শিক্ষার মান বৃদ্ধির বিকল্প নেই
গতকাল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাশের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাশের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সেই হিসাবে এবার পাশের হার ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে। মহামারি শুরুর পর এবারই পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা; কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ৭৫ নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে। এবারও পাশের হারে এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রীরা। উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরেই পাশের হারে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছেন। এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কমেছে। এ বছর বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় পাশের হার ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০২২ সালে পাশের হার ছিল ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সেই হিসাবে আলিম পাশে হার প্রায় এক দশমিক ৮১ শতাংশ কমেছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী পরীক্ষায় সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের আমরা অভিনন্দন জানাই। এ সাফল্য নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে হবে না; আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ বছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের কেউ পাশ করেননি। কেন এমনটি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হন। প্রতিবছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেশে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকটের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ সংকট নিরসনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকে, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে, তা দিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হবে। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেও এগিয়ে থাকতে পারে, সেজন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে এবং বিনিয়োগকৃত অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের জীবনে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ স্তর অতিক্রম করেই তারা উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর জগতে প্রবেশের সুযোগ পান। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে বহু শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তাতে বোঝা যায়, বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় নানা ত্রুটি রয়েছে। এ ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তি নিয়ে শিক্ষার্থীর অভিভাবক, স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের আগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট হলেও শিক্ষার মান বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের আগ্রহ ততটা স্পষ্ট নয়। শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনোযোগী হতে হবে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা যাতে অনলাইনে গুচ্ছপদ্ধতির ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা দরকার। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ সম্পর্কে দেশে বহু মানুষের ভ্রান্তধারণা রয়েছে। সেসব মানুষকে সচেতন করতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। কর্মমুখী শিক্ষার বিস্তারেও সরকারকে নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলায় শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।