
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ফুলতলার সুমি খাতুন
জন্মভূমি রিপোর্ট : বিয়ের আগে মায়ের সাথে টেইলরের কাজ করতেন। বিয়ের পর মুদি দোকান চালাতেন। এখন তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। সেইসাথে একজন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নারী। তিনি হচ্ছেন ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নের দামোদর গ্রামের সুমি খাতুন। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজ প্রচেষ্টায় দামোদর মুক্তময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হয়েছেন। বর্তমানে দারিদ্র্য বিমোচন, বাল্য বিবাহ এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি এলাকার পরিচিত মুখ। তার এই সাফল্যের মূলে রয়েছে পরিশ্রম, প্রজ্ঞা আর অসীম ধৈর্য। সাহসের সাথে তিনি প্রতিটি পদক্ষেপ মোকাবেলা করেছেন। এই প্রতিবেদনে থাকছে সুমি খাতুন কিভাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সাথে সংগ্রাম করে অপরাজিতা নারী হয়েছেন সেই গল্প।
সুমি খাতুনের বাপের বাড়ি যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা গ্রামে। মায়ের কাছে শিখেছিলেন কিভাবে দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করতে হয়। মা টেইলরের কাজ করে সংসার চালাতেন। মাকে তিনি এই কাজে সহয়োগিতা করতেন। এস এস সি পাস করার পর স্থানীয় কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু বিয়ের পর সে পাঠ চুকে যায়। বিয়ে হয় দামোদর গ্রামের মো. আলাউদ্দিন ফারাজীর সাথে। বিয়ের পর বেসরকারি সংস্থা ব্রাকে চাকরির মাধ্যমে জীবন সংগ্রম শুরু হয়। সেই সাথে ঘরে বসে হাতের কাজের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে চেষ্টা করেন। চাকরির সাথে সাথে বাড়িতে একটি মুদি দোকান দেখাশুনা করতেন। সাথে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। অবসর সময় পেলে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিতেন। মেয়েদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কাজে সহযোগিতা করতেন। করোনার পর মানুষের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হতে থাকে। তখন রূপান্তর পরিচালিত অপরাজিতা প্রকল্পের মাধ্যমে তার চিরাচরিত ধারণা বদলে যায়। এই সংস্থার মাঠপর্যায়ে অপরাজিতাঃ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে অপরাজিতা নেটওয়ার্ক গঠন করা হয়। দামোদর ইউনিয়ন অপরাজিতা নেটওয়ার্কের কোষাধ্যক্ষ হন সুমি খাতুন। এই নেটওয়ার্কের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে তিনি বুঝতে পারেন, শুধু কাজ নয়, সম্মান, মর্যাদা ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারীরা বঞ্চিত। এই শূন্যতা থেকে তিনি ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে দামোদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাধারণ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে পরাজিত হলে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেননি। এর পর তার সামনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হওয়ার সুযোগ আসে। তিনি বিশ^াস করেন, নারীরা যে কোন জনকল্যাণমূলক কাজে পারদর্শী, তাই তিনি আত্মবিশ^াসী হয়ে সিদ্ধান্ত নেন ২০২২ সালে দামোদর মুক্তময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির নারী সদস্যা পদে নির্বাচন করবেন। এই পদে তিন জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সামসুর নাহার রুমার সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা যোগ দেন। তার সাথে ছিলেন স্থানীয় নারী উন্নয়ন ফোরামসহ দামোদর ইউনিয়নের অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সদস্যরা। এতে তার সাহস ও মনোবল বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে ২০২২ সালের ২৭ মার্চ নির্বাচনে তিনি তার প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে ২৮ ভোটে হারিয়ে নারী সদস্য নির্বাচিত হন। তার এই বিজয়ে এলাকাবাসী মনে করেন তিনি সত্যিকারের অপরাজিতা। কারণ দীর্ঘ দিনের সামাজিক প্রথা ভেঙ্গে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির নারী সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

