্যাটেনিং বহুল প্রচলিত।
কৃত্রিমভাবে কাঁকড়ার ডিম ফোটানোর ব্যবস্থা করা, যাতে কাঁকড়া মজুদের সময় জোগান স্বাভাবিক থাকে। ২. ৪০-৮০ গ্রামের জুভেনাইল কাঁকড়াগুলোকে বাজারে সরাসরি (দালালের মাধ্যমে নয়) বিক্রিযোগ্য করে তোলা। ৩. প্রতিবছর শীতকালীন অস্থায়ী বাজার তৈরী হয় বিভিন্ন খালের মুখে, সপ্তমুখীর কাছে। বাজার মানে দু-তিনটি নৌকা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। এসব নৌকার কাঠের পাটাতনের তলায় বরফ রাখা থাকে। ভয় সাথে নিয়ে সারাদিন সারারাত খাঁড়িতে বসে কাঁকড়া ধরে, তারপর অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে নৌকাশুদ্ধ কাঁকড়া বিক্রি করে দেয়। অন্যান্য মাছ ধরা নৌকাগুলোও তাদের মাছ এখানে বিক্রি করে। এখান থেকে দালালদের মাধ্যমে রুপালি ফসল পৌঁছায় বাজারে। জীবনের কোনরকম ঝুঁকি ছাড়াই এই মধ্যবর্তী বিক্রেতারা প্রকৃত মাছমারাদের থেকে দ্বিগুণ লাভ লুটে নেয়। তাই সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দিয়ে তাদের বাজার যাতে তৈরী করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ৪. সদ্য খোলস ছাড়া কাঁকড়া যা ওয়াটার ক্র্যাব নামে পরিচিত এবং অপরিণত স্ত্রী কাঁকড়াগুলোকে প্রজনন অবস্থা পর্যন্ত পালন করা বা ফ্যাটনিং করার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা। ৫. রফতানিযোগ্য কাঁকড়াগুলোর সঠিক বাজারের ব্যবস্থা করা। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বাজার, রাস্তা ও মিষ্টি জলের ব্যবস্থা আরও রফতানিকারকদের ডেকে নিয়ে আসবে।৬. জীবিত অবস্থায় ও প্রক্রিয়াজাত অবস্থায় কাঁকড়ার সঠিক রফতানির ব্যবস্থা করা। এর জন্য ছিদ্রছাড়া এবং ছিদ্রযুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা প্রয়োজন। প্রয়োজন ছোট ছোট দ্বিচক্রযান, যা কিনা শুধু এই ফসল পরিবহনের জন্য বিশেষভাবে তৈরী করা।
কাঁকড়া চাষের পুকুরের তলায় জমে থাকা বিষাক্ত ক্ষতিকর গ্যাস শুঁষে নেয়ার জন্য উপযুক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করতে হবে। জিওলাইট প্লাস দিতে হবে প্রতিটি ফ্যাটিনিং চাষের পর। এরা যেহেতু জীবিত খাবার এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার খায় ফলে খামারের তলায় অভুক্ত খাবার থেকে গ্যাস তৈরী হতে পারে। উপযুক্ত রাসায়নিক দিয়ে সেই অবাঞ্ছিত গ্যাসকে শোষণ করা সম্ভব হবে। প্রতি দু’বার ফসল তোলার পর পুকুরের তলায় জমে থাকা পলি তুলে ফেলে পাথুরে চুন দিয়ে সাত দিন পুকুরে ফেলে রাখার পর আবার পানি ঢোকাতে হবে।
কাঁকড়া গর্ত কেটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে। এই স্থানান্তর এড়াতে স্লুইস গেটসহ খামারের চারদিকে বাঁশের পাটা ও নাইলন জালের বেড়া দিতে হবে, যা মাটির নিচে অন্তত ২ ফুট এবং মাটির উপরে অন্তত ৩ ফুট থাকে। প্লাাস্টিক সীট পাড়ের ওপর দিয়ে তার ওপর মাটি দিয়ে পাড় তৈরী করলেও কাঁকড়া পাড় ফুটো করে চলে যেতে পারবে না।
যেহেতু কাঁকড়া একে অপরকে খেয়ে ফেলতে পারে- এ প্রবণতা এড়াতে নিয়মিত অতিরিক্ত খাদ্যের যোগান রাখা জরুরি। খোলস যত তাড়াতাড়ি শক্ত হবে ততই বিক্রয় উপযোগী হবে, সে কারণে পানির গুণাগুণ উপযুক্ত মাত্রায় রাখা জরুরি। খামারে নরম কাঁকড়াগুলোর প্রয়োজনীয় লুকানোর জায়গা রাখা জরুরি। ভাঙা পাইপ, অব্যবহৃত টায়ার ইত্যাদি ব্যবহৃত হতে পারে লুকানোর আস্তানা হিসেবে, ১৫ সেমি ব্যাসার্ধের লম্বা পাইপের টুকরাগুলো খামারের তলদেশে ছড়িয়ে রাখতে হবে। খামারের মাঝখানে উঁচু মাটির ঢিবি বানিয়ে তাতে লবণাম্বু উদ্ভিদের কিছু চারা যেমন বাণী, হেঁতাল, গেঁওয়া লাগালে কাঁকড়া যেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তেমনি পানির অতিরিক্ত খাদ্য শোষণ করে নিয়ে জলকে দূষণমুক্ত রাখে। কাঁকড়া বিক্রিযোগ্য হলে গোণ বা কোটালের সময় আঁটেলি বসিয়ে তা ধরা যেতে পারে অথবা দোন লাগিয়েও ধরা হয়।
কাঁকড়া বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগে প্রতিটিকে বাঁধা হয় সরু নাইলন বা প্লাস্টিকের দড়ি অথবা ভেজা খড় দিয়ে, তার পরে ঝুড়িতে রাখা হয়। ঝুড়িগুলো ভেজা চটে বস্তা চাপা দেয়া থাকে। যাতে জলীয়ভাব বজায় থাকে। এই ধরনের ঝুড়িতে যত বেশি বাতাস চলাচল করবে, তত বেঁচে থাকার হারও বাড়বে। পরিবহনের সময় জলীয়ভাব ঠিক রাখতে পারলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত কাঁকড়াগুলো বেঁচে থাকে। সর্বোপরি পরিবহনের সময় কখনই সরাসরি সূর্যের আলো না পড়াই ভালো। ৫০ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের একটি ঝুড়িতে প্রায় ৩০০-৫০০ গ্রাম কাঁকড়া (যার ক্যারাপেস ২.৫ সেমি চওড়া) পরিবহন সম্ভব। যেহেতু শ্যাওলা বা ঝাঁঝি পচনশীল তাই অনেকসময় দূরবর্তী স্থানে ১০০% জীবিত পরিবহনের স্বার্থে মোহনার জলে তুলা ভিজিয়ে কাঁকড়া পরিবহনের ঝুড়িতে দিলে কাঁকড়ার নড়াচড়াও বন্ধ হবে। ভিজে কাঠের ভুষি প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া যায়। কাঁকড়া রফতানির ক্ষেত্রে ৫০-১২০ মিমি চওড়া তার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে আহরণের পর খোলামুখ পাত্রে ২০-৫৩ কিমি সড়কপথে পরিবহন করে ৫৫-১০০% বাঁচার হার লক্ষ্য করা গেছে।
কাঁকড়ার মোট ওজনের ৩৬-৩৮% দাঁড়ি ও পা, ২২-২৪% খোলস, দেহের বাকি অংশে পাওয়া মাংস ২৯-৩৬%। আবার দাঁড়ি ও পায়ের মধ্যে মাংসের পরিমাণ ৩৩-৪২%, যা পুরোটাই মাংসজ প্রোটিন হিসেবে খাওয়ার যোগ্য। মাংসের মধ্যে ভালো মাত্রায় প্রোটিন ও মুক্ত আমিনো অ্যাসিড আছে। প্রসেসিং সেন্টারে পাওয়া কাঁকড়ার খোলস থেকে যে সমস্ত ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পাওয়া যায় সেগুলো হলো- কাইটিন, কাইটোসান এবং গ্লুকোজ আমিনো হাইড্রক্লোরাইড বিশ্বের বাজারে যার মূল্য অপরিসীম। কাইটিন একটি প্রাকৃতিক জৈব রাসায়নিক পদার্থ, যা বিভিন্ন প্রাণির (চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদির) বহিঃকঙ্কালে (খোলস) প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত থাকে। জাপানে কাইটিন খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। রোগ প্রতিষেধক ক্ষমতা বাড়াতে, বার্ধক্য বিলম্বিত করতে, আরোগ্য লাভের পথে এবং জৈবছন্দ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
একসময় গ্রামের মানুষের কাছে সাপের মতো পরম শত্রু ছিল কাঁকড়া। কিন্তু এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সম্ভাবনাময় এক সম্পদের নাম কাঁকড়া। কাঁকড়া দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন দুয়ার উম্মোচন করেছে। এ দেশের খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর, সাগরে প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়া ছিল। কিন্তু কাঁকড়া আহরণে মানুষের তেমন আগ্রহ ছিল না। ঘের বাণিজ্যের ‘সাদা সোনা চিংড়ি ও কাঁকড়া’ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী জাতীয় মাছ ইলিশ ও চিংড়ির পরেই কাঁকড়ার স্থান। একসময় চিংড়ি মাছ ছিল, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির প্রতিভূ। এখন চিংড়ির স্থান সর্বত্র দখল করছে, জলজ প্রাণী কাঁকড়া। উৎপাদন কমে যাওয়া এবং চিংড়ি মাছ চাষে নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা পেশার পরিবর্তন করছেন। কম খরচে, কম শ্রমে ব্যাপক হারে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। কাঁকড়ার দাম আর চাহিদা ইলিশ ও চিংড়িকে পেছনে ফেলে অগ্রসর হচ্ছে। বড় সাইজের প্রতি কেজি কাঁকড়ার দাম হাজার টাকারও বেশি। প্রতিটি পরিপূর্ণ কাঁকড়ার ওজন এক কেজি থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়। উপকূলীবর্তী এলাকার লবণপোড়া ফসলহীন জলাভূমিতে কাঁকড়ার চাষে ভাগ্যের চাকা ঘুরছে লাখ লাখ চাষির এবং দেশ পাচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। চিংড়ির ঘেরগুলো কাঁকড়ায় রূপান্তরিত হচ্ছে। চিংড়ির আড়তের চেয়ে বাড়ছে কাঁকড়ার আড়তের সংখ্যা। কাঁকড়া রপ্তানি করে প্রতি বছর গড়ে আয় হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সুন্দরবন এলাকার ৬০ হাজারেরও বেশি পরিবার কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রাকৃতিকভাবেই লোনা পানিতে কাঁকড়া জন্মায়। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এ মত্স্য সম্পদ রপ্তানি বাণিজ্যের সরকারি খাতা কলমে অপ্রচলিত পণ্য বলে পড়ে আছে।
পৃথিবীর ২৪টিরও বেশি দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে। চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, থাইওয়ান, হংকং, সিংগাপুর থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, ফ্রান্স, ভারত, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কাঁকড়ার সুখ্যাতি রয়েছে। দেশের অভিজাত হোটেলগুলোতে খাদ্যের পছন্দের তালিকায় কাঁকড়ার নাম সর্বাগ্রে। গ্রামাঞ্চলের মানুষও এখন চিংড়ি মাছের পরিবর্তে কাঁকড়া খাচ্ছেন।
কাঁকড়া একটি উভয়চর প্রাণী। এটা পানিতে থাকলেও ডাঙাতেও এরা স্বাচ্ছন্দে্য চলাফেরা করতে পারে। সব জলাশয়ে কাঁকড়ার বাস। প্রাণিবিজ্ঞানীরা ১৩৩ প্রজাতির কাঁকড়ার সন্ধান পেয়েছেন। আমাদের দেশে ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া চাষ হয়। এর মধ্যে ১১ প্রজাতির কাঁকড়া সামুদ্রিক। শক্ত খোলে আবৃত জলজ এ প্রাণীর দৈহিক গঠন বিভিন্ন রকমের। সাগরের কাঁকড়া লাল এবং অন্যান্য জলাশয়ের কাঁকড়া কালো রঙের থাকে। কাঁকড়ার ১০ পাযুক্ত ডেকাপোড়া প্রাণী। শরীরের সম্মুখভাগে রয়েছে কাঁটাওয়ালা দুটি দাঁড়াযুক্ত পা, যা ওরা হাত হিসেবে ব্যবহার করে। পা দুটি দিয়ে খাবার তুলে খায় এবং শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন বাঁচায়। কাঁকড়ার চলনভঙ্গি অদ্ভুত। জলে স্হলে সর্বত্র যতক্ষণ খুশি অবলীলায় বিচরণ করতে পারে। এরা চলে সামনে বা পেছনে নয়, পাশের দিকে। স্হলে বিচরণকালে কোনো রকম বিপদের আশঙ্কা দেখলেই চোখের নিমেষে ছুটে অদৃশ্য হয়ে যায়। এদের চোখ দুটি অদ্ভুত। লম্বা বোঁটার মাথায় স্থাপিত দুটি পেরিস্কোপের মতো। চোখ দুটিকে ইচ্ছেমতো প্রসারিত বা বন্ধ রাখতে পারে। শিশুরা কাঁকড়া দেখলে ভয় পায়। কাঁকড়ার বড় শত্রু কারেন্ট জাল। জালে যখন মাছ আটকা পড়ে তখন কাঁকড়া সেই মাছ খেতে গিয়ে নিজেও আটকা পড়ে যায়। কাক, চিল, শেয়াল, বেজি এবং বাঘ কাঁকড়া খেয়ে থাকে। গ্রামের অনেকেই জলাশয়ে, বুঝে না বুঝে সাপের মতো ভয় পেয়ে হাজার হাজার কাঁকড়া মেরে থাকে। এভাবে কাঁকড়ার বংশ হ্রাস পাচ্ছে। সময়ের প্রয়োজনে সেই কাঁকড়া এখন অর্থনৈতিক সম্পদ। স্ত্রী কাঁকড়া তেলাপিয়া মাছের মতো নিজের পেটসংলগ্ন থলেতে ডিম বয়ে নিয়ে বেড়ায়। মায়ের দেহের উষ্ণতায় ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে অধিকাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক কাঁকড়া খেতে পছন্দ করে না। তবে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্িরষ্টান এবং আদিবাসিরা কাঁকড়া খায়। পুরুষ কাঁকড়ার চেয়ে স্ত্রী কাঁকড়া দাম বেশি এবং খেতেও সুস্বাদু। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, কাঁকড়ার মাংসে বেশ পুষ্টিগুণ আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাংসে পুষ্টিমান আছে পানি ৭ গ্রাম, প্রোটিন ১৯ থেকে ২৪ গ্রাম, চর্বি ৬ গ্রাম এবং খনিজ পদার্থ ১-২ গ্রাম।
বাংলাদেশের খুলনা, বাগেরহাট, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, সুন্দরবন, সীতাকুণ্ড, মহেশখালি, বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, চকরিয়া, যশোর, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে কাঁকড়া চাষ হয় বেশি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েক হাজার কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। শুধু পাইকগাছাতেই ৩০০-এর বেশি খামার রয়েছে। কক্সবাজারে কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে আধুনিক পদ্ধতিতে। কাঁকড়া চাষের জন্য জমির আয়তন তেমন কোনো বিষয় নয়। শুধু প্রয়োজন নেট, পাটা, পঁুজি ও খাদ্যের। এক বিঘা জমিতে কাঁকড়া চাষ করতে হলে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। এতে মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করা যায়। বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৩ সালে কাঁকড়া পোনা চাষ বিষয়ে গবেষণা শুরু করে। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ইউএসআইডির অর্থায়নে ও আন্তর্জাতিক মত্স্য গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশর অ্যাকয়া কালচার ফর ইনকাম অ্যান্ড নিউট্রিশন প্রকল্পের যৌথ তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারে একটি হ্যাচারিতে কাঁকড়ার উৎপাদনে নিবিড় গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর মতে, ১৯৭৭ সালে প্রথম বাংলাদেশ থেকে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৯৭৩ টন, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪১৬ টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৮ হাজার ৫২০ টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দ্বিগুণ কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। একমাত্র সাতক্ষীরায় প্রতি বছর ৩ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদিত হয়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পরেই কাঁকড়া উৎপাদনে সাতক্ষীরা জেলার স্থান। দুভাবে কাঁকড়া বিদেশে পাঠানো হয়ে থাকে, সফট সেল ক্র্যাব হিমায়িত করে এবং হার্ড সেল ক্র্যাব হচ্ছে, জীবিতাবস্থায় কাঁকড়া বিদেশে পাঠানোর পদ্ধতি। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়া চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৯৩ সাল থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পুকুরে কাঁকড়ার চাষ শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে প্রথম হংকংয়ে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া রপ্তানি হয়। কাঁকড়া উৎপাদনের ব্যাপারে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে জোরালো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নৌযানের সুবিধা থাকলে সাগর থেকে কাঁকড়া ধরে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এতে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধিশালী হবে।
একসময় দেশ জুড়ে কাঁকড়া আহরণ ও রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় কাঁকড়ার বিদেশের বাজার দখল করে নেয়, মিয়ানমার, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ। সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় চাষ হওয়া নরম খোসার (সফটশেল) কাঁকড়া আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল চাহিদা তৈরি করেছে।
বর্তমানে সফটশেল (নরম খোসার) কাঁকড়া সাতক্ষীরা জেলার মানুষের ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলে কাঁকড়া উৎপাদনের জন্য প্রতি বছর গড়ে উঠছে নতুন নতুন খামার, যা জেলা তথা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সম্পতি সাতক্ষীরা জেলা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সূত্রে এই সব তথ্য পাওয়া গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন মাসে কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-জুন) এ রপ্তানি ছিল ৯ দশমিক ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, এতে বিগত বছরে চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। শুধু চলতি বছরের জুন মাসে রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমান বাণিজ্যিকভাবে চাষ যোগ্য কাঁকড়ার মধ্যে শিলা কাঁকড়া অন্যতম।
শিলা কাঁকড়া খোলস বদলের সময় প্রায় ৩ ঘণ্টা খোলস বিহীন থাকে। তখন কাঁকড়ার ওপর শুধু একটি নরম আবরণ থাকে। ঠিক সেই সময় কাকড়াঁগুলো বিক্রির জন্য উপযুক্ত হয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে সফটশেল (নরম খোসা) কাঁকড়ার উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়, যার কারণে অনেক চাষি চিংড়ি ছেড়ে এখন কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন। লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা এখন চিংড়ি চাষ ছেড়ে কাকড়াঁতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বেশি।
বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ছাড়াও সদর উপজেলা ও কালিগঞ্জ উপজেলাসহ অন্যান্য স্থানেও সফটশেল কাঁকড়া চাষ হচ্ছে।
কাঁকড়া চাষে পুকুরের পানির উপরিস্তর ব্যবহৃত হয়। যাতে অব্যবহৃত থাকে পানির নিচের স্তর। পুকুরের পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কাঁকড়ার পাশাপাশি সাদা মাছ যেমন- রুই, কাতলা ও তেলাপিয়াসহ নানা মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন অনেক চাষি।
সফটশেল কাঁকড়া সাধারণত খাঁচা পদ্ধতিতে চাষ হয়। যাতে পানির ওপরে খাঁচাগুলোতে কাঁকড়া চাষ করলে নিচের স্তরের পানিতে সাদা মাছের চাষ করা যায়।
সফটশেল কাঁকড়া দ্রুত প্রক্রিয়াজাত ও রান্না করা যায় বলে আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা বেশি। বর্তমানে সফটশেল কাঁকড়া চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন এশীয় দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
কাঁকড়া শুধু সাতক্ষীরা জেলার মানুষের আয়েরই উৎস নয়, বরং কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে এই অঞ্চলে মানুষের বেকারত্বও দূর করছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এই কাজ করে স্বাবলম্বি হচ্ছেন।
সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি কাঁকড়ার খামারে গিয়ে দেখা যায়, কাঁকড়ার খামারে কর্মব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন নারী ও পুরুষরা। কেউ ছোট ছোট করে কাটছেন কাঁকড়ার খাবার তেলাপিয়া মাছ এবং কেউ কেউ নিয়ম করে দেখছেন কাঁকড়ার খোলস পাল্টাচ্ছে কি না।
খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সফটশেল কাঁকড়া রপ্তানিতে গত ২ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৬৪৪ দশমিক ৭৬৮ মেট্রিক টন সফটশেল কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছিল, যার বাজার মূল্য ছিল ৮ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরবর্তী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সালে রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১১৬৬ দশমিক ৮৮৮ মেট্রিক টনে। যার বাজার মূল্য ছিল ১৪ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এতে ১ বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে সফটশেল কাঁকড়ার রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮০২ দশমিক ৭১৩ মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্য ছিল ১১ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শ্যামনগরের দুগাবাঁটি এলাকার কাঁকড়া চাষ করেন গৌতম সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই আমাদের অর্থনৈতিক একটা ঝুঁকি সব সময় থাকে। চিংড়ি পোনার লবণাক্ততা সহ্য করার ক্ষমতা কম এবং পোনায় ভাইরাসের আক্রমণে এটি মারা যায়। তাই আমি এবার কাঁকড়া চাষ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, এতে তুলনামূলক লাভ বেশি হয় ও কাঁকড়ার পাশাপাশি পুকুরে সাদা মাছ চাষ করছি, যাতে এটি থেকেও আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হওয়া যায়।
একই এলাকার চাষি সৌরভ সরকার বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলের সবাই সফটশেল কাঁকড়া চাষ করছেন। আমি এই মৌসুমে ৭০০ খাঁচায় তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকা । বাজার ভালো থাকলে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। বর্তমানে ‘এ’ গ্রেডের সফটশেল কাঁকড়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা, ‘বি’ গ্রেডের ৬৫০ টাকা, আর ‘সি’ গ্রেডের ৫০০ টাকা দামে।’
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জি এম সেলিম বলেন, ‘সফটশেল কাঁকড়ার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা আধুনিক ও টেকসই পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করতে পারেন।’

জন্মভূমি ডেস্ক November 26, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে কিছু কথা
Next Article জলবায়ু পরিবর্তনের থাবা, ইটভাটার দাসত্বে শৈশব হারাচ্ছে উপকূলীয় শিশুরা

দিনপঞ্জি

November 2025
S M T W T F S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
« Oct    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাংবাদিকরা লেখে কেন ‌, আর লেখাটা অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হয় কেন?

By জন্মভূমি ডেস্ক 38 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলবায়ু পরিবর্তনের থাবা, ইটভাটার দাসত্বে শৈশব হারাচ্ছে উপকূলীয় শিশুরা

By জন্মভূমি ডেস্ক 2 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলে ‌বেকারত্ব দূর করবে কাঁকড়া চাষ

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাংবাদিকরা লেখে কেন ‌, আর লেখাটা অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হয় কেন?

By জন্মভূমি ডেস্ক 38 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলবায়ু পরিবর্তনের থাবা, ইটভাটার দাসত্বে শৈশব হারাচ্ছে উপকূলীয় শিশুরা

By জন্মভূমি ডেস্ক 2 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে কিছু কথা

By করেস্পন্ডেন্ট 5 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?